লেবু জাতীয় ফসল

লেবুর লাল আঁশ পোকা

Aonidiella aurantii

বালাই

সংক্ষেপে

  • ছোট লাল আঁশ পোকা গাছের পাতা, কাণ্ড, শাখা এবং ফলে আক্রমণ করে।
  • পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং অকালে ঝরে পড়ে।
  • বিকৃত ফলের বাজার দর কমে যায়।
  • আক্রমণ ব্যাপক হলে শুধু চলমান মরশুম নয় বরং পরবর্তী সময়েও ফলন হ্রাস পায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

লেবু জাতীয় ফসল

উপসর্গ

অসংখ্য ছোট ছোট, গাঢ়-বাদামী লাল রঙের আঁশ পোকা পাতা (প্রায়শই প্রধান শিরা বরাবর), কচি শাখা, শাখা এবং ফলে দেখা যায়। এদের দেহের কেন্দ্র কিছুটা উঁচু, মোচাকৃতি দাগ (আগ্নেয়গিরির মত আকৃতির) দেখা যায়। এরা যেখানে বসে খায় তার কাছাকাছি একটি হলুদ দাগ দেখা যায়। ভারী আক্রমণে পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং অকালে ঝরে পড়ে। আক্রান্ত কচি শাখা মরে যায় এবং ব্যাপক আক্রমণের ফলে কখনো কখনো বড় কাণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অনেকগুলো আঁশ পোকা ফলে আক্রমণ করলে ফল শক্ত হয়ে যায় এবং বিকৃত হয়, অবশেষে শুকিয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। কম বয়সী গাছের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং কয়েকটি শাখা মরে গেলে গাছও মরে যেতে পারে। লাল আঁশ পোকা মধু জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত করে যা ফল ও পাতায় স্যুটি মোল্ড সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এনিডিয়েলা এয়োরান্তির প্রাকৃতিক শিকারীদের মধ্যে রয়েছে পরজীবী বোলতা এফাইটিস মিলিনাস এবং কম্পেরিয়েলা বাইফাসসিয়েটা এবং শিকারী মাকড় হেমিসারকোপ্টেস। লাল আঁশ পোকার জৈবিক দমন ব্যবস্থার অন্যতম হলো পিঁপড়া দমন, কারণ এরা প্রাকৃতিক শিকারী পোকা থেকে আঁশ পোকাকে রক্ষা করে। গাছের পাতা ও ফলে জৈবিকভাবে প্রস্তুতকৃত পেট্রোলিয়াম তেল ব্যবহার করে আঁশ পোকা দমন করা যায়। ফল সংগ্রহের পর উচ্চ চাপে জল প্রবাহিত করে গাছ ধুয়ে দিন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মধ্য গ্রীষ্মে স্বল্প পরিসরের তেল ছিটিয়ে দিলে প্রাকৃতিক শিকারীরা কম বাধাগ্রস্ত হয়। যদি কোন গাছের ২৫ শতাংশ ফল আক্রান্ত হয় তাহলে উপযুক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটিয়ে পোকা দমন করুন। ক্লোরোপাইরিফস,কারবারিল,মেলাথিয়ন বা ডাইমেথোয়েটের সংঘটিত উপাদানের বালাইনাশক বাগানের অধিক আক্রান্ত এলাকায় ছিটিয়ে দিন। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বালাইনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন যাতে উপকারী পোকারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

এনিডিয়েলা এয়োরান্তি লাল আঁশ পোকার খাদ্য গ্রহণের ফলে গাছের ক্ষতি হয়। এটি বিশ্বব্যাপী লেবুর একটি পরিচিত পোকা যা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। ফসল সংগ্রহের পর এ পোকা গাছের বাকল ও পাতায় আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তী মরশুমে আক্রমণ করে। এদের চলমান পর্যায়ে স্ত্রী পোকা খাদ্য গ্রহণের সময় আলোর দিকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়। এরা ডিম পাড়ে না তবে খুব সক্রিয় পোকার কীড়ার জন্ম দেয়। গাছের উপরের পাতা বা ফলের ভিতরে অবস্থান নিতে পারলে আর নড়াচড়া করে না। অল্প সময় পর এরা তুলোর ন্যায় উপাদান দিয়ে আবৃত হয়ে যায়, যার ফলে এদেরকে চ্যাপ্টা বৃত্তাকার দেখায় এবং সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য লালচে বাদামী রঙ ধারন করে। তাপমাত্রা ও গাছের অবস্থার উপর এদের জীবনচক্র নির্ভর করে। গ্রীষ্মে যখন গাছ জলের তীব্র সংকট অনুভব করে তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে স্ত্রী পোকা আকৃষ্ট করুন এবং আক্রমণের তীব্রতা যাচাই করুন।
  • পোকার আক্রমণ সনাক্ত করতে নিয়মিত জমি তদারকি করুন এবং পোকার সংখ্যা কম হলে এদের মেরে ফেলুন।
  • ব্যাপকভাবে আক্রান্ত শাখা বা কচি ডাল কেটে ফেলুন।
  • গাছে বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ছাঁটাই করুন যাতে পোকা আক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ না পায়।
  • পিঁপড়া যা আঁশ পোকাকে খাবার যোগান দেয় তা ধরতে বা বাধাগ্রস্ত করতে ফাঁদ বা বাধা সৃষ্টি করুন।
  • উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বালাইনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন যাতে উপকারী পোকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
  • রাস্তা ও গাছে জল দিয়ে ধুয়ে দিন যাতে গাছের পাতা ও ফলে ময়লা জমতে না পারে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন