Melanitis leda
বালাই
সবুজ শিং বিশিষ্ট কীড়াগুলো পাতার নিচে, মধ্যশিরার সমান্তরালে আশ্রয় নেয় এবং মূলতঃ রাতের বেলায় পাতা খায়। এ পোকা পাতার অক্ষ বরাবর কুঁড়ে কুঁড়ে খায়; ফলে ছোপ ছোপ করে পাতার কলা হারিয়ে যায় এবং শিরাগুলো ঈষৎ শক্ত হয়ে যায়। আক্রমণের এ লক্ষণটি ধানের স্কিপার পোকা এবং সবুজ সেমিলুপার দ্বারা আক্রমণের লক্ষণের সাথে মিলে যায়। তাই আক্রমণের জন্য দায়ী কীড়া চিহ্নিত করা আবশ্যক। এ কীড়াগুলো ধান ছাড়াও অন্যান্য বিকল্প ফসল থেকে খাদ্যগ্রহণ করে জীবন ধারণ করতে পারে এবং সেখানেই তাদের জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে। ফলে ধানের জমিতে তাদের দ্রুত ও সহজ আক্রমণ ত্বরান্বিত হয়।
এ পোকার প্রাকৃতিক শত্রু হল ক্যালসিড ওয়াস্প (ট্রাইকোগ্রামা স্পিসিস) এবং দুই জাতের ট্যাকিনিড মাছি এ পোকার পরজীবায়ন করতে পারে। ভেসপিড বোলতার কিছু প্রজাতি কীড়া শিকার করে খায়। যেহেতু এ পোকার সংখ্যা জমিতে কম থাকে এবং উপকারী পোকার সংখ্যা বেশি থাকে ফলে ধান গাছ নিজেই আক্রমণের ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মেলান্টিস লেডা ইসমিনি-কে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। বৃহৎ পরিসরের কার্যক্রম সমৃদ্ধ কীটনাশক এ পোকা মারতে পারে কিন্তু সেই সাথে উপকারী পোকাও মেরে ফেলে। সুতরাং আক্রমণ তীব্র হলেই কেবলমাত্র কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মেলানিটিস লেডাইসমিনি প্রজাতির সবুজ শিং বিশিষ্ট কীড়াগুলো ধানগাছের পাতায় আক্রমণ করে তবে মাইকেলেসিস জাতের অন্যান্য প্রজাতিও আক্রমণ করতে পারে। সকল ধানী জমিতেই এ পোকার আক্রমণ হতে পারে এবং বৃষ্টি নির্ভর জমিতে সবচেয়ে বেশি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতি সোনালি-বাদামী বর্ণের এবং তাদের পাখা চক্ষুদাগ বিশিষ্ট হয়। এ প্রজাপতিগুলো আলোক ফাঁদ দ্বারা আকৃষ্ট হয় না। স্ত্রী পোকাগুলো ধানের পাতায় সারিবদ্ধ ভাবে একটা একটা করে উজ্জ্বল, মুক্তোর মত ডিম পাড়ে। কীড়াগুলোর হলদে সবুজ দৈহিক বর্ণ এবং পুরো দেহ ছোট ও হলুদ বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকার দরুণ খুব সহজেই ধানগাছের পাতার সাথে মিশে যেতে পারে। এ কীড়াগুলোর মাথায় দুটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাদামী রঙের শিং থাকার কারণে তাদেরকে শিংওয়ালা কীড়া বলা হয়। তারা বিকল্প ফসল থেকেও খাদ্যগ্রহণ করতে পারে ফলে ধানের জমিতে তাদের অবিরত বংশবৃদ্ধি হতে পারে। এ পোকার পিউপা দশা সংঘটিত হয় পাতায়। এ পোকাটি ধানের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকা নয় বরং গৌণ পোকা। এ কারণে এ পোকা কর্তৃক সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য নয়।