অন্যান্য

কলার আঁশ পোকা

Aspidiotus destructor

বালাই

সংক্ষেপে

  • পোকা পাতা, কাণ্ড ও ফল থেকে গাছের রস শুষে খায়, ফলে হলুদ হয়ে যায় এবং কোষকলা বিকৃত হয়ে যায়।
  • তীব্র আক্রমণে পাতা বা ফল সম্পূর্ণরূপে হলুদ থেকে বাদামী হয়ে পড়ে ও ঝরে যায়।
  • সম্পূর্ণ গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বা স্বাভাবিকভাবে ক্রমান্বয়ে মারা যেতে পারে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


অন্যান্য

উপসর্গ

পোকা পাতা, কাণ্ড ও ফল থেকে গাছের রস শুষে খায়, ফলে হলুদ হয়ে যায় এবং কোষকলা বিকৃত হয়ে যায়। মূলতঃ পাতার নিচের পৃষ্ঠ আক্রান্ত হয় কিন্তু কাণ্ড, ফুলের গুচ্ছ ও কচি ফলও আক্রান্ত হতে পারে। তীব্র আক্রমণে পাতা সম্পূর্ণরূপে হলুদ থেকে বাদামী হয়ে ঝরে পড়ে। সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য হল খর্বাকৃতির ডিম ভাজির মত ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট আবাসস্থল। সংক্রমিত গাছের উজ্জ্বল হলুদ রঙ বহুদূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। ফলও বিবর্ণ হতে পারে ও অপরিপক্ব অবস্থায় ঝরে যেতে পারে। সম্পূর্ণ গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বা স্বাভাবিকভাবে ক্রমান্বয়ে মারা যেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

১৫ বা ১০ মিনিট ধরে যথাক্রমে ৪৭ বা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উষ্ণ জল দ্বারা শোধন, গাছকে আঁশ পোকা থেকে মুক্তি দান করতে পারে। লেডিবার্ড বিটল সহ রাইজোবিয়াস লোফেনথি, চিলোকোরাস নাইগ্রিটাস, টেলসিমিয়া নিটিডা, সিউডোসিমনাস অ্যানোম্যালাস এবং ক্রিপ্টোগন্যাথা নোডিসেপস নারকেলের আঁশ পোকার শিকারী পোকা। এদের সংখ্যা দমনে পরবাসী বোলতাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে এফিটিস মেলিনাস, এফিটিস লিঙ্গান্যানেনসিস এবং কমপেরিয়েলা বাইফেসিয়েটা। এসব প্রাকৃতিক শত্রুদের অনুপস্থিতিতে এ বালাইয়ের সংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। হামাগুড়ি দেওয়া ধাপ সাধারণত কীটনাশকের প্রতি অধিক সংবেদনশীল। মোমের মত সুরক্ষা স্তর বিকশিত করে বলে এই পোকাগুলো দমন ব্যবস্থার প্রতি অধিক প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। পাইরিপ্রক্সিফেন দ্বারা দমন ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ রয়েছে। তীব্র সংক্রমণের বিরুদ্ধে পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিন অন্তর কয়েকবার কীটনাশক ছিটানোর প্রয়োজন হতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

নারকেলের আঁশ পোকা অ্যাসপিডিওটাস ডেস্ট্রাকটর-এর কারণে ক্ষতি হয়। নারকেলের পাশাপাশি এরা আম, তাল, পেঁপে, অশ্বত্থ, অ্যাভোক্যাডো এবং লেবুর মত অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তীয় বৃক্ষকে আক্রমণ করে। অন্যান্য আঁশ পোকার মত, এরা পাতার নিচের পৃষ্ঠে দলবদ্ধভাবে থাকে যা খর্বাকৃতির ডিম ভাজির মত দেখতে একপ্রকার মোমের আস্তরণ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। রস শুষে খাওয়ার সময় পাতার কোষকলায় প্রবেশ করা বিষাক্ত লালার কারণে পাতার কোষকলা বিকৃত হয়ে পড়ে। তীব্র আক্রমণে স্ত্রী পোকা আক্ষরিক অর্থেই বহিঃত্বক ঢেকে তাদের শরীরের চারপাশে সাদাটে ডিম পাড়ে। প্রথম ধাপের নিম্ফের পা থাকে যার কারণে তারা তুলনামূলকভাবে বড় রকমের দূরত্ব (১ মিটার পর্যন্ত) অনায়াসে চলাচল করতে পারে। তথাকথিত হামাগুড়ি দেওয়া এসব পোকা বাতাস, উড়ন্ত পোকা এবং পাখির মাধ্যমে, এমনকি কৃষকের দ্বারা সংক্রমিত চারা পরিবহনের মাধ্যমে বিশাল দূরত্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অ্যাসপিডিওটাস ডেস্ট্রাকটর-এর জীবনচক্র সাধারণত ৩২-৩৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • অতিরিক্ত সার প্রয়োগকৃত গাছ পছন্দের বলে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের অতিরিক্ত প্রয়োগ এড়িয়ে চলুন।
  • ঘন পত্রপল্লব এড়াতে গাছ ছেঁটে রাখুন।
  • সংক্রমিত পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং কুঁড়ি কর্তন নার্সারীতে আঁশ পোকার সংক্রমণ দমন করতে সহায়তা করে।
  • বাগানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
  • জমির আশেপাশে ভেন্ডি ফসল এবং অ্যাবুটিলন ইণ্ডিকাম যাতে না উপস্থিত থাকতে পারে সেদিকে নজর রাখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন