তুলা

পিঙ্ক বলওয়ার্ম বা গুটি পোকা

Pectinophora gossypiella

বালাই

সংক্ষেপে

  • ফুলের কুঁড়িতে ভক্ষণজনিত ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়।
  • ফুলের পাঁপড়ি সিল্কের ন্যায় সুতো দিয়ে পরস্পর জুড়ে যায়।
  • তুলার বীজকোষের দেওয়ালে ভক্ষণজনিত গর্ত দেখা যায়।
  • বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি-গড়নের পাখাসহ ধূসরাভ-বাদামী মথের উপস্থিতি।
  • কীড়াপোকার দেহ হয় সাদা এবং দেহে আড়াআড়ি গোলাপী ফিতের ন্যায় দাগ থাকে।
  • মাথা গাঢ় বর্ণের হতে দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

তুলা

উপসর্গ

পিঙ্ক বলওয়ার্ম ফুলের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে, বীজকোষ ঝরে পড়ে যায়, তন্তু ও বীজের ক্ষতিসাধন করে। গ্রীষ্মের শুরুতে, লার্ভার প্রথমাবস্থায় লার্ভা বৃন্তপ্রান্ত খেয়ে বেঁচে থাকে এবং এই খাওয়ার কাজ কুঁড়ির বৃদ্ধি ও পূর্ণাবস্থা পর্যন্ত চলতে থাকে। আক্রান্ত কুঁড়ির পাঁপড়িগুলো লার্ভা সৃষ্ট সিল্কের তন্তু দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে জোড়া থাকতে পারে। লার্ভা অবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়ে বীজকোষের মধ্যে গর্ত তৈরী করে তন্তুর মধ্যে দিয়ে বীজ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে বীজকে ভক্ষণ করতে থাকে। তন্তু ভেঙে যায় ও দাগ ধরে যায়, যার ফলস্বরূপ তন্তুর গুণমান অসম্ভব কমে যায়। বীজকোষের ক্ষতিও স্পষ্ট বোঝা যায় যখন বীজকোষের মধ্যের দেওয়ালে আঁচিলের মতো স্ফীতভাব দেখা যায়। উপরন্তু, লার্ভা কিন্তু বীজকোষকে সম্পূর্ণ ফাঁকা করে দেয় না এবং বীজকোষের বাইরের দিকে বিষ্ঠা ত্যাগ করে যা কিনা বলওয়ার্মের বৈশিষ্ট্য। সুযোগসন্ধানী জীবাণু যেমন boll rot ছত্রাক প্রায়ই বলওয়ার্ম লার্ভা দ্বারা সৃষ্ট বীজকোষের গর্ত দিয়ে প্রবেশের মাধ্যমে আক্রমণ করে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

Pectinophora gossypiella থেকে নিঃসৃত ফেরোমোন নামক যৌন হরমোন পোকায় আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে। এটা পুরুষ পোকাকে দারুনভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয় যার ফলে পুরুষ পোকা স্ত্রী পোকাকে খুঁজতে পারে না এবং এর ফলে মিলনও সম্ভব হয় না। স্পিনোস্যাড বা ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস দিয়ে স্প্রে করলেও তা কার্যকর হয়। রোপণের ৪৫ দিন পরে বা ফুল আসার পর্যায়ে প্রতি একর জমিতে ৮টি করে ফেরোমোন ফাঁদ স্থাপন করুন এবং ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত এই পদ্ধতির অনুশীলন করুন। ২১ দিন পরপর ফাঁদ পরিবর্তন করে দিন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গাছের পাতায় ক্লোরপাইরিফস, এসফেনভ্যালেরেট বা ইনডক্সাকার্ব সংগঠিত কীটনাশক স্প্রে করে পিঙ্ক বলওয়ার্মের মথ মেরে ফেলা যায়। অন্য সক্রিয় কীটনাশকের মধ্যে গামা ও ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন ও বাইফেনথ্রিনও ব্যবহার করা যায়। যেহেতু লার্ভা তুলা গাছের কোষকলার মধ্যে থাকে, সেই কারনে লার্ভা দমনের কোন সুপারিশ নেই। রোপণের ৪৫ দিন পরে বা ফুল আসার পর্যায়ে প্রতি একর জমিতে ৮টি করে ফেরোমোন ফাঁদ স্থাপন করুন এবং ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত এই পদ্ধতির অনুশীলন করুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

