Sulfur Deficiency
অভাব
সালফারের অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত অপুষ্ট পাতা সাধারণত প্রথমে বিবর্ণ সবুজ, পরে হলুদাভ-সবুজ থেকে পুরোপুরি হলুদ রং ধারণ করে। সেই সাথে কাণ্ডের রং রক্তবর্ণের হয়ে যায়। নাইট্রোজেনের অভাব ঘটিত উদ্ভিদেও প্রায় একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়, ফলে সহজেই বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সালফারের বেলায়, লক্ষণগুলো প্রথমে উপরের নতুন পাতাগুলোতে দেখা যায়। কিছু শস্যে যেমন গম এবং আলুর পাতায় ইন্টারভেনিয়াল ক্লোরোসিস লক্ষণ কিংবা পাতায় দাগ দেখা যায়। পাতাগুলো ছোট এবং সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং শীর্ষভাগে পচনের লক্ষণ দেখা যায়। জমির আক্রান্ত অংশ দূর থেকে দেখলে বিবর্ণ সবুজ কিংবা উজ্জ্বল হলুদ মনে হবে। কাণ্ড সরু হয় এবং গাছের লম্বালম্বি উচ্চতা বৃদ্ধি কমে যায়। যদি মরশুমের শুরুতেই অপুষ্টি দেখা দেয়, তাহলে গাছ স্বল্প দৈর্ঘ্যের হবে, ফুল ধরা বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং ফল/শস্যের পরিপক্কতা আসতে দেরি হবে। যদি বীজতলায় চারাগুলো পর্যাপ্ত সালফার না পায়, তাহলে মূল জমিতে রোপণের সময় চারার মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হবে।
মাটিতে জৈব সার, অজৈব সার যেমন সালফার ও বোরন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রাণীর বিষ্ঠাসার এবং পাতা ও গাছের অবশিষ্টাংশ দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করে প্রয়োগ করতে হবে। সালফারের অভাব দূর করতে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।
কম পিএইচ (pH) মাত্রায় গাছ আপনা আপনিই সালফার গ্রহণ করতে পারে। একারণে প্রথমেই মাটির পিএইচ (pH) পরীক্ষা করে দেখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং সালফার, সল্টপিটার ফসফর অথবা সাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে সেই পিএইচ (pH) কমাতে হবে। চারা রোপণের পূর্বে সালফেট সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করলে, মাটিতে সালফারের পরিমাণ বাড়ে এবং ফলশ্রুতিতে গাছের বৃদ্ধিও বেশি হয়। ফলন বৃদ্ধির জন্য এটিই সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। যা'হোক, অবিরতভাবে মাটিতে বেশি জৈব পদার্থের উপস্থিতি ধরে রাখলে গাছের মূলাঞ্চলে সালফারের সহজলভ্যতা বাড়বে এবং মাটির নিচে চলে যাওয়ার পরিমাণ কমবে।
আরো সুপারিশ:
প্রকৃতি কিংবা কৃষিতে সালফারের অভাব খুব একটা চোখে পড়ার মত নয়। সালফার মাটিতে চলনশীল এবং খুব সহজেই মাটিতে জলের প্রবাহে নিচে নেমে যায়। মূলত সালফারের অভাব যে স্বল্প জৈব সার সমৃদ্ধ মাটি, বিভিন্ন আবহাওয়াতে টেকসই মাটি, বেলে মাটি কিংবা অধিক পিএইচ (pH) সম্পন্ন মাটির সাথে যে সম্পর্কযুক্ত এর মাধ্যমে তার প্রমাণ মেলে। মাটির অধিকাংশ সালফারই হয় মাটির জৈব অংশের সাথে থাকে নতুবা মাটির খনিজ পদার্থের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। ব্যাকটেরিয়া মিনারালাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সালফারকে সহজলভ্য করে তোলে। বেশি তাপমাত্রায় এ প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয় কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য অনুজীবের কর্মক্ষমতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সালফার গাছে চলনশীল নয় এবং তৎক্ষণাৎ এটি গাছের পুরাতন পাতা থেকে কচি পাতায় যেতে পারে না। একারণেই অভাবজনিত লক্ষণ প্রথমে নবীন ও কচি পাতায় প্রকাশ পায়।