আম

আমের হপার

Idioscopus spp.

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতা, ফুল ও ডালপালা বাদামী হয়ে গিয়ে শুকিয়ে যেতে পারে।
  • আমের হপার থেকে শর্করা জাতীয় রস (মধু) ক্ষরিত হয়।
  • আমের পাতাফড়িং হয় সোনালী বা গাঢ় বাদামী বর্ণের, কীলক বা গোঁজের মত আকারের দেহযুক্ত, মাথা হয় চওড়া ও গোলাকৃতি এবং চোখ হয় বর্তুলাকার।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

আম

উপসর্গ

ইডিওস্কোপাস (Idioscopus) প্রজাতির শুককীট ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ ডালপালা, মুকুল, কচি পাতা ও ফল থেকে ফ্লোয়েম রস শোষণ করে। আক্রান্ত উদ্ভিদ কোষ বাদামী হয়ে যায় এবং বিকৃত হয়ে শেষে শুকিয়ে যায়। নবীন ফুলের বিকাশ থমকে যায়, ফলস্বরূপ ফলের গঠনে ও বিকাশে তার প্রভাব পড়ে। আমগাছ থেকে খাদ্য খাওয়ার সময়ে হপার পতঙ্গ শর্করা জাতীয় তরল (মধু) উৎপন্ন করে যা অন্যান্য পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে এবং ভুসো কালির মত ছত্রাকের বৃদ্ধির পক্ষে আদর্শ এক পরিবেশ গড়ে তোলে। পাতায় ছত্রাকের বৃদ্ধি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে, ফলস্বরূপ উদ্ভিদের প্রাণশক্তির উপর প্রভাব ফেলে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। হপার পতঙ্গ আমগাছের পাতা ও ফুলের ডাঁটির উপর ডিম পাড়ে যার ফলে উদ্ভিদের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমের হপার ৫০% পর্যন্ত ফলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক ক্ষতিকারক কীট হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জৈবিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন শিকারী পতঙ্গ মালাডা বোনিনেনসিস (Mallada boninensis) ও ক্রিসোপা ল্যাসিপারডা (Chrysopa lacciperda) এবং ডিমের উপর পরজীবি হিসাবে বাস করা পলিনেমা sp. (Polynema sp.) আমের হপারের বংশবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। বিকল্পভাবে, আক্রান্ত আম গাছে তেলের সঙ্গে বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা (Beauveria bassiana) বা মেটারহিজিয়াম অ্যানিসোপ্লাই (Metarhizium anisopliae) ছত্রাক মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার হারে এই স্প্রে প্রয়োগ করুন। নিম তেল (৩%) সমৃদ্ধ স্প্রে-ও ইডিওস্কোপাস spp. -এর বংশবৃদ্ধিকে ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ইমিডাক্লোপ্রিড(০.৩%) [imidacloprid (0.3%)], এন্ডোসালফান(০.৫%) [endosulfan (0.5%)] ও সাইপারমেথ্রিন(০.৪%) [cypermethrin (0.4%)] দিয়ে স্প্রে করুন কারণ এগুলি দারুনভাবে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডাইমেথোয়েট (dimethoate) সমৃদ্ধ কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে অথবা উদ্ভিদের দেহকাণ্ডে ইঞ্জেকশন করা যেতে পারে। মুকুল আসার আগে আগে ৭ দিন অন্তর দু’বার স্প্রে করুন যাতে পরাগরেণু বহনকারী পতঙ্গের উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

আমের পাতাফড়িং সাধারণতঃ কীলক বা গোঁজের মত আকারের দেহযুক্ত হয়, মাথা হয় চওড়া ও গোলাকৃতি এবং চোখ হয় বর্তুলাকার। পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ হয় সোনালী বা গাঢ় বাদামী বর্ণের এবং দেহ হয় ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার দীর্ঘ। শুককীটের দেহ হয় হলদে-বাদামী বর্ণের এবং চোখ হয় লাল বর্ণের। আমের হপার ফুল বা পত্রশিরা বা পাতার ল্যামিনা অংশে একটি করে ডিম পাড়ে তবে তা প্রজাতির উপর নির্ভর করে। এরা ১০০ থেকে ২০০টি ডিম পাড়তে পারে। ছায়াময় ও উচ্চ আর্দ্রতাযুক্ত পরিবেশ ডিম পাড়ার পক্ষে আদর্শ হয়। পূর্ণাঙ্গ হপার খুব ভালো উড়তে পারে এবং স্বল্প দূরত্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নার্সারীর চারাগাছ পরিবহনের মাধ্যমে এক বাগান থেকে অন্য বাগানে বা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুরাতন, অবহেলিত বা ঘেঁসাঘেঁসি করে লাগানো উদ্ভিদের বাগান এদের বংশবৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • চারাগাছ রোপণের সময়ে দুটি গাছের মধ্যে যথেষ্ঠ পরিমানে জায়গা ছেড়ে রাখুন।
  • ইডিওস্কোপাস (Idioscopus) প্রজাতির শুককীট ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গের সন্ধানে নিয়মিত আমবাগান তদারকি করুন।
  • তেমনভাবে হপার পতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয় না এমন প্রজাতির চারাগাছ নির্বাচন করুন।
  • এক আমবাগান থেকে অন্য আমবাগানে সংক্রামিত আম গাছ পরিবহন করবেন না।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন