Bactrocera dorsalis
বালাই
ওরিয়েন্টাল মাছি কেবলমাত্র পাকা কলাকে আক্রমণ করে। ফসল আহরণ করার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে আরো এক সপ্তাহ পর্যন্ত যে সমস্ত কাঁচা ফল তখনো গাছের সঙ্গে আটকে থাকে সেগুলোতে আর আক্রমণ হয় না। প্রজাতির উপরে নির্ভর করে আহরিত ফলকে আরো ১ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া যেতে পারে। পাকা ফলে, ক্ষতি সাধারণতঃ টিস্যুর ভেঙে যাওয়া এবং আভ্যন্তরীণ পচন ও ম্যাগট পোকার আক্রমনের সঙ্গে জড়িত। ডিম পাড়ার পরবর্তীতে ছিদ্রাকার চিহ্নের ('দংশন') চারিদিক ঘিরে কিছু পচনজনিত দাগ দেখা যেতে পারে। ফলে সরাসরি আঘাতজনিত কারণে (বা অন্য উপায়ে) ফলের ত্বকে দাগ পড়ে এবং ফলের শাঁসের উপরে মাছিকে ডিম পাড়ার সুবিধা করে দিতে পারে।
ফসলের জমি থেকে এই মাছিকে নির্মূল করতে ব্যাকট্রোসেরা ডরসালিসের বন্ধ্যা পুরুষ মাছিকে জাপানে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে ফাঁদও ব্যবহৃত হয়েছে। গ্রহণযোগ্য জৈব কীটনাশক (উদাঃ স্পিনোস্যাড) প্রোটিনের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করে টোপ হিসাবে ব্যবহার করুন। ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে মাছির সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখুন। যদি পরপর তিনদিনের প্রতিদিন ৮টিরও বেশী মাছি ধরা পড়ে বা ১০% ঝরে যাওয়া ফুল বা ১০% ক্ষতিগ্রস্থ কাঁচা বীজকোষ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়, তবে অবিলম্বে সুপারিশকৃত রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করুন।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যদি ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে পরপর তিনদিনের প্রতিদিন ৮টিরও বেশী মাছি ধরা পড়ে বা যদি ১০% ঝরে যাওয়া ফুল বা ১০% ক্ষতিগ্রস্থ কাঁচা বীজকোষ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায তবে নিচে উল্লিখিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করুন: উপযুক্ত বালাইনাশক (উদাঃ ম্যালাথিয়ন) প্রোটিন মিশ্রনের সঙ্গে মিশিয়ে টোপ হিসাবে ব্যবহার করুন। সবথেকে বহুল প্রচলিত যে প্রোটিন ব্যবহার করা হয় তা হাইড্রোলাইসড আকারে থাকে কিন্তু এর মধ্যে কিছু আবার উদ্ভিদের পক্ষে খুবই বিষাক্ত। বিকল্প হিসাবে হালকা-ক্রিয়াশীল জ্যানথিন ডাই ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাকট্রোসেরা ডরসালিস মাছির পুরুষরা মিথাইল ইউজেনলের প্রতি আকর্ষিত হয় (৪-অ্যালিল-১,২-ডাইমেথোক্সিবেনজিন), মাঝেমাঝে অনেক বেশী সংখ্যায়।
ব্যাকট্রোসেরা ডরসালিস নামক ওরিয়েন্টাল মাছির মাধ্যমে এই ক্ষতিসাধন হয়। এই মাছি বিভিন্ন রঙে দেখা যায় কিন্তু প্রধানতঃ হলুদ এবং গাঢ় বাদামী রঙের সঙ্গে বক্ষ অঞ্চলে কালো চিহ্ন দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে ডিম অবস্থা থেকে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পৌঁছাতে ১৬ দিন সময় লাগে কিন্তু এই সময়কাল ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘতর হতে পারে। স্ত্রী মাছি তার জীবৎকালে পাকা কলার মধ্যে ১২০০ থেকে ১৫০০ ডিম পাড়ে এবং যদি লক্ষ্য না করা হয় তবে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। কলা ফলের শাঁস অংশ থেকে খাওয়ার পরে, পূর্ণাঙ্গ কীড়াপোকা ফলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে মাটিতে পড়ে যায় এবং তামাটে থেকে গাঢ় বাদামী রঙের পিউপাতে পরিণত হয়। পরিণত বয়সী মাছির যৌন ক্রিয়া শুরু করতে নয় দিন পর্যন্ত সময় লাগে। কলা ফলের পাশাপাশি অ্যাভোকাডো, আম এবং পেঁপে ফলও এই মাছির দ্বারা আক্রান্ত হয়। অন্যান্য বিকল্প আবাসের মধ্যে পীচ, পাম বা চেরী ফল, লেবু, কফি, ডুমুর, পেয়ারা, প্যাশন ফল (এক ধরনের ফল যা আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় স্থানে পাওয়া যায়), ন্যাশপাতি, খেজুর, আনারস এবং টম্যাটো উল্লেখযোগ্য।