আম

আমের সাইলিড

Apsylla cistellata

বালাই

সংক্ষেপে

  • যেখান থেকে মুকুল গঠিত হয় সেখানে শক্ত ধরনের, সবুজ ও মোচাকৃতি ফোঁড়ার মত অংশ দেখা যায়।
  • বাদামী-কালো ডিম পাতার নিচে দেখা যায়।
  • আমের মুকুল শুকিয়ে যায়, ফলে পুষ্পবিন্যাস ও ফলের উৎপাদনের উপরে এর প্রভাব পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

আম

উপসর্গ

স্ত্রী কীট বসন্তকালে পাতার নিচে মধ্যশিরা বা পাতার কিনারা বরাবর ডিম্বাকার বাদামী-কালো বর্ণের ডিম পাড়ে। প্রায় ২০০ দিন পরে ডিম ফুটে শুককীট বের হয় এবং হামাগুড়ি দিয়ে সবথেকে কাছের মুকুলে পৌঁছায় এবং এর থেকে খাদ্য খায়। এই খাদ্য খাওয়ার সময়ে এরা উদ্ভিদের কোষে রাসায়নিক প্রবেশ করিয়ে দেয়, ফলে কুঁড়ি অংশে কঠিন, গাঢ় সবুজ মোচাকৃতি ফোঁড়ার মত অংশ সৃষ্টি হয় যা সঠিক পুষ্পবিন্যাস ও ফলের গঠন তৈরীতে বাধা দেয়। চরম সংক্রমণের সময়ে আক্রান্ত শাখাপ্রশাখা শুকিয়ে যেতে পারে। কতগুলি ডিম পাড়া হয়েছে এবং পুষ্পবিন্যাসের উপর পরবর্তী প্রভাব কি হবে তার উপর ক্ষতির পরিমান নির্ভর করে। অ্যাপসিল্লা সিস্টিল্লাটা (Apsylla cistellata) ভারত ও বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর কীট বলে পরিগণিত হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

শিল্পজাত সিলিকেট সমৃদ্ধ ছাই প্রয়োগ করুন। রোগের উপসর্গ যে জায়গা থেকে শুরু হয়েছে সেখান থেকে সংক্রামিত ডালপালা ও ডগা ১৫-৩০ সে.মি. পর্যন্ত ছেঁটে ফেলে দিয়ে গলের(ফোঁড়ার মতো অংশ) পরিমান অনেকখানি কমিয়ে ফেলুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গাছের বাকলে ডাইমেথোয়েট (dimethoate) পেস্ট (০.০৩%) স্প্রে করে গাছের উপর থেকে নীচে ঘুরে বেড়ানো সাইলিডকে ধ্বংস করুন। গাছের বাকলে ডাইমেথোয়েট ইঞ্জেকশন করলেও তা কার্যকরী হয়। সাইলিড সংক্রমণের প্রথমাবস্থায় ফসফ্যামিডন (phosphamidon), মিথাইল প্যারাথিয়ন (methyl parathion), ফেনিট্রোথিয়ন (fenitrothion) ও মনোক্রোটোফস (monocrotophos) (০.০৪%) সমৃদ্ধ তরল পাতায় স্প্রে করলেও ভালো ফলাফল দেয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

পূর্ণাঙ্গ কীট ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, মাথা ও বুকের দিক হয় বাদামী কালো, পেটের দিক হয় হালকা বাদামী এবং পাখা হয় চিত্র-বিচিত্র ঝিল্লিময়। পাতার মধ্যশিরা বরাবর দুই ধার থেকে বা পাতার পৃষ্ঠদেশে সরলরেখা তৈরী করে এই কীট কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। ডিম ফুটতে প্রায় ২০০ দিন সময় লাগে এবং শুককীট হয় হলুদাভ বর্ণের। জন্মের পরপরই শুককীট হামাগুড়ি দিয়ে কাছাকাছি থাকা নরম মুকুলে পৌঁছায় এবং কোষরস শুষে নেয়। এই খাওয়ার সময়ে যে রাসায়নিক তারা উদ্ভিদ কোষে প্রবেশ করায় তার ফলস্বরূপ সবুজ মোচাকৃতি ফোঁড়া সৃষ্টি হয়। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পরিণতি পাওয়ার আগে এরা এইভাবে দীর্ঘ ছয়মাস সময় অতিবাহিত করে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় কীট ফোঁড়ার মত অংশ থেকে মাটিতে খসে পড়ে এবং এখানেই দেহের চারিদিকের আবরণ কেটে বেরিয়ে আসে। এর পরেই এরা গাছের গা বেয়ে উপরের দিকে উঠে মিলনের মাধ্যমে ডিম পাড়তে প্রস্তুত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রজাতির চারাগাছ নির্বাচন করুন।
  • সাইলিড সংক্রামিত হয়েছে কিনা তা দেখতে নিয়মিতভাবে বাগানে তদারকি করুন।
  • অত্যধিক পরিমানে সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • শুখা মরশুমে খরার প্রকোপ এড়াতে বাগানে নিয়মিত জলসেচ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন