Earias insulana
বালাই
পোকার কীড়া প্রধানত তুলার গুটি খায়, কিন্তু এছাড়াও এরা স্কোয়ার, মুকুল এবং ফুল খায়। গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় আক্রমণ হলে এ পোকা গাছের শীর্ষ মুকুলের কুঁড়ি ছিদ্র করে এবং নিচের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে ফুল আসার আগেই শীর্ষ মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। প্রধান কাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সমগ্র উদ্ভিদের পতন হতে পারে। মৌসমের শেষ দিকে আক্রমণে হলে কীড়া মুকুল এবং বোলের গোড়া ছিদ্র করে এবং ভিতরে প্রবেশ করে খায়। প্রবেশ পথ প্রায়ই পোকার বিষ্ঠা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের কুঁড়ি কখনো কখনো অকালে ছড়িয়ে পড়ে এবং তথাকথিত ফ্লার্ড স্কোয়ার-এর ন্যায় দেখা যায়। কোষ কলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। গাছ যত কম বয়সে এ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হবে তত বেশি ক্ষতির শিকার হবে।
এ পোকার ব্যবস্থাপনায় পোকা এবং ডিমের সংখ্যা গণনা করা খুবই দরকার। জৈবিক দমন ব্যবস্থা হিসেবে ব্রাকোনিড সিলায়নিড এবং ট্রাইকোগ্রামাটিডি পরিবারের কিছু প্যারাসাইটয়েড পোকা ব্যবহৃত হয়। কলিওপটেরা, হাইমেনোপ্টেরা, হেমিপটেরা এবং নিউরোপটেরা বর্গের কিছু শিকারী পোকাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ প্রজাতির পোকাদের অবস্থান নিশ্চিত করুন ( প্রয়োজনে বাইরে থেকে নিয়ে এসে জমিতে ছেড়ে দিন) এবং বিস্তীর্ণ পরিসরের বালাইনাশক পরিহার করুন। পোকার ব্যাপক আক্রমণ দমনে জৈব বালাইনাশক হিসেবে ব্যাসিলাস থুরেঞ্জিয়েন্সিস সংঘটিত উপাদানের জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। নিমের নির্যাস (এন.এস.কে.ই.) ৫% বা নিম তেল (১৫00 পিপিএম)@ ৫ মিলি. লি./লিটার ছিটিয়ে দিতে পারবেন।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ফুল আসার সময় প্রতি ১০০টি গাছে ১০ টি ডিম বা কাণ্ডে ৫ টি ক্ষুদ্র পোকা উপস্থিত থাকলে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। যেহেতু কীড়া ক্রমান্বয়ে বালাইনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় ডিম এবং পোকা খুঁজে বের করা খুবই কঠিন, তাই পোকা ডিম অবস্থায় থাকাকালে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ক্লোরিন্টনিলিপ্রোল, ইমামেক্টিন বেঞ্জোয়েট, ফ্লুবেন্ডিয়াম, মেথোমিল বা এসফেনভারেট-এর উপাদান সংঘটিত বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। কম মূল্যের ফসলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি সাধারণ পোকা, এরিয়াস ইনসুলানা নামক তুলার লোমশযুক্ত গুটি পোকা এ রোগের ক্ষতি সাধন করে। অন্যান্য বিকল্প আবাসী গাছের মধ্যে রয়েছে হিবিসকাস এবং ঢেঁড়স। মথগুলি রূপালী সবুজ থেকে হলুদ রঙের হয়, প্রায় ২ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয় এবং ফুলের উপর অথবা আলোর উৎসের কাছাকাছি দেখতে পাওয়া যায়। পাখায় তিনটি গাঢ় দাগ দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সাধারণত সবুজ এবং অন্যান্য সময় হলুদ বা বাদামী রঙের পোকা দেখা যায়। ডিমগুলি নীল রঙের হয়, একসঙ্গে তরুণ অঙ্কুর, পাতা এবং স্কোয়ারের মধ্যে ডিম পাড়ে । তরুণ কীড়া হলুদ এবং কমলা ধূসর সঙ্গে হালকা বাদামী রঙের হয়। এদের দেহ ক্ষুদ্র কাঁটা দিয়ে আবৃত থাকে যা হাতল লেন্স দিয়ে সহজে দেখা যায় এবং এ কারণে সহজেই একে অন্যান্য কীড়া থেকে ভালোভাবে পৃথক করা যায়। তারা পরিপক্ক অবস্থায় পৌঁছানোর সাথে সাথে পাতার বা পতিত উদ্ভিদ অংশে সংযুক্ত একটি সিল্কের কোকুনের মধ্যে সুপ্তাবস্থায় থাকে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় পোকার একটি প্রজন্ম সম্পন্ন হতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। কম তাপমাত্রার কারণে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২ মাস পর্যন্ত সময় লাগে।