পিঙ্ক বলওয়ার্মের লার্ভা পেক্টিনোফোরা গসিপিয়েল্লা (Pectinophora gossypiella) তুলোর উপপত্র ও বীজকোষের ক্ষতিসাধন করে। প্রাপ্তবয়স্ক কীট বিভিন্ন বর্ণ ও আকারের হয় কিন্তু সাধারণত ধূসর থেকে ধূসর বাদামীযুক্ত বহুবর্ণের হয়। এদের দেহ সম্প্রসারিত রোগা গড়নযুক্ত হয়, ডানাগুলি উপবৃত্তাকার এবং ডানার ধারে শক্ত ধরনের ঝালর লাগানো থাকে। স্ত্রী কীট উপপত্রের পত্রমঞ্জরীর মধ্যে বা সবুজ বীজকোষের বৃতির তলায় একটা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলি সাধারণত ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ফুটে যায় এবং এর পরেই উপপত্রের বা বীজকোষের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রথমাবস্থায় লার্ভাগুলির মাথা গাঢ়-বাদামী বর্ণের ও দেহ সাদা বর্ণের হয় এবং পিঠের দিকে আড়াআড়ি গোলাপী ফিতের ন্যায় দাগ থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লার্ভাগুলি ধীরে ধীরে গোলাপী আভাযুক্ত হয়ে উঠতে থাকে। বীজকোষ ফাটালেই বীজকোষের মধ্যে এই লার্ভাগুলিকে খেতে দেখা যায়। পিউপায় রূপান্তরিত হওয়ার আগে লার্ভাগুলি ১০ থেকে ১৪ দিন ধরে খেয়ে যায়, এবং এই কাজ হয় মাটিতে, বীজকোষের মধ্যে নয়। পিঙ্ক বলওয়ার্মের বংশবৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হলো মৃদু থেকে উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশ। যাইহোক, ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশী তাপমাত্রা হলেই এদের মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে শুরু করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • খুব দ্রুত পরিপক্ক হয় এমন জাতের তুলোর বীজ ব্যবহার করুন কারণ গুটিপোকা চাষের মরশুমে একটু দেরী করেই আবির্ভূত হয়।
  • তুলোর ক্ষেত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে কীট দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করুন।
  • বেশী সংখ্যায় মথ ধরতে ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করুন।
  • শীতকাল এবং বসন্তকালে জমিতে সেচ যেন ভালভাবে দেওয়া হয় সে ব্যাপারে সঠিক পরিকল্পনা করুন যাতে কীটের বংশবৃদ্ধি কমানো যায়, যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায় জমি জল দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া।
  • সাবধানতার সঙ্গে কীটনাশক ব্যবহার করুন যাতে তা এই কীটের শিকারী পতঙ্গের অপকার না করে এবং কীট যাতে কীটনাশকের বিপক্ষে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ না পায়।
  • কীটের বংশবৃদ্ধি মরশুমের যে সময়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তার অনেক আগেই তুলা সংগ্রহ করে এই সময়কালকে এড়িয়ে চলুন।
  • ফসল তোলার পর অপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ জমিতে পড়ে থাকা উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ নষ্ট করে দিন।
  • গ্রীষ্মের মাসগুলিতে জমি পতিত রেখে দিন।
  • জমিতে ৭ মাস তুলো চাষ না করার পদ্ধতি মেনে চলুন এবং এই সময়ে অন্য ধরনের ফসল চাষ করুন (উদাহরণ হিসাবে ছোট দানা শস্য বা আলফালফা-র কথা বলা যায়)।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন