পেঁপে

পেঁপের মাজরা পোকা

Toxotrypana curvicauda

বালাই

সংক্ষেপে

  • ফলের ত্বকের ছিদ্র দিয়ে তরুক্ষীর ফোঁটা ফোঁটা করে নিঃসৃত হয় যা ফলের ত্বকের কালচে সবুজ রঙের সম্পূর্ণ বিপরীত।
  • এ পোকার কীড়া ফলের শাঁস অংশের মধ্যে দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে বীজ গহ্বরে পৌঁছায় এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বীজ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।
  • ক্ষতি যখন চরমে পৌঁছায় তখন ফলের শাঁস অংশে পচন ধরায় এবং ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে।
  • ফলে হলুদ বিবর্ণতা দেখা যায় এবং ত্বকে মামড়ি মতো অংশ দেখা যায় বা ত্বক গর্তপূর্ণ হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

পেঁপে

উপসর্গ

স্ত্রী পোকা খুব কচি ফলের উপরে বেশ কয়েকটি ডিম পাড়ে। ফলের ত্বকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা আকারে তরুক্ষীর বেরিয়ে আসে যা ফলের ত্বকের কালচে সবুজ রঙের বিপরীত। ডিম ফুটে কীড়া বের হয় এবং ফলের শাঁস অংশের মধ্যে দিয়ে সুড়ঙ্গে তৈরি করে বীজ গহ্বরে পৌঁছায় এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বীজ থেকে খাদ্যসংগ্রহ করে। ফলের ত্বকের উপরেই বাইরে বেরিয়ে আসার ছিদ্রপথ দেখা যায়। দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ কাটার ফলে ফলের শাঁস অংশে পচন ধরে এবং ক্ষয় চলতেই থাকার কারণে বাদামী ও মাঝে মাঝে কালো ক্ষতদাগের আবির্ভাব হয়। ফল থেকে বিশ্রি দুর্গন্ধ নিঃসৃত হয় এবং রসের মতো একধরনের ক্ষরণ হয়। ফলের ত্বক হলুদ হয়ে যায় এবং ফলের গায়ে মামড়ির মতো অংশ বা গর্তের আবির্ভাব হয়। ফল অকালপক্কতা দেখা দেয় এবং অকালেই গাছ থেকে ঝরে পড়ে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

পরজীবি বোলতা ডরিক্টোব্র্যাকন টোক্সোট্রাইপ্যানা (Doryctobracon toxotrypanae) এ কীটের আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। এ পোকার বিরুদ্ধে কোন কীটনাশকই মনে হয় কার্যকরী হবে না। কীটনাশক (উদাহরণ হিসাবে ম্যালাথিয়ন বা ডেলটামেথ্রিন) ও কোনো নির্দিষ্ট ফাঁদ (পুরুষ ও স্ত্রী পোকার জন্য) ব্যবহার করেও পরীক্ষা করা হয়েছে। মাজরা পোকাকে নিধন করতে ফলের উপরে ইথিলিন ব্রোমাইডের উষ্ণ বাষ্প প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

টক্সোট্রাইপানা কার্ভিকুডা (Toxotrypana curvicauda) নামক মাছি এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে এবং ছোট সবুজ রঙের কচি পেঁপে ফলের উপরে ডিম পাড়ে। এ পোকার বয়স্কদের অনেক সময় বোলতা বলে ভুল করা হয় কারণ এদের আকার, আয়তন এবং স্বভাব অনেকটা বোলতারই মতো। এদের দেহ হয় হলুদ এবং বুকের উপরে সমদূরত্বে কালো চিহ্ন দেখা যায়। স্ত্রী পোকার লম্বা, সরু তলপেট থাকে এবং বর্ধিত বাঁকানো ডিম-পাড়ার অঙ্গ থাকে যা দেহের দৈর্ঘ্যকেও ছাড়িয়ে যায়। এ পোকার কীড়া সাদা ও ছিপছিপে হয় এবং এদের দেহের দৈর্ঘ্য ১৩ থেকে ১৫ মিলিমিটার হয়। ফল বেশ কয়েকটি কীড়ার আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ফসল তোলার পরবর্তী সময়ে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে। বর্ষাকাল কেটে গেলে ফলের উপর আক্রমণের তীব্রতা চরমে পৌঁছায়। আমেরিকা মহাদেশে উষ্ণ ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে পেঁপের মাজরা পোকাই হলো সবথেকে প্রধান শত্রু।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • ক্ষতির পরিমান নির্দ্ধারণ করুন বা ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকার বংশবৃদ্ধি তদারকি করুন।
  • ফলকে ঢেকে রাখতে কাগজের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করুন এবং ডিম পাড়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করুন।
  • মাটিতে ঝরে পড়া ও অকালপক্ক ফল তুলে ফেলে দিন।
  • রোগাক্রান্ত কচি ফল তুলে নিয়ে নষ্ট করে দিন।
  • চাষের মাঠের চারিদিক ঘিরে এ পোকাকে আকর্ষণ করে এমন ফসল চাষ করুন।
  • চরম ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতে আগাম ফসল ফলান।
  • সংরক্ষণাগারে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফলকে সংরক্ষণ করুন।
  • গাছের চারিদিকে খুঁড়ে দিলে মাটিতে বেড়ে ওঠা বয়স্ক পোকা আক্রমণের আগেই মারা যায়।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন