শিম

সিমের মাছি পোকা

Ophiomyia phaseoli

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতায় দাগ পড়ে, পাতার বোঁটায় রূপালী ধরনের ডোরাকাটা দাগ দেখা যায় ও বোঁটা লম্বা হয়, এবং পরবর্তীতে গাঢ় রঙের হয়।
  • পাতা শুকিয়ে ঝরে যায়।
  • ছোট কালো রঙের মাছি দেখতে পাওয়া যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

3 বিবিধ ফসল

শিম

উপসর্গ

কচি পাতায় অসংখ্য ছিদ্র এবং উপরের দিকে হালকা হলুদাভ দাগ লক্ষ্য করা যায়, বিশেষ করে পাতার মাথার দিকে। কীড়া পোকা পাতার বোঁটায় ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে পড়ে, যা পরবর্তীতে ডোরা কাটা রূপালী আকৃতি ধারন করে। পাতার উপরিপৃষ্ঠে সুড়ঙ্গপথ দেখা যায় যেটি পরবর্তীতে গাঢ় বাদামী রঙ ধারন করে এবং পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে নেতিয়ে পড়েছে। পাতা শুকিয়ে যেতে পারে এবং ঝরে পড়তে পারে। আক্রান্ত বয়স্ক গাছে বোঁটা ফুলে ওঠে, এবং এ সময়ে গাছ নেতিয়ে যেতে পারে। ফসলের কাণ্ড খেয়ে ফেলার কারনে সৃষ্ট সুড়ঙ্গপথ পরিষ্কার লক্ষ্য করা যায়। কীড়াপোকা কাণ্ড এবং শিকড়ের মধ্যস্থলে আক্রমণ করলে অভ্যন্তরীন কোষকলা নষ্ট হয়ে যায়, পাতা হলুদ হওয়া শুরু করে, গাছের বৃদ্ধি খর্বাকার হয়ে যায়, এমন কি গাছের মৃত্যুও ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাছ অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার পরে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মারা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

সিমের মাছি পোকার বহু প্রাকৃতিক শত্রু পোকা আছে। এশিয়া এবং আফ্রিকাতে ওপিয়াস প্রজাতির ব্রাকোনিড বোলতার পরজীবি লার্ভা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়। ওপিয়াস ফ্যাসিওলাই এবং ওপিয়াস ইমপোরটেটাস হাওয়াই-এর পূর্ব অঞ্চল থেকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সিমের মাছি পোকার ব্যাপক প্রকোপ হলে কীটনাশক ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা হয়। যা'হোক, যেসব কীড়া পোকা গাছের ভিতরে ঢুকে যায় সেগুলো সুরক্ষিত থাকে। ইমিডাক্লোপ্রিড সংগঠিত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করে সাথে সাথে বীজ বপন করলে অথবা অঙ্কুরোদ্গমের পর পর স্প্রে করা হলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তিন থেকে চার দিন বয়সের চারা শোধন করা হলে এবং আক্রমণ ব্যাপক হলে সাত দিন পর পর এবং সম্ভব হলে ১৪ দিন পর পর এ উপাদান ব্যবহার করার সুপারিশ রয়েছে। অন্যান্য মূল উপাদানগুলো হলো ডাইমেথোয়েট, যা উদ্ভিদ দেহে প্রবাহমান। সকল প্রকার রাসায়নিক উপাদান মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে বিবেচ্য এবং অতি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

ওফিওমিয়া ফ্যাসেওলি-র কীড়া ও বয়স্ক মাছি পোকা দ্বারা এ উপসর্গ দেখা যায়, যা পৃথিবীতে একটি মারাত্মক কীটের মধ্যে অন্যতম। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের এশিয়া, আফ্রিকা, হাওয়াই এবং ওশানিয়া এলাকায় ব্যাপক বিস্তৃত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩০% থেকে ৫০% ফলন নষ্ট করতে পারে। এ রোগের তীব্রতা মৌসুমের উপর নির্ভরশীল, আর্দ্র মৌসুমের চেয়ে শুষ্ক মৌসুমে রোগের প্রকোপ বেশি হয় , (যথাক্রমে ৮০% বনাম ১৩%)। চারা গাছে বয়স্ক এবং কীড়া পোকা উভয়ই আক্রমণ করে, পূর্ণবয়স্ক পোকা কচি পাতা ছিদ্র করে সাদা ডিম্বাকৃতির ডিম পাতার বোঁটার নিকট পাড়ে। বাড়ন্ত কীড়া পোকা কাণ্ডের নিচের দিকে সুড়ঙ্গ করে প্রধান শিকড়ের ভেতর ঢুকে যায় এবং পুনরায় কাণ্ডের গোড়ায় এসে তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুত্তুলিতে রুপান্তরিত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • যদি সম্ভব হয়, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • চারা রোপনের আগে পাহারাদার গাছ ও আগাছা উপড়ে ফেলুন বিশেষ করে সিম জাতীয় গাছ।
  • আগে যদি সিম ফসল চাষ করা হয়ে থাকে, তবে সেখানে সিম বপন করবেন না।
  • পারতপক্ষে ২টি গাছের মাঝখানে পর্যাপ্ত ফাঁকা রাখুন।
  • প্রাথমিক বৃদ্ধির পর্যায়ে ( অঙ্কুরোদ্গমের ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে) গাছের গোড়া কোন আবরণ দিয়ে ঢেকে দিন, যেমন কলা পাতা, ধানের খড় বা ঘাস দিয়ে ঢেকে দিন।
  • অঙ্কুরোদগম হওয়ার ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ পরে ক্ষয়ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রাখুন এবং রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • ফসল উত্তোলনের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন নয়তো মাটি চাপা দিয়ে দিন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন