অন্যান্য

বাদামের হোয়াইট গ্রাব

Scarabaeidae sp.

বালাই

5 mins to read

সংক্ষেপে

  • পোকার কীড়া উপমূল ও মূল ব্যাপক হারে খায়, ফলে পত্রপল্লব নেতিয়ে পড়ে এবং পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায়।
  • পরিস্থিতি চরম হলে চারাগাছ শুকিয়ে মরে যায় এবং মাটি থেকে সহজেই গাছ টেনে উঠানো যায়।
  • পরিশেষে, গাছের জীবন স্বল্প হয়ে আসে, ফলন অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে যায়।
  • আক্রান্ত গাছ দেখতে হলুদ, নেতিয়ে পড়ে এবং দেহে ছোপ ছোপ দাগসহ মারা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


অন্যান্য

উপসর্গ

কীড়া এবং পূর্নবয়স্ক পোকা উভয়েই গাছের ক্ষতি করে বা শিকড় থেকে খাওয়ার কারনে গাছের উপর ধকল পড়ে। পোকার কীড়া উপমূল ও মূল ব্যাপক হারে খায়, ফলে পত্রপল্লব নেতিয়ে পড়ে এবং পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায়। বাদামের ক্ষেত্রে, ফল আক্রান্ত হয়। আক্রমণ বেশি হলে, চারাগাছ শুকিয়ে মরে যায় এবং মাটি থেকে সহজেই গাছ টেনে উঠানো যায়। আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, গাছ তাৎক্ষনিক কোন উপসর্গ প্রদর্শন করে না। যাহোক পরিশেষে, গাছের জীবন স্বল্পমেয়াদী হয়ে আসে, ফলন অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে যায়। একবর্ষজীবী গাছের ক্ষেত্রে হঠাৎ নেতিয়ে পড়া প্রথম লক্ষন হিসেবে ধরা পড়ে, পরবর্তীতে, অকাল পত্রমোচন ঘটে। আক্রান্ত গাছ দেখতে হলুদ, নেতিয়ে পড়ে এবং দেহে ছোপ ছোপ দাগসহ মারা যায়।

Recommendations

জৈব নিয়ন্ত্রণ

বীজ শোধনের জন্য সোলানাম সুরাট্টেন্স বা নিমের পাতার নির্যাস ব্যবহার করুন। মরশুমের শুরুতে কীড়ার সংখ্যা কমাতে প্রতি হেক্টরে ১.৫ বিলিয়ন হারে উপকারী কৃমির (হেটেরোহ্যাবডিটিস স্পিসিস) তরল সাসপেনশন ব্যবহার করুন। নিউক্লিয়ার পলি হেড্রোসিস ভাইরাস বা সবুজ মাস্কারডাইন নামক ছত্রাক সংঘঠিত জৈব- কীটনাশকও ভাল কাজ করে। বপনের পূর্বে কেরোসিন (প্রতি ৭৫ কেজি বীজ/ এক লিটার কেরোসিন) দ্বারা বীজ শোধন করুন। ব্র্যাকোনিডস, গঙ্গা ফড়িং, ট্রাইকোগ্রামাটিড্স বোলতা মাঠে সংরক্ষণ করুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মাটি থেকে বের হওয়ার পরপরই পূর্নবয়স্ক পোকা কাছাকাছি থাকা গাছগুলোর পাতা খেয়ে থাকে। ডিম পাড়ার পূর্বে বয়স্ক পোকার সংখ্যা কমাতে কার্যকরী কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ক্লোরোপাইরিফস ২০ % ইসি @১১২৫ মিলি/প্রতি হেক্টর প্রয়োগ করা যেতে পারে। ক্লোরোপাইরিফস @৬.৫ মিলি/প্রতি কেজি হারে ব্যবহার করে বীজ শোধনের মাধ্যমেও এ পোকার বিস্তার কমানো যায়।

এটা কি কারণে হয়েছে

হলস্ট্রিসিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত হোয়াইট গ্রাবের দ্বারা আক্রমণের উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। পূর্নবয়স্ক পোকা গাঢ় বাদামি রঙের এবং প্রায় ২০ মিমি. লম্বা এবং ৮ মি.মি. প্রশস্ত। বর্ষা শুরুর তিন থেকে চার দিনের মধ্যে কীড়াপোকাগুলো মাটি থেকে বের হয়ে আসে এবং আশেপাশের গাছের পাতা ও মুকুল খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ হলে, এরা পুনরায় মাটির গভীরে ঢুকে লুকিয়ে পড়ে এবং ডিম পাড়ে। স্ত্রীপোকা মাটির ৫-৮ সে.মি. গভীরে আলাদা আলাদা ভাবে ২০-৮০ টি ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো সাদাটে হলুদ, অর্ধস্বচ্ছ এবং প্রায় ৫ মি.মি. লম্বা হয়। পরিণত শূককীট প্রায় ৫ মি.মি. লম্বা স্বচ্ছ সাদাটে হলুদ বর্ণের হয়। এদের মাথা হলুদ বর্ণের এবং সাদা রংয়ের দেহ মাংসল এবং ইংরেজী 'C' বর্ণের মতো হয়। এরা কয়েক সপ্তাহের জন্য মাটির জৈব উপাদান থেয়ে বেঁচে থাকে এবং পরবর্তীতে বাদাম গাছের উপমূল এবং শিম খায়। সাদা কীড়া আখ, মরিচ, জোয়ার, ভুট্টা, মসুর এবং বাজরা-র শিকড় খেয়ে থাকে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • বাজারে সহজলভ্য এবং সহনশীল জাতের চারা রোপন করুন।
  • পোকার কীড়া যাতে আক্রমন করতে না পারে সেজন্য বীজ আগাম বপন করুন।
  • চীনাবাদামের দুই সারির মাঝে জোয়ার, ভুট্টা অথবা পেঁয়াজ ফাঁদ ফসল হিসেবে আবাদ করুন।
  • বর্ষার শুরুতে আলোর ফাঁদ স্থাপন করুন এবং প্রতিদিন কি পরিমান বিটল পোকা আসে তা পর্যবেক্ষন করুন।
  • বিশেষতঃ সকালবেলায় ক্ষেত থেকে বিটল পোকা ধরে ধ্বংস করুন।
  • প্রাকৃতিক বন্ধুপোকা সংরক্ষন করতে সবুজ সার যেমন ইতালিয়ান রাইগ্রাস অথবা শিম জাতীয় শস্য ব্যবহার করুন।
  • মূলের গঠন শক্তিশালী করতে এবং হোয়াইট গ্রাবের প্রতি প্রতিরোধী করতে প্রাথমিক সার হিসেবে পটাশিয়াম প্রয়োগ করুন।
  • হেমন্তের শেষে এবং বসন্তে চারা রোপনের আগে জমি গভীরভাবে চাষ দিন।
  • জমি দুই বছর পতিত রাখুন।
  • অনাবাসী ফসলের সাথে শস্য আবর্তন করুন (যেমন ধান)।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন