তুলা

তুলোর ঘোড়া পোকা

Anomis flava

বালাই

সংক্ষেপে

  • কম বয়সী কীড়া একত্রে পাতার ল্যামিনায় খায় এবং ছোট ছোট ছিদ্র রেখে যায়।
  • বয়স্ক কীড়া ব্যাপকভাবে পাতা খায় এবং এ খাওয়ার ফলে শুধুমাত্র পাতার শিরা ও মধ্য শিরা অবশিষ্ট থাকে।
  • কম বয়সী কীড়া লুপ তৈরি করে চলাচল করে বলে এর নাম হয়েছে সেমিলুপার।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

তুলা

উপসর্গ

কম বয়সী কীড়া একত্রে কচি পাতা খায়, পাতায় আঁচড় কাটে এবং সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে। পরিণত কীড়া পাতার কিনারা থেকে শিরা পর্যন্ত খেতে থাকে এবং পুরো পাতা খেয়ে শুধুমাত্রা পাতার শিরা ও মধ্য শিরা অবশিষ্ট রেখে দেয় ( যা স্কেলিটোনাইজেশন নামে পরিচিত)।পরবর্তীতে এরা কচি শাখা, মুকুল এবং গুটি খায়। পাতার উপর পোকার কালো উছিষ্টাংশ দেখে এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। আবহাওয়াজনিত অবস্থার উপর নির্ভর করে পোকার আক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফলন মারাত্মভাবে কমিয়ে দেয়। তুলোর ঘোড়া পোকা সংখ্যায় বেশি হলে এবং কম বয়সী গাছে আক্রমণ করলে ফসলের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়।গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ পোকার বিরদ্ধে প্রতিরোধী সক্ষমতা বাড়তে থাকে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

তুলোর ঘোড়া পোকা দমনে নিয়মিত পোকার ডিম এবং ছোট কীড়া তদারকি করুন। কিছু পরজীবী বোলতা যেমন ইকনিমনিড, ব্রাকোনিড, ট্রাইকোগ্রামাটা এবং টেকনিডি জৈবিক দমনে ব্যবহৃত হয়। পোকার অধিক আক্রমণ ঠেকাতে নিমের তেল ব্যবহার করতে পারেন।উদাহরণস্বরূপ, নিমের বীজের নির্যাস বা নিম তেল (১৫০০ পিপিএম) ৫ মিলি/লিটার অনুপাতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। অধিক বালাইনাশক ব্যবহার করলে পোকা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কীড়ার বালাইনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী সক্ষমতা বাড়তে থাকে, সেজন্য পোকার ডিম এবং কম বয়সী কীড়ার দমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিম থাকা অবস্থায় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লোরান্ট্রানিপ্রোলি,এমামেক্টিন বেঞ্জোয়েট, ফ্লুবেন্ডিয়ামাইড, মিথোমিল বা এসফেনভালারেইটের সমন্বিত উপাদানের বালাইনাশক ব্যবহার করুন। স্বল্প মূল্যের ফসলের জন্য রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার কার্যকরী নয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

পৃথিবীর প্রায় সব অংশে পাওয়া যায় এমন এনোমিস ফ্ল্যাভা পোকার কীড়া এর ক্ষতি সাধন করে। প্রাপ্তবয়স্ক কীড়ার ডানার প্রান্তের কাছাকাছি দুটি ধূসর জিগজ্যাগ দাগসহ কমলা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। শরীরের কাছে একটি সুস্পষ্ট কমলা, ত্রিভুজাকার চিহ্ন ডানার উপরের অংশের অর্ধেক পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। পিছনের ডানা হালকা বাদামী রঙের এবং কোন সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই। স্ত্রী পোকা পাতায় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টি গোলাকার ডিম পাড়ে। কম বয়সী কীড়া হালকা সবুজ রঙের হয় এবং শরীরের প্রথম পাঁচটি অংশে পাতলা হলুদ দাগ দেখা যায়।বয়স্ক কীড়া বাদামী বা কালো রঙ ধারন করে এবং লম্বালম্বিভাবে দুটি হলুদ দাগ দেখা যায়।মোড়ানো পাতায় বাদামী রঙের পুত্তলি দেখা যায়। এর ইংরেজি নাম সেমিলুপার হওয়ার কারণ যখন এরা সামনের দিকে চলাচল করে তখন শরীর ধনুকের ন্যায় দেখায়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় তাই জমিতে ভালো জল নিষ্কাশন নিশ্চিত করুন।
  • পোকার অধিক আক্রমণ( সাধারণতঃ বীজ বপনেরর ৬০ থেকে ৭৫ দিন পর) পরিহার করতে মরশুমের শুরুতে বীজ বপন করুন।
  • জমি তদারকি করুন এবং আক্রান্ত পাতা হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।
  • বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন যাতে উপকারী পোকারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
  • অনাবাসী ফসলের সাথে শস্য আবর্তন বজায় রাখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন