ক্যাপসিকাম ও মরিচ

মরিচের থ্রিপস

Scirtothrips dorsalis

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতা উপরের দিকে মুড়ে যায়।
  • অকাল পত্রমোচন দেখা যায়।
  • ফুল ও ফলও আক্রান্ত হতে পারে।
  • কালচে বাদামী দেহ ও হলুদাভ পাখা সমেত ছোট এবং ছিপছিপে গঠনযুক্ত পোকা।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ক্যাপসিকাম ও মরিচ

উপসর্গ

পোকার বাচ্চা ও বয়স্ক পোকা উভয়ই কচি পাতার নিচের পৃষ্ঠে বসে খায়। এরা পাতার কোষকলা ছিদ্র করে এবং চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা পাতার রস শুষে নেয়। আক্রান্ত পাতা হালকা বাদামী থেকে ছোপ ছোপ রূপালী বর্ণ ধারণ করে এবং কুঁকড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণে সম্পূর্ণ পাতা কুঁকড়ে যায় এবং পরবর্তীতে অকালে পত্রমোচন হয়। ফুলে আক্রমণ হলে পাঁপড়িতে লম্বা চিকন কাটা দাগ দেখা যায় যার ফলে ফুল শুকিয়ে ঝরে পড়তে পারে। মরিচের ত্বকে মামড়ি, ছোপ ছোপ দাগ এবং ফলের আকৃতি বিকৃত হলে বাজার দর কমে যাবে। যদিও পোকার উপদ্রব সারা বছর দেখা যায়, তবে শুকনো মরশুমে এবং মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

অরিয়াস পরিবারভুক্ত ক্ষুদ্র পাইরেট বাগ , ফাইটোসিড মাকড় নিউসেইয়উইসুলাস কোকুমারিস এবং এম্বলেইসেইয়াস স্বিরস্কি ডালিম ফলের জৈবিক দমন ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা হয়। শিকারী মাকড় যেমন ইউসিউস সজায়েনসিস, ইউপ্টেরট হিবিস্কি, ইউসিউস টুলারেন্সিসও বিকল্প আবাস যেমন মরিচ ও আঙ্গুরে পোকার সংখ্যা দমনে কার্যকরী ভাবে ব্যবহার করা হয়। পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ পোকা (সন্ধ্যায়) দমনে, গাছের গোড়ায় এবং পাতায় মাটির গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। নিমের তৈল, স্পাইনেতোরাম বা স্পিনোস্যাড পাতার উভয় পৃষ্ঠে ও গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে দিন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। পত্রপল্লবে ম্যালাথিয়ন সমন্বিত উপাদান স্প্রে করে থ্রিপস দমনের জন্য সুপারিশ আছে। সিরটোথ্রিপস ডরসালিসের সংখ্যা দমনে অন্যান্য কীটনাশকের ব্যবহারও কার্যকরী। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণত অ্যাবামেক্টিন এবং ডাইমেথোয়েটের ব্যবহার মরিচের থ্রিপস নিধনে কার্যকরী।

এটা কি কারণে হয়েছে

সিরটোথ্রিপস ডরসালিস এবং রাইপিফোরোথ্রিপস ক্রুয়েন্টেটাস, এ দুই প্রজাতির থ্রিপসের কারনে আক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়। বয়স্ক সিরটোথ্রিপস ডরসালিস খড়কুটোর ন্যায় হলুদ রঙ বিশিষ্ট হয়। সাধারণত, কচি পাতা ও কুঁড়ির ভেতরে স্ত্রী পোকা ধূসর-সাদাটে রঙের, শিম-আকৃতির ৫০টি ডিম পাড়ে। সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এরা পরিণত পত্রফলক পৃষ্ঠ বেছে নেয়। ডিম থেকে বাচ্চা হতে ৩-৮ দিন সময় লাগে । সদ্যোজাত বাচ্চা পোকা ছোট ও লালচে বর্ণের হয় যা পরবর্তীতে হলদে বাদামী রঙ ধারণ করে। বাচ্চা পোকা গাছের পাতায় রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে এবং পরবর্তীতে আলগা ঝুরঝুরা মাটি অথবা গাছের গোড়ার আবর্জনায় প্রবেশ করে মূককীট দশা পূর্ণ করে। ২-৫ দিনের ভিতর মূককীট দশা শেষ হয় । বয়স্ক রাইপিফোরোথ্রিপস ক্রুয়েন্টেটাস আকারে ছোট , লম্বা ও নরম-শরীর বিশিষ্ট হয়। এদের গায়ের সাথে পাখা শক্ত ভাবে লাগানো থাকে। এদের গায়ের রঙ কালচে বাদামী এবং পাখা হলদে রঙের হয় এবং এরা ১.৪ মি.মি. লম্বা হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • যদি পাওয়া যায়, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • থ্রিপসের সংখ্যা তদারকিতে আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করুন।
  • অন্যভাবে, সংক্রমিত উদ্ভিদ থেকে পাতা তুলে ফেলুন এবং সেটিকে সাদা কাগজের উপর হালকা ঝাঁকি দিন।
  • অধিক সংক্রমিত গাছকে ক্ষেত থেকে সরিয়ে ফেলুন।
  • মাটিতে নিয়মিত জলসেচ করুন এবং মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন।
  • উপকারি পোকার সংখ্যা সংরক্ষণে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • চারপাশে বিকল্প আবাসী ফসল রোপণ এড়িয়ে চলুন।
  • মাঠের ভেতরে ও চারপাশের আগাছা পরিষ্কার করুন।
  • বায়ু প্রতিবন্ধক উদ্ভিদ মাঠকে দূরবর্তী উৎসের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • জমি চাষ করে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা থ্রিপসের মূককীট রৌদ্রে উন্মুক্ত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন