ধান

ধানের ক্ষারীয় সমস্যা

Alkalinity

অন্যান্য

সংক্ষেপে

  • মাটিতে অত্যধিক ক্ষার থাকলে ধান গাছের পাতার শীর্ষভাগ থেকে লালচে বাদামী বিবর্ণতা শুরু হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • পাতা নেতিয়ে পড়ে কিংবা কুঁকড়ে যায়।
  • ধান গাছের বৃদ্ধি কিংবা কুশি বের হওয়া ব্যাহত হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

ধান

উপসর্গ

ধান উৎপাদনের পুরোটা সময় ধরেই ক্ষারীয় সমস্যাজনিত ক্ষতি হতে পারে। পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়, রং সাদা থেকে লালচে বাদামী বর্ণের হতে পারে, এবং লক্ষণ প্রথমে পাতার অগ্রভাগে প্রকাশ পায়। রোগ তীব্র হলে পাতার বিবর্ণতা ক্রমশঃ সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে; পাতা নেতিয়ে যায় এবং পাতায় একটি ঝলসানো লক্ষণ দেখা যায়। এর ফলে ধান গাছের পাতা কুঁকড়েও যেতে পারে। মাটিতে অত্যধিক ক্ষার থাকলে কুশি গজানো এবং ধান গাছের বৃদ্ধি সীমিত হয়ে যায়। ফুল ধরার সময় যদি এ সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে গাছে ফুল আসতে বিলম্ব হয় এবং মরা শীষ উৎপন্ন হয়। এ রোগের লক্ষণের সাথে নাইট্রোজেনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণের কিছুটা মিল থাকাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

মাটিতে জৈব পদার্থ যেমন ফেলে দেওয়া চুল বা পাখির পালক, জৈব বর্জ্য, বাজে কাগজ, ফেলনা লেবুজাতীয় ফল ইত্যাদি কম্পোস্ট করে প্রয়োগ করুন। এর ফলে মাটিতে অম্লতা যোগ হবে। কিছু অজৈব পদার্থ যেমন পাইরাইট (pyrite), কিংবা সস্তা অ্যালুমিনাম সালফেট (Aluminum sulfate) প্রয়োগ করেও মাটিকে অম্লধর্মী করা যায়। অম্ল ধর্মী পদার্থ যেমন, সালফার বা পিট মস প্রয়োগ করে মাটির অম্লমান বৃদ্ধি করুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

উৎসের ওপর মূলতঃ নির্ভর করে বিভিন্নভাবে মাটির ক্ষারীয় সমস্যার সমাধান করা যাবে। যে জমিতে প্রচুর সোডিয়াম রয়েছে এবং কম চুন রয়েছে সেখানে জিপসাম সার প্রয়োগ করুন। এর ঠিক পরই জমিতে জলসেচ দিয়ে প্লাবিত করতে হবে কারণ এতে শিকড় অঞ্চল থেকে সোডিয়াম সরে যাবে এবং জমি থেকে আবার দ্রুত জল নিষ্কাশন করতে হবে। জিপসাম সারে উপস্থিত দ্রবীভূত ক্যালসিয়ামের কারণে সোডিয়াম আয়ন আর সেখানে থাকতে পারে না, ফলে জল প্রবাহের সাথে মাটির নিচে চলে যায়। ক্ষারীয় সমস্যা দূর করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সাথে জিপসামের পরিবর্তে সালফার, ঘণীভূত সালফিউরিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন। ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2) কিংবা ইউরিয়া ভিত্তিক সার প্রয়োগ করেও এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

এটা কি কারণে হয়েছে

মূলতঃ মাটির অম্লমান বাড়লে যে আয়নসমূহের আধিক্য বাড়ে, তার কারণেই ক্ষারীয় সমস্যা সৃষ্টি হয়। কাদা মাটি, সোডিয়াম সমৃদ্ধ মাটি, কিংবা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মাটি যেখানে মাটির গঠন অনুন্নত এবং মাটিতে জল সহজে প্রবাহিত হতে পারে না, সেসব মাটিতে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর ফলে ধান গাছের মূল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাটি থেকে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। শিকড়তন্ত্র সীমিত হওয়ার ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ক্ষারীয় সমস্যার কারণে মাটিতে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের সহজলভ্যতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং গাছ ফসফরাস ও জিংক এমনকি লৌহের অভাবজনিত রোগ ও বোরনের বিষক্রিয়াজনিত রোগের শিকার হয়। প্লাবিত জমিতে অধিক অম্লত্ব তেমন সমস্যা নয়, কিন্তু বৃষ্টিনির্ভর জমি অথবা সেচ দেওয়া হলেও যে জমিতে জল বেশিক্ষণ থাকে না সেরকম জমিতে এ সমস্যা প্রকট। বিষ্ময়ের কিছু নেই যে, আধাশুষ্ক এলাকাগুলোতেও এ রোগ দেখা যায় এবং এর সাথে লবণাক্ততারও একটি সংযোগ রয়েছে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • জল যাতে বাষ্পীভূত না হতে পারে সেজন্য মালচ্‌ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ জলের বাষ্পীভবনের সময় নিচের লবণ মাটির উপরিভাগে উঠে আসে।
  • ফসল কাটার পর জমি চাষ দিয়ে মাটির ফাটা ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
  • গ্রীষ্মকালে মাটি যাতে বেশি পরিমাণ জল ধরে রাখতে পারে এবং মাটির লবণ যেন উপরের দিকে উঠে আসতে না পারে সেজন্য ধান কাটার পরই জমি চাষ দিতে হবে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন