Schizotetranychus hindustanicus
মাকড়
এ ক্ষতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গাছের প্রান্তে কচি পাতায় ছোট ছোট ধূসর বা রূপালী দাগ দেখা যায় যাকে স্টিপলিং বলে। এগুলো সাধারনত মধ্যশিরাতেই বেশি থাকে এবং পরে সম্পূর্ণ পত্রফলকে সম্প্রসারিত হয়। সাধারনত গাছের পাশের পাতা, ফল এবং কচি শাখা বেশি আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ তীব্র হলে, ছোট ছোট দাগ একত্র হয়ে বড় দাগ গঠন করে যে কারণে পাতা বা সবুজ ফল দেখতে অসম রূপালী বা ব্রোঞ্জের আকার ধারন করে। আক্রান্ত কোষকলা ক্রমশ শক্ত থাকে এবং পচন ধরতে থাকে, ফলে অপরিপক্ক পাতা ঝরে পড়ে, ডগা মারা যায়, ফলের মান কমে যায় এবং গাছের তেজ কমে যায়। এটি সাধারণত প্রতিকূল পরিবেশ যেমন- শুষ্ক, অত্যধিক বায়ু প্রবাহযুক্ত আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। অপরদিকে, পরিমিত ও সুষ্ঠু জল সেচ এ বালাইয়ের প্রকোপ ও ক্ষতি হ্রাস করে।
সাইজোটেট্রানিকাস হিন্দুস্টানিকাস মাকড় দমনে অসংখ্য শিকারী পোকা এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে যেসব সাইজোটেট্রানিকাস হিন্দুস্টানিকাস মাকড়ের বিস্তার দমনে প্রায়ই যথেষ্ট যদি আবহাওয়া মাকড়ের প্রতিকূলে থাকে। জাল-বোনা বাসা থাকার কারনে ফাইটোসিড মাকড় (উদাহরণস্বরূপ- ইউসিয়াস স্টিপুলেটাস) ব্যবহার করেও ফলাফল কার্যকরী নয়। স্টেথোরাস গণের অন্তর্ভুক্ত কিছু লেডিবার্ডের প্রজাতি হিন্দু মাকড়কে আগ্রাসীভাবে খেয়ে থাকে। ছত্রাক এবং বিশেষত ভাইরাস লেবু বাগানে সাইজোটেট্রানিকাস হিন্দুস্টানিকাস-এর সংখ্যা দমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে যা অনেকটা তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বিস্তৃত পরিসরের বালাইনাশক এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট বালাইনাশক ব্যবহারের প্রতি কঠোর নির্দেশনা আছে। উদাহরণস্বরূপ- কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত পাইরেথ্রয়েড এ মাকড়ের বিস্তারকে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন ধরণের মাকড়নাশকের ব্যবহার প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিতে বাধা দেয়।
লেবু ফসলের লাল মাকড় প্যানোনিকাস সাইট্রি-র পূর্ণাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ (নিমফ) উভয় পোকার খাবারগ্রহণজনিত কারণে এসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়। বিশেষ ধরনের জালের বাসা হল এদের বৈশিষ্ট্য (১-৩ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট)। স্ত্রী মাকড়গুলো এই জালিকা পাতার নীচে তৈরি করে এবং তাতে দলবদ্ধ বসবাসের জায়গা বানায়। এ চরিত্রই তাদের অন্য মাকড় থেকে আলাদা করে এবং তাদের অনন্য সাধারণ ‘জাল বোনা মাকড়’ নামে ডাকা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মাকড় বাসা থেকে বেরিয়ে আসে এবং অন্যান্য পাতা বা ফলের কোষকলা আক্রমণ করে, অপূর্ণাঙ্গ মাকড় জালের নীচে থাকতে পছন্দ করে। কীটপতঙ্গ এবং পাখি মাকড় বহন করে এবং অন্যান্য গাছে ছড়িয়ে দিতে পারে। সংক্রমিত যন্ত্রপাতি এবং অপরিচ্ছন্ন মাঠ ব্যবস্থাপনা এক জমি থেকে অপর জমিতে বালাইয়ের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। গাছের জন্য পর্যাপ্ত জলসেচ সম্বলিত একটি সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা এ বালাইয়ের প্রকোপ এবং ক্ষতি পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্রাস করে থাকে। বিপরীতক্রমে, কম বা বেশি আর্দ্রতা, অধিক বাতাস, খরা বা দুর্বল মূল ব্যবস্থা এ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।