বাঁধাকপি

গ্রেট সাউদার্ন হোয়াইট

Ascia monuste

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতায় আহারজনিত ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়।
  • পাতার ধার বরাবর অনিয়মিত ছিদ্র লক্ষ্য করা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল
বাঁধাকপি
ফুলকপি

বাঁধাকপি

উপসর্গ

যখন উদ্ভিদের পাতায় আহারজনিত ক্ষতি লক্ষ্য করা যাবে তখন গুরুতর সংক্রমণের চিহ্ন হিসাবে তা ধরতে হবে। গ্রেট সাউদার্ন হোয়াইট প্রজাপতির শুঁয়োপোকা এই ক্ষতিসাধন করে। সাধারণত এরা পাতার ধার বরাবর বাইরের দিক থেকে শুরু করে ভিতরের দিকে গিয়ে খায়। খাওয়ার ধরনের ফলে প্রায়ই পাতার ধার বরাবর অসম ছিদ্র তৈরী করে। মাটির ঠিক উপরে থাকা উদ্ভিদের সমগ্র অংশকে খেয়ে নেওয়ার ক্ষমতা শুঁয়োপোকার আছে। এগুলি কপি জাতীয় সবজিকে (বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি) গোগ্রাসে খায়। পাতার উপরের দিকে গুচ্ছাকারে ডিমের সন্ধান পেতে ও একইসঙ্গে দলবদ্ধভাবে শুঁয়োপোকার খাওয়ার চিহ্ন খুঁজে পেতে নজর রাখতে হবে। এছাড়াও আপনি জমিতে প্রাপ্তবয়স্ক মথকে সনাক্ত করতে পারেন।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ব্যাসিলাস থুরিঞ্জিয়েনসিস স্প্রে ব্যবহারের কথা বিবেচনা করুন, যা একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক যেটি বাঁধাকপির পোকার লার্ভাকে মেরে ফেলতে পারে তবে এটি মানবদেহের পক্ষে ও উপকারী পতঙ্গের পক্ষে নিরাপদ। নিম গাছ থেকে আহরিত নিম তেলের স্প্রে ব্যবহার করুন, কেননা এটি প্রাকৃতিক বিতারক ও কীটনাশক।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

যদি উপলব্ধ থাকে তাহলে সর্বদা সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে জৈবিক/ পরিবেশ অনুকূল দমন ব্যবস্থার সাহায্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বিবেচনা করুন। বইয়ের কথা অনুযায়ী নিম্নলিখিত কীটনাশকগুলি খুবই ভালোভাবে অ্যাসসিয়া মোনাস্টিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু এদের সবগুলি প্রাকৃতিক শত্রুদের পক্ষে নিরাপদ নয়: ক্লোরানট্র্যানিলিপোল, সায়ান্ট্র্যানিলিপোল, ইন্ডোক্স্যাকার্ব, স্পিনোস্যাড, ক্লোরফেনাপাইর। অতিরিক্ত হিসাবে বলা যায়, কীটনাশকের ব্যবহার করলে এই কীট এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, যার ফলে কীট তখন কীটনাশকের দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

এই ক্ষতি অ্যাসসিয়া মোনাস্টি নামক শুঁয়োপোকার দ্বারা হয়। এটি খুবই ক্ষতিসাধনকারী পোকা যেটি কপি জাতীয় ফসলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করে। স্ত্রী মথ উদ্ভিদের পাতার উপরের পৃষ্ঠে গুচ্ছাকারে হলুদ, মাকু-আকৃতির ডিম পাড়ে। নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও বর্ষার মরশুমে এই ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। শুঁয়োপোকার দেহ ধূসর রঙের ডোরাকাটা দাগসহ হলুদাভ হয়।এই ডোরাকাটা দাগ এদের দেহ বরাবর থাকে এবং এছাড়া ছোট্ট কালো দাগও থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতির দেহ সাদা (পুরুষ) ও কালচে সাদা থেকে ধূসর (স্ত্রী) রঙের হতে দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক মথ প্রায় ১৯ দিন বাঁচে। এরা খাদ্যের সন্ধানে, সঙ্গম করতে, ও নিম্ফ পর্যায় থেকে বেড়ে উঠতে ভালো পরিবেশ খুঁজে পেতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে। গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে এই কীড়ার পক্ষে আর্দ্র ও ১৬ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ তাপমাত্রাযুক্ত আবহাওয়া উপযুক্ত। তবে ঠাণ্ডা ও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এমন আবহাওয়ায় এদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • যদি উপলব্ধ হয় তাহলে নির্দিষ্ট জাতের প্রতিরোধী গাছ রোপন করুন।
  • বেগুনী বা লাল রঙের বাঁধাকপির জাত রোপন করুন, কেননা সেগুলি বাঁধাকপির পোকা ও মথের কাছে কম আকর্ষণীয়।
  • আক্রান্ত হওয়ার চিহ্ন যেমন আহারজনিত ক্ষতি ও গুচ্ছাকারে ডিম, প্রত্যক্ষ করতে নিয়মিত উদ্ভিদকে তদারকি করুন।
  • দেখতে পেলেই হাত দিয়ে ডিম অপসারিত করুন।
  • মথের প্রাকৃতিক শত্রু, যেমন শিকারী পোকা ও পাখির বাসস্থান রক্ষা করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন।
  • গাছের সারিকে ঢাকা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী আবরণ ব্যবহার করুন, যাতে এই সমস্ত পোকা আপনার গাছের কাছে পৌঁছাতে না পারে।
  • বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ যেমন সুগন্ধী পত্রযুক্ত গুল্ম, ভুঁই-তুলসী, রোজমেরী, সেইসঙ্গে গাঁদা ও হেলেঞ্চা শাক সহযোগী উদ্ভিদ হিসাবে চাষ করুন।
  • পুরুষ মথ ধরতে মথ ধরার ফাঁদ ঝোলান এবং প্রজনন ব্যাহত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন