Eutetranychus orientalis
মাকড়
এ ক্ষতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কচি পাতায় উপর ছোট ছোট খাওয়ার দাগ দেখা যায়, এগুলো সাধারণত মধ্যশিরাই বেশি দেখা যায় এবং পরে সম্পূর্ণ পত্রফলকে পার্শ্ব শিরা বরাবর সম্প্রসারিত হয়। মধশিরা বরাবর হালকা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায় ফলে পাতা মরা ভাব ধরে। কখনো কখনো পাতার উপর হালকা ময়লা পড়ে এবং জালিকার মত দেখা যেতে পারে। কচি পাতায় আক্রমণ হলে পাতা উপরের দিকে বেঁকে যায়। মাকড়ের আক্রমণ তীব্র হলে, সম্পূর্ণ পাতার উপর এদের ডিম পাড়তে দেখা যায়। আক্রান্ত কোষকলা ক্রমশঃ শক্ত হতে থাকে এবং পচন ধরে, ফলে অপরিপক্ক পাতা ঝরে পড়ে, ডগা মারা যায় এবং অকালে ফল ঝরে যায়। পরবর্তী বছরে গাছে তেমন ফুল আসে না। গাছ অতিরিক্ত পানির অভাবে পড়লে আক্রমন কম থাকলেও পাতা হলুদ হয়ে অকালে ঝরে পড়ে।
ইউটেট্রানিকাস অরিএন্টালিস মাকড় দমনে অসংখ্য শিকারী পোকা এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে যেসব এ মাকড়ের বিস্তার দমনে প্রায়ই যথেষ্ট। বিভিন্ন প্রকার ফাইটোসেলিডি এবং স্টিগ্মাইডি প্রজাতির মাকড়কে বিভিন্ন দেশে ওরিয়েন্টাল স্পাইডের মাকড় দমনের জন্য সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন, তাইফ্লড্রমাস ফাইএলেতাস, নিওসেইলাস ক্যালিফরনিয়াকাস, ফাইটসেইলাস পারসিমিলিস। শিকারি বিটল পোকা যেমন, স্টেথরাস স্পেসিস এবং অরিয়াস থ্রাইপবরাস এমন কি লেস উইং বাগ লারভা এ মাকড়কে খেয়ে ফেলে। সালফার পাউডার দিয়ে অথবা স্প্রে করে এ মাকড় অতি সহজেই দমন করা যায়।
সম্ভমবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ২০% পাতায় বা ফলের উপর আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছে কীটনাশক দিন। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বালাইনাশক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট বালাইনাশক ব্যবহারের প্রতি কঠোর নির্দেশনা আছে। মাকড়ের প্রতি প্রতিবন্ধকতা কমাতে কিছু সুনির্দিষ্ট মাকড়নাশক রয়েছে। যেমন, ফ্লুবেন্ডিয়ামাইন, অমেথোয়েট এবং ডাইকোফল বেশ ভাল কাজ করে।
ওরিয়েন্টাল স্পাইডার মাকড়ের পূর্ণাঙ্গ এবং অপূর্ণাঙ্গ (নিমফ) উভয় পোকার খাবারগ্রহণজনিত কারণে এসব উপসর্গ প্রকাশিত হয়। এদের দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতির এবং দেহ চ্যাপ্টা, হাল্কা বাদামী থেকে লাল বাদামী ও ঘন সবুজ রঙের হতে পারে। এদের গায়ে ঘন ফোঁটা চিহ্ন এবং হালকা রঙের পা থাকে যা শরীরের সমান হয়। এরা সাধারণত লেবু গাছেই আক্রমণ করে, এর বাইরে অ্যামন্ড, কলা কাসাভা এবং তুলাতে এদের আক্রমণ করতে দেখা যায়। এদের সাধারণত পাতার উপর থাকতে দেখা যায় এবং এরা বাতাসের মাধ্যমে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। ভৌগলিক সীমারেখা ভেদে বছরে সাধারনত ৮-২৭ টি প্রজন্মে এদের বংশ বৃদ্ধি হয়, প্রতি প্রজন্মে স্ত্রী মাকড়ের জীবদ্দশায় ( ২-৩ সপ্তাহে) ৩০-৪০টি ডিম পাড়ে। স্বল্প আর্দ্রতা বা অতি আর্দ্রতা, তীব্র বাতাস, খরা এবং গাছের শিকড় দুর্বল থাকলে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। ওরিয়েন্টাল স্পাইডার মাকড় ২১-২৭ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রা ও ৫৯-৭০ % আর্দ্রতায় ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে।