Spodoptera mauritia
বালাই
ধানের পাতাধ্বংসকারী লেদা পোকার কীড়া ধান গাছ খায় এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করে যেমন পাতায় ছিদ্র দেখা যায়, পাতা কঙ্কালসার হয়ে যায় এবং কাণ্ড শুকিয়ে যায়। আক্রমণ তীব্র হলে কীড়ার সমগ্র দল জমির ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং রাতারাতি পুরো ফসল ধ্বংস করে ফেলে যেন গবাদিপশু শস্য খেয়ে ফেলেছে। এ দলবদ্ধ কীড়া ধানগাছের পাতার অগ্রভাগ, কিনারা কেটে ফেলে এমনকি গাছের গোড়াও কেটে ফেলে। নার্সারির বীজতলায়, সরাসরি বপন করা ধানে এবং কুশি গজানো পর্যায়ে এ পোকার আক্রমণের তীব্রতা বেশি হয়। জমির পুরো ধান গাছ নিঃশেষ হয়ে গেলে সেনাবাহিনী দলের মত এরা অন্য জমিতে স্থানান্তর করে । গত শতক থেকে এটি ধানের চারার অন্যতম প্রধান বালাই হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং ধানের ১০-২০ শতাংশ ক্ষতিসাধন করে।
ছোট জমিতে হাঁস ছেড়ে দিলে এরা কীড়া খেয়ে ফেলে। বোলাস মাকড়শা, স্ত্রী পোকার অনুরূপ ফেরোমন হরমোন উৎপাদন করতে পারে, ফলে এরা পুরুষ পোকাকে আকর্ষণ করতে পারে এবং এভাবে মিলনের হার হ্রাস পায়। স্টেইনারনেমা কারপোক্যাপসি (Steinernema carpocapsae) প্রজাতির কৃমি কিংবা নিউক্লিয়ার পলিহেড্রোসিস ভাইরাস (NPV) দিয়েও এ পোকা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।
সম্ভমবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। আক্রমণের প্রাথমিক ক্ষেত্রে কীড়ার স্থানান্তর রোধ করার জন্য জমির কিনারার দিকে কীটনাশক ছিটিয়ে দিন। ক্লরপাইরিফস কীটনাশক প্রয়োগ করলেও এ পোকা ভালভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
স্পোডোপটেরা মরিশিয়া নামের পাতাধ্বংসকারী লেদা পোকা ধানের এ রোগ সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে বহুভোজী এ পোকা ধানের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মথ ছাইয়ের মত ধূসর রঙের এবং পাখার দৈর্ঘ্য ৪০ মি.মি। স্ত্রী পোকা নিশাচর এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মিলিত হয়। মিলনের একদিন পরেই স্ত্রী পোকা ডিম পাড়তে শুরু করে এবং বিভিন্ন ধরনের ঘাসে, আগাছায় এবং ধানের পাতায় প্রতি ব্যাচে ২০০-৩০০টি ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার কোষকলা খায় এবং ৬ বার চামড়া পাল্টায়। এদের দৈর্ঘ্য ৩.৮ সে.মি. হয়। পরিপূর্ণ কীড়া মসৃণ, চোঙাকৃতি এবং পিঠের দিকে লম্বালম্বি দাগবিশিষ্ট বিবর্ণ বর্ণের হয়। এদের পিঠে 'C' বর্ণের মত দেখতে দুই সারি কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এরা রাতের বেলা খায় এবং দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। পিউপেশন ঘটে মাটির নিচে কোকুনের ভিতরে।