তুলা

খাটো শিংযুক্ত ঘাসফড়িং ও পঙ্গপাল

Oxya intricata & Locusta migratoria manilensis

বালাই

সংক্ষেপে

  • প্রাপ্তবয়স্ক ঘাস ফড়িং হাতের কড়ে আঙুলের প্রায় সমান হয় এবং এদের দেহের উপরাংশ তিনটি কালো রেখাসহ উজ্জ্বল সবুজাভ হলুদ বর্ণের হয়।
  • দেহ হয় উজ্জ্বল সবুজ রঙের ও ৫মিমি. থেকে ১১ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয়।
  • পাতা, কাণ্ড ও ধানের শীষে খাওয়ার চিহ্ন (কাটা দাগ) দেখা যায়।
  • পূর্ণবয়স্করা ঝাঁক বেঁধে থাকে এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

16 বিবিধ ফসল

তুলা

উপসর্গ

প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই শ্রেণির ঘাসফড়িংই ধান গাছের পাতা ভক্ষণ করে; ফলে পাতার কিনারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি পাতার একটা বড় অংশ কর্তিত দেখায়। এছাড়াও ঘাসফড়িং ধান গাছের কাণ্ড খেয়ে ফেলায় ধানের শীষকে বিপদগ্রস্ত করে তোলে। ধানের দানায় ডিমের উপস্থিতি ও পাতায় হলুদ-বাদামী বর্ণের বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক ঘাসফড়িং এর উপস্থিতি দ্বারাও এর লক্ষণ শনাক্ত করা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো পোকার শত্রু যেমন বোলতা, পরজীবী মাছি, পিঁপড়া, পাখি, ব্যাং, জাল-বোনা মাকড়শা প্রভৃতিকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করতে হবে। এ পোকার বাচ্চা ধ্বংস করার জন্য মেটারিজিয়াম অ্যাক্রিডাম (Metarhizium acridum) নামক ছত্রাক ব্যবহার করা যায়। লবণাক্ত জল এবং ধানের তুষ দিয়ে বাড়িতেই বিষটোপ তৈরি করে ব্যবহার করুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশী হলে ধানগাছের পাতায় কীটনাশক প্রয়োগ করুন। দানাদার কীটনাশক এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফল দিতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্ক পোকাকে আকর্ষণ করার জন্য বিষটোপ প্রয়োগ করতে পারেন। এ পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্লোরোপাইরিফস (chloropyriphos), বুপ্রোফেজিন (buprofezin) বা এটোফেনপ্রক্স (etofenprox) ব্যবহার করুন। ধানের আলগুলোতে ম্যালাথিয়ন ধানের তুষের সাথে মিশিয়ে পাউডার আকারে চারা রোপণের পূর্বে ছিটিয়ে দিতে হবে। FAO সুপারিশকৃত রাসায়নিক যেমন ব্যান্ডিওকার্ব ৮০% ডব্লিউপি @১২৫ গ্রাম/হেক্টর হারে, ক্লোরপাইরিফস ৫০% ইসি @ ৪৮০ মিলি/হেক্টর হারে, ডেল্টামেথ্রিন ২.৮% ইসি @ ৪৫০ মিলি./হেক্টর হারে প্রয়োগ করতে পারেন।

এটা কি কারণে হয়েছে

প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ঘাসফড়িং-এর দ্বারা ধানগাছের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ক্ষতিগুলো পাতা ও ধানের শীষের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। জলজ পরিবেশ এ পোকার জন্য সহায়ক (যেমন ধানের জমি); ঘাসফড়িং লম্বায় ৫ মিলি. থেকে ১১ সেমি. পর্যন্ত হয় এবং হয় তা্রা লম্বা ও পাতলা নতুবা খাটো ও মোটাসোটা হয়। এরা আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মিশে যায় এবং এদের গাত্রবর্ণ সবুজ বা খড় বর্ণের মতো হয়। স্ত্রী ঘাসফড়িং ধানের পাতার উপরে হলুদ রঙের ডিম পাড়ে। পূর্ণাঙ্গ পোকার পাখা গজায়, তারা একত্রে চলাচল করে এবং প্রতিকূল পরিবেশ থেকে স্থান ত্যাগ করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • চারা রোপণের সময় জমির আল পরিষ্কার রাখুন; এতে ঘাসফড়িং-এর ডিম ও বাচ্চা ধ্বংস হবে।
  • নিয়মিত জমি তদারকি করুন এবং ঘাসফড়িং কর্তৃক সৃষ্ট বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দাগ, বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্ক ঘাসফড়িং-এর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন।
  • রাতে পূর্ণবয়স্ক ঘাসফড়িং হাত দিয়ে সংগ্রহ করুন কারণ রাতের বেলায় ঘাসফড়িং-এর গতি ধীর হয়।
  • বীজতলা ঘাসফড়িং মুক্ত রাখতে বীজতলা প্লাবিত করুন।
  • বীজতলায় পোকা ধরার জন্য জাল ব্যবহার করুন।
  • বিকল্প আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সব ধরনের আগাছা ধ্বংস করুন।
  • উপকারী পোকা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য পরিমিতহারে কীটনাশক প্রয়োগ করুন।
  • শীতকালে ধান কাটার পর জমিতে গভীর চাষ দিন; এতে পোকার ডিম মাটির উপরিভাগে চলে আসবে এবং শিকারী পোকা দ্বারা আক্রান্ত হবে।
  • একসঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে চলা ফড়িং-এর দলের চলার পথে ৪৫ সেমি. গভীর ও ৩০ সেমি. প্রশস্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়া যেতে পারে এবং এই সুড়ঙ্গগুলির চারপাশ ধাতব চাদরের বেড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া উচিৎ।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন