কলা

কলার দাদ সৃষ্টিকারী মথ

Nacoleia octasema

বালাই

সংক্ষেপে

  • প্রস্ফুটিত মোচা ও বর্ধনশীল কলার গায়ে বসে কীড়াপোকা খেয়ে থাকে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে, পুরুষ ফুল বা পরিপক্ক হতে যাওয়া ফলেও আক্রমণ করে।
  • কলার খোসায় খেয়ে দাদ সৃষ্টির ফলে তা বাজারজাতকরণের মান খন্ডিত করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

কলার দাদ সৃষ্টিকারী মথের কারণে যে ক্ষতি হয় তা প্রাথমিকভাবে বিছা দ্বারা হয় এবং মূলত ফলের ক্ষতি করাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। মঞ্জরীপত্র দ্বারা সুরক্ষিত থাকলেও বিছাগুলো ফলের কাঁদি আক্রমণ করে। শুরুতে তারা মোচা এবং বর্ধনশীল কলার খোসা খেয়ে থাকে। এতে কলায় ক্ষতস্থান দেখা যায়, যা দ্রুত কালো হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে যেহেতু মঞ্জরীপত্র আলগা হয়ে ঝরে যায়, সেহেতু তারা মোচার নিচের দিকে কলা ঢেকে রাখা নবীন মঞ্জরীপত্রে চলে যায়। এদের আর কোন বিকল্প আবাসস্থল না থাকলে বিছা কাঁদির গোড়ায় অবস্থান করে পুরুষ ফুল বা বর্ধনশীল কলা খেয়ে থাকে। কলার দাদ সৃষ্টিকারী মথের খাবার কারণে এসব স্থানে প্রায়ই জেলির মত স্বচ্ছ পদার্থ দেখা যায়। কলার খোসায় খেয়ে দাদ সৃষ্টির কারণে সেগুলো বাজারজাতকরণের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এ পোকার বিরুদ্ধে জৈবিক দমনের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পরজীবি বা শিকারী পোকা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। কিছু পরজীবি বোলতা, মাকড়সা ও অন্যান্য সাধারণ শিকারী পোকার প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ হার খুবই নিম্ন। টেট্রামোরিয়াম বাইক্যারিন্যাটাম পিঁপড়া কলার দাদ সৃষ্টিকারী পোকা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদের সাধারণত গাছে ও মোচায় দেখা যায়। স্পিনোস্যাডের ফরমুলেশন, বিউভারিয়া ব্যাসিয়ানা বা মেটাঢ়িজিয়াম এনিসোপ্লি বা ব্যাসিলাস থিউরিনজেনসিস ব্যাকটেরিয়াবাহী জৈব কীটনাশক এ পোকার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মোচায় ক্লোরোপাইরিফস, বাইফেনথ্রিন এবং বেন্ডিওকার্ব সংঘঠিত রাসায়নিক ব্যবহারের পরামর্শ রয়েছে। গাছের অগ্রভাগে যখন মোচা খাড়া থাকে তখন স্প্রে করা উচিত। চোখা অগ্রভাগ থেকে তিনভাগের একভাগ নিচে ২০- ৪০ মিলি তরল কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন। এর উপরে বা নিচে ইনজেকশনের প্রয়োগে ফল নষ্ট হয়ে যাবে বা কার্যকর থাকবে না।

এটা কি কারণে হয়েছে

কলার দাদ সৃষ্টিকারী মথ ন্যাকোলিয়া অক্টাসেমা’র কারণে এ ক্ষতি হয়। পূর্ণাঙ্গ মথ হালকা বাদামি থেকে হলদে বাদামী রঙের হয় এবং পাখায় কালো দাগ থাকে। স্বল্পায়ু (৪-৫ দিন) এসব মথ গোধূলিতে সক্রিয় হয় এবং সন্ধ্যার প্রথমভাগে সঙ্গম করে থাকে। দিনের বেলায় তারা আবর্জনা এবং পুরাতন পাতার গোড়ার নিচে লুকিয়ে থাকে। স্ত্রী মথ নতুন মোচা বা চারপাশের পাতা ও মঞ্জরীপত্রে ডিম পাড়ে। ডিম স্ফুটনের পর বিছা মোচায় গিয়ে খেতে শুরু করে। ডিম পাড়া থেকে ডিম স্ফুটন পর্যন্ত জীবনচক্র ২৮ দিনে সম্পন্ন হয়। কলার দাদ সৃষ্টিকারী মথ আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ করে এবং বর্ষায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। যদি কোন মৌসুম বৃষ্টিবিহীন হয় তবে ঠান্ডা ও শুষ্ক শীতে সাধারণত এ মথ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ণাঙ্গ পোকা নিম্ন আর্দ্রতা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় সঙ্গম করে না এবং ডিমও পাড়ে না। এটি কলার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর পোকা এবং অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় শতভাগ মোচার ক্ষতি করতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সহজলভ্য হলে সহনশীল বা প্রতিরোধী জাতের চাষ করুন।
  • সদ্য বের হওয়া মোচার কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা এবং/বা বিছাপোকা আছে কিনা তা নিরীক্ষা করুন।
  • মোচার গোড়ার প্রতি বেশি করে মনোযোগী হোন এবং সেখানে জেলির মত কোন পদার্থ আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন