আলু

আলুর মথ পোকা

Phthorimaea operculella

বালাই

সংক্ষেপে

  • স্বচ্ছ ফুস্কুড়ি।
  • কন্দের গায়ে সরু কৈশিকনালী দেখা যায়।
  • শাঁস অংশে অনিয়মিত গভীর সংক্রমণ।
  • কীড়াপোকা আলুর পাতা, বৃন্ত, ডাঁটা এবং বিশেষ করে কন্দকে আক্রমণ করে।
  • মথের দেহ প্রসারিত ও ধূসর বর্ণের হয় এবং দেহে সম্প্রসারিত শুঁড়, সংকীর্ণ বাদামী অগ্রবর্তী ডানা ও হালকা ধূসর বর্ণের পশ্চাদ্‌বর্তী ডানা দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

3 বিবিধ ফসল

আলু

উপসর্গ

এ পোকা বিভিন্ন ধরণের আলোবিমুখী উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল কিন্তু আলু তাদের সবচেয়ে প্রিয়। এ পোকার কীড়া আলুর পাতা, বৃন্ত , ডাঁটা এবং কন্দে আক্রমণ করে (ক্ষেতে কিংবা সংরক্ষণাগারে)। তারা বহিঃত্বক অপরিবর্তিত রেখে অভ্যন্তরীণ পত্রকলা খেয়ে ফেলে স্বচ্ছ দেখতে ফোসকা উৎপন্ন করে। কাণ্ড দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে এবং গাছ মারা যায়। কীড়াপোকা কন্দে চোখ অংশের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে এবং তল বরাবর সরু সুড়ঙ্গ কিংবা ভিতরে গভীর অনিয়মিতাকার ক্ষতের সৃষ্টি করে। প্রবেশপথে কীড়ার বিষ্ঠা দেখা যায় যা অন্যান্য জীবাণুঘটিত সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

কমলার খোসা এবং পিথুরানথোস টরটোসাস (Pithuranthos tortosus) অথবা ইফোনা স্কাব্রা (Iphiona scabra) প্রজাতি মথের প্রজনন শক্তি কমিয়ে দেয়। ব্র্যাকন গেলেকাই (Bracon gelechiae), কপিডোসমা কোলেরি (Copidosoma koehleri) অথবা ট্রাইকোগ্রামা (Trichogramma) প্রজাতির পরজীবি বোলতা অনেকাংশে পোকার সংখ্যা কমিয়ে দেয়। মথের শিকারী হল পিঁপড়া এবং লেডি বার্ড। গ্রানুলোভাইরাস (granulovirus) অথবা ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (Bacillus thuringiensis)-এর প্রয়োগে এক রাতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত মথের মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারে। কোন কোন দেশে সংরক্ষনকালীন ক্ষতি কমানোর জন্য ইউক্যালিপটাস বা ল্যান্টানার পাতা দিয়ে বস্তা ঢেকে রাখা হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। অরগ্যানোফসফেট (organophosphates) জাতীয় কীটনাশক পাতায় ছিটানো যেতে পারে। কীড়াপোকার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পাইরিথ্রয়েড (Pyrethroids) বিতারক হিসাবে বীজের উপর প্রয়োগ করলে তা কীড়াপোকার আক্রমণ প্রতিহত করে।

এটা কি কারণে হয়েছে

পূর্ণবয়স্ক মথের ধূসর লম্বা শরীরে বর্ধিত শুঁড়, সরু বাদামী সামনের ডানায় ছোপ ছোপ কালো দাগ এবং হালকা ধূসর ও লম্বা ঝালরসহ পিছনের ডানা বর্তমান। এরা মূলতঃ রাতে বের হয় এবং আলোর দিকে আকর্ষিত হয়। এরা একটি একটি করে কিংবা গুচ্ছাকারে পাতায় অথবা উন্মুক্ত কন্দের উপর ডিম পাড়ে। ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে এরা ডিম ফুটে বের হতে পারে না। কীড়াপোকার গভীর বাদামী রঙের মাথা এবং হালকা বাদামী থেকে গোলাপী রঙের শরীর লক্ষ্য করা যায়। তারা পত্রবৃন্ত, নতুন কাণ্ড কিংবা পত্রশিরার মধ্যে প্রবেশ করে এবং পরে কন্দের ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন ক্ষত সৃষ্টি করে। এরা ১৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে যদিও এদের পক্ষে অনুকূল তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুষ্ক মাটির ফাটলের মধ্যে কীড়াপোকা বেঁচে থাকে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ গাছ থেকে প্রাপ্ত বীজকন্দ ব্যবহার করুন।
  • প্রতিরোধী অথবা সহনশীল জাত ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
  • কমপক্ষে ৫ সেমি কিংবা তার বেশী গভীরে বীজ আলু বপন করুন।
  • মথের জন্য খেয়াল রাখুন এবং আলোক ফাঁদ কিংবা ফেরোমোন ফাঁদ দিয়ে তাদের ধরুন।
  • আগাছা এবং অবাঞ্ছিত পরগাছা উৎপাটিত করে জমি পরিষ্কার রাখুন।
  • মাটিকে ফাটল ধরার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত জমিতে জলসেচ করুন।
  • আলু পরিপক্ক হয়ে গেলে দ্রুত তা তুলে ফেলুন।
  • নষ্ট হয়ে যাওয়া কন্দসমূহ মাটিতে পুঁতে ফেলুন কিংবা নষ্ট করে ফেলুন।
  • ক্ষেত ভালভাবে পরিষ্কার করুন যাতে গাছের কোন অংশ বিশেষ এবং মালচ্‌ অবশিষ্ট পড়ে না থাকে।
  • সংরক্ষণের জায়গা কীটপতঙ্গ মুক্ত রাখুন।
  • আলু ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন