Gargaphia solani
বালাই
পূর্ণাঙ্গ ও সদ্যোজাত কীট উভয়েই বেগুনের পাতা খেয়েই বেঁচে থাকে। সবথেকে বিপদের সময় হলো বসন্তের প্রথমভাগ যখন বেগুন গাছ চারা অবস্থায় থাকে। শীতঘুম থেকে জাগ্রত পূর্ণাঙ্গ কীট গাছকে ছেয়ে ফেলে এবং পাতার তলদেশে সবুজ রঙের ডিম পেড়ে সদ্যোজাত কীটের ভবিষ্যৎ বসতি গড়ে তোলে। সদ্যোজাত কীট ডিম ফুটে বের হয় এবং দলবদ্ধভাবে পাতার তলদেশের দিক থেকে খেতে শুরু করে এবং তলদেশ বাদামী রঙের বিষ্ঠায় ভরিয়ে তোলে। পাতা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে বৃত্তাকার, বর্ণহীন দাগ পত্রফলকের উপরের তল থেকেই স্পষ্টভাবে দেখা যায়। খেতে খেতে পত্রফলকের তলদেশে বাইরের কিনারার দিকে অগ্রসর হলে ক্রমবর্ধমান ক্ষতির ফলাফল হিসাবে পাতা হলুদ বর্ণে রূপান্তরিত হয় এবং সাধারণতঃ উপরের দিকে কুঁকড়ে যায়। রোগের চরমাবস্থায় সম্পূর্ণ গাছটাই মরে যেতে পারে বা গাছ এত দুর্বল হয়ে যায় যে ফলের বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।
বেগুনের লেইস বাগ-এর স্বাভাবিক শত্রু হলো গুবরে পোকা, মাকড়সা, ও পাইরেটবাগ এবং দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এ কীটপতঙ্গ রক্ষা করা উচিৎ। কীটনাশক সাবান, পাইরেথ্রিনস ও নিম তেল পাতার তলদেশে স্প্রে করা যেতে পারে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ম্যালাথিয়ন (malathion) বা পাইরিথ্রয়েডস (pyrethroids) সমৃদ্ধ কীটনাশক বিস্তৃতভাবে পাতার উপরে স্প্রে করা যেতে পারে, কিন্তু খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে কারণ এই সকল কীটনাশক উপকারী পতঙ্গের ক্ষতি করে।
বেগুনের লেইসবাগ পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় হালকা বাদামী ও সাদা বর্ণের হয় এবং স্বচ্ছ সবুজ, ফিতের মতো শিরা এদের পাখায় দেখা যায়। এরা প্রায় ৪ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য সম্পন্ন হয় এবং গাছের খণ্ড দেহাবশেষের উপর বেঁচে থাকে ও আত্মপ্রকাশ ও ডিম পাড়ার জন্য অনুকূল আবহাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। ডিম সবুজাভ বর্ণের হয় এবং পাতার নীচের তলে আঠাজাতীয় পদার্থ দিয়ে গুচ্ছাকারে আটকে থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কীটের কোন পাখা থাকে না, পেটের অগ্রভাগে হলুদ ও কালো দাগ দেখা যায়। শিশু ও পূর্ণাঙ্গ কীট উভয়েই পাতার ক্ষতিসাধন করে কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক কীট গাছের উপর যেখানে জন্মায় সেখানেই গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, অপরদিকে পূর্ণাঙ্গ কীট অন্য গাছে উড়ে যায় এবং চাষের গোটা জমি জুড়ে ক্ষতিসাধন করে। এ কীট এখনো পর্যন্ত সাধারণভাবে বেগুন গাছের বিশেষ ক্ষতিসাধক কীট বলে পরিচিত নয়। ফসলের ক্ষতি সাধারণতঃ কম হয় কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, এটাই মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। বেগুন গাছের পাশাপাশি, টম্যাটো, আলু, সূর্যমুখী, ভুঁই-তুলসী, তুলা, ঘুমপাড়ানি লতা ও weedy horsenettle গাছেও এ কীট বাসা বাঁধতে পারে।