ধান

সোনালী আপেল শামুক

Pomacea canaliculata

অন্যান্য

সংক্ষেপে

  • উদ্ভিদের খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাধাপ্রাপ্ত হয়, কারন শামুক জলের উপরিতলের নিচে থাকা উদ্ভিদের কাণ্ডের ক্ষতিসাধন করে।
  • এরা শীষ এবং জলের নিচে থাকা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

ধান

উপসর্গ

কেবলমাত্র জলমগ্ন জমিতে এ ধরণের শামুক দেখা যায়। ক্ষতিসাধনের প্রথম লক্ষণ হলো জলের উপরিতলের নিচে থাকা ধান গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধা দেওয়া যেখানে শামুক ধান গাছের কাণ্ড খণ্ড করে। চারা রোপণের প্রথম ধাপে ফসল খুব বেশি অরক্ষিত অবস্থায় থাকে, তাই শামুক সরাসরি জলমগ্ন চারা গাছের ক্ষতিসাধন করে। ৩০ দিনের পুরনো ধানের চারা অন্যত্র রোপণ করুন। এরপর, ধান গাছের কাণ্ড খুব মোটা হয়ে যায় এবং শামুক শক্ত হয়ে যাওয়া কোষকলা খেতে পারে না। সাধারণত, শামুক প্রথমে শীষ অংশ কেটে ফেলে এবং তারপর পাতা খেয়ে ফেলে এবং জলের নিচে কাণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অন্যান্য উদ্ভিদ যেমন টারো (ক্লোক্যাসিয়া এস্কুলেন্টামি) শামুক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় শামুক বেশি দিন বাঁচে না তবে সাধারণতঃ এদের আয়ুষ্কাল ১১৯ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে ।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জমি প্রস্তুতির সময়, রোপণ বা ফসল প্রতিষ্ঠার সময় গণহারে শামুক এবং ডিম সংগ্রহের প্রচারাভিযান খুব কার্যকর। শামুক চাষও করা যেতে পারে এবং প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক শিকারী পোকা যেমন লাল পিঁপড়া যা শামুকের ডিম খেয়ে থাকে এবং পাখি অথবা হাঁসের বাচ্চা শামুক খেয়ে থাকে সেগুলোর অবাধ বিচরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জমি ব্যবস্থাপনার শেষ দিকে অথবা ধানের চারা যথেষ্ট পরিমাণ বড় হলে গৃহপালিত হাঁস জমিতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে ।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভব হলে, সর্বদা জৈবিক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সমন্বিত পদ্ধতির বিবেচনা করুন । সাধারণ উর্বরতা-প্রাপ্তির হার এবং সময়সীমা অনুসরণ করতে হবে, আপেল শামুকের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য ২সেমি জলে সার প্রয়োগ করতে হবে। সম্পূর্ণ মাঠের পরিবর্তে কম আক্রান্ত দাগযুক্ত স্থানে এবং জল প্রবাহের পথে কীটনাশক প্রয়োগ করুন। চারা অন্যত্র রোপণ করার সময় অথবা সরাসরি চারা রোপণের সময়ে এ ধরণের কীটনাশক দ্রুত প্রয়োগ করুন। সর্বদা কীটনাশকের প্যাকেটের গায়ে লেখা জরুরী বিধিনির্দেশিকা পড়ে নিন এবং নিরাপদ প্রয়োগ নিশ্চিত করুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

সোনালী আপেল শামুকের দুই ধরনের প্রজাতি দ্বারা লক্ষণ প্রকাশ পায়, পমেসিয়া ক্যানালিকুলাটা এবং পমেসিয়া ম্যাকিউলাটা । এরা খুব বেশি আক্রমণাত্মক এবং ধানের ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। জলজ পথেই এরা বেশি ছড়িয়ে পড়ে (চাষাবাদের খাল, প্রাকৃতিক জল ব্যবস্থাপনা) অথবা বন্যার জলের সাথে। জল না থাকলে, এইসব শামুক কাদার ভিতরে গর্ত করে বাস করে থাকে এবং ৬মাস পর্যন্ত শীতনিদ্রায় থাকতে পারে যতক্ষণ না পুনরায় আবার জল আসে। ধান চাষে শামুকের রঙ এবং বর্ণ দেখে স্বজাতি চেনা যায়। সোনালী আপেল শামুকের কাদাযুক্ত বাদামী খোল এবং সোনালী গোলাপী অথবা কমলা-হলুদ মাংস দেখা যায়। এগুলো স্থানীয় শামুকের তুলনায় আকারে বড় এবং হালকা রঙের হয়। এ শামুকের ডিম উজ্জ্বল বর্ণের হয় এবং ডিমগুলো গুচ্ছাকারে কয়েক হাজার পর্যন্ত থাকতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করুন।
  • ধান রোপণের অরক্ষিত পর্যায়ে (৩০ দিনের নিচে) জমি যতটা সম্ভব জলপূর্ণ রাখুন।
  • অন্যভাবে, জমিতে জলের উপরিভাগ ২ সে.মি. এর নিচে রাখুন।
  • নার্সারির বীজতলায় কম ঘণত্বের ২৫-৩০ দিনের পুরানো শক্ত চারাগাছগুলো অন্যত্র রোপণ করুন।
  • সকালের আগেই, যত্নসহকারে শামুক এবং শামুকের ডিমের ভাঙ্গা অংশগুলো তুলে ফেলুন।
  • শামুককে আকর্ষণের জন্য অথবা সহজেই তুলে ফেলার জন্য ধানের চারার আশেপাশে পেঁপে এবং কাসাভা ফলের পাতা রাখুন।
  • ধানের জমিতে যেখানে জল আসা যাওয়া করে সেখানে বাঁধের ব্যবস্থা করুন।
  • শামুকের ডিম পাড়ার জন্য বাঁশের তৈরি চোঙা বানিয়ে রাখুন।
  • প্রাকৃতিক শিকারী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন