ধান

ধানের পাতা মোড়ানো পোকা

Cnaphalocrocis medinalis

বালাই

সংক্ষেপে

  • এ কীটের শুঁয়োপোকা রেশমি সুতা দিয়ে ধান গাছের পাতাসহ নিজেদের মুড়িয়ে ফেলে।
  • পাতায় লম্বালম্বি সাদাটে ও স্বচ্ছ লম্বা দাগ দেখা যায়।
  • পাতার আগায় চাকতির মতো আকৃতির ডিম লক্ষ্য করা যায়।
  • এ পোকার মথের ডানায় বাদামী বর্ণের আঁকা-বাঁকা দাগ দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ধান

উপসর্গ

এ পোকাগুলোকে লিফ ফোল্ডারও বলে। প্রাপ্তবয়স্ক মথ আকারে হাতের আঙুলের নখের সমান এবং তাদের পাখায় বাদামী রঙের আঁকাবাঁকা দাগ রয়েছে। এরা পাতার ডগায় ডিম পাড়ে। শুঁয়োপোকা তাদের চারপাশে পাতা দিয়ে মুড়িয়ে ফেলে এবং পাতার কিনারাগুলোকে রেশমি সুতা দিয়ে একত্রিত করে ফেলে। এরকমভাবে সৃষ্ট নালিকাকার মোড়ানো পাতার ভিতরে থেকে এরা পাতা খায়, ফলে পাতায় লম্বালