আম

আমের মিজ পোকা

Procontarinia

বালাই

সংক্ষেপে

  • ছোট আঁচিলের মতো দাগ পাতা, মুকুল, ডগা ও কচি ফলের উপরে অবস্থান করে।
  • পাতা ও ফল বহনকারী কাণ্ডে বাইরে বহিঃগমন ছিদ্রপথ দেখা যায়।
  • পাতা বিকৃত হয়ে যায় এবং অকালেই ঝরে পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

আম

উপসর্গ

প্রধানতঃ পাতা এবং কখনো কখনো মুকুল, পুষ্পমঞ্জরী ও আমের কচি ফল এ পোকার আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে অনেক ছোট ছোট স্ফীত কালো ফোঁড়ায় ছেয়ে যায়। প্রতিটি ফোঁড়া আকারে ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার হয় এবং এ ফোঁড়ার মধ্যে হলুদ বর্ণের লার্ভা বা কীড়া অবস্থান করে উদ্ভিদের কোষ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। প্রথমাবস্থায়, কীট যে ডিম পাড়ে তা ছোট লাল দাগের মতো দেখতে লাগে। গাছের পাতা যখন ব্যাপকভাবে সংক্রামিত হয়ে পড়ে তখন তা বিকৃত হয়ে যায়, সালোকসংশ্লেষের হার কমে যায় এবং গাছ থেকে অকালেই ঝরে পড়ে যায়। রোগাক্রান্ত ফুলের কুঁড়ি আর ফোটে না। পাতার নিচে যে ক্ষুদ্র প্রস্থানপথের উপস্থিতি দেখা যায় তা লার্ভার বা কীড়ার উপস্থিতির চিহ্ণ বহন করে। এ সমস্ত প্রস্থানপথের ছিদ্র দ্বিতীয় পর্যায়ের ছত্রাকঘটিত সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট হয়। কচি ফল কাণ্ডের যে অংশ থেকে ঝুলে থাকে তার গোড়ায় লার্ভার বা কীড়ার প্রস্থানপথের ছিদ্র দেখা যায়। মারাত্মকভাবে সংক্রামিত আম গাছের কচি ডগায় কোন পুষ্পবিন্যাসের উপস্থিতি দেখা যায় না। এর ফলে ফলের উৎপাদন দারুনভাবে কমে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

শারদীয় ওয়েবওয়ার্ম , প্রকন্তারিনিয়া স্পেসিসের কীড়াপোকার উপর পরজীবায়ণ করতে পারে , তাই এদের ব্যবহার করা যেতে পারে। এ কীটকে দমন করতে অন্যান্য পরজীবী প্লাটিগাস্টের স্পেসিস, আয়প্রস্টসেটাস স্পেসিস এবং সিস্টসিস ডাসিনুরি ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম বীজের নির্যাস পত্রপল্লবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ০.০৫% ফেনিট্রোথিয়ন (fenetrothion), ০.০৪৫% ডাইমেথোয়েট (dimethoate) বা ০.০৪% ডায়াজিনন (diazinon) কুঁড়ির প্রস্ফুটিত হওয়ার সময়ে স্প্রে করলে তা কীটকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। জলের সঙ্গে বাইফেনথ্রিন [bifenthrin] (৭০ মিলিলিটার/১০০ লিটার) মিশিয়ে পাতায় প্রয়োগ করলেও তা সমান কার্যকরী হয়। গাছে মুকুল আসার সময় থেকে ফল মটর দানার আকারে আসা পর্যন্ত ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর বারে বারে স্প্রে করুন। বিকল্প হিসাবে, ডাইমেথোয়েট (dimethoate), ফসফ্যামিডন (phosphamidon) বা মনোক্রোটোফস (monocrotophos) সমৃদ্ধ স্প্রে পি. পাস্তুলাটা (P. pustulata)-র বংশবৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।

এটা কি কারণে হয়েছে

প্রকন্তারিনিয়া স্পেসিস এর দ্বারা এ উপসর্গ হয়ে থাকে। আমগাছের গল সৃষ্টিকারী কীট আকারে ১ থেকে ২ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। যৌনমিলন ও ডিম পাড়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ কীটের মৃত্যু হয়। গাছের সমস্ত অংশ জুড়েই পোকার ডিম পাড়ার কাজ চলে কিন্তু প্রধানতঃ ডিম গাছের পাতাতেই দেখা যায়। ডিম ফুটে যে লার্ভা বা কীড়া বেরিয়ে আসে তা উদ্ভিদের কোষের গায়ে ছিদ্র তৈরী করে এবং উদ্ভিদের কোন অংশকে তা প্রভাবিত করেছে তার উপর ক্ষতির পরিমান নির্ভর করে। উদাহরণ হিসাবে, ফুলের অংশ শুকিয়ে যেতে পারে এবং এ অংশ থেকে অত্যধিক খাদ্য সংগ্রহের ফলে তা মাটিতে ঝরে পড়তে পারে। পরিণত লার্ভা বা কীড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে বা মাটির উপরের স্তরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে এবং এখানেই এরা পিউপা দশায় প্রবেশ করে। সাধারণতঃ বিকালের দিকে পূর্ণাঙ্গ কীটের উৎপত্তি হয় এবং ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৬০ থেকে ৮২% আপেক্ষিক আর্দ্রতা এদের পক্ষে অনুকূল হয়। উত্তর গোলার্ধে জানুয়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে কীটের ৩ থেকে ৪ টে প্রজন্মের দেখা পাওয়া যেতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম এমন জাতের চারাগাছ রোপণ করুন।
  • রোগের লক্ষণ জানার জন্য নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করুন।
  • পোকার সংখ্যা বেশী না থাকলে হাতেনাতে দমন করুন।
  • মাঠে যাতে ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং ভাঙা শাখা প্রশাখা না থাকে তা নিশ্চিত করুন।
  • মাঠ থেকে নিয়মিত আগাছা সরিয়ে নিন।
  • আক্রান্ত গাছ মরশুম এলে ছাঁটাই করুন।
  • আম বাগানের ভিতর সাথী ফসল চাষ করুন যাতে পোকার সংখ্যা কমে।
  • মাছি ধরার জন্য হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করুন।
  • মাটি যদি প্লাস্টিকের তৈরী আবরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় তাহলে কীড়া আর মাটিতে সরাসরি পড়তে পারে না বা পিউপা আর বাসস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
  • সংক্রামিত হয়নি এমন ফল পরিবহন ও বিক্রয়ের জন্য বাজারজাত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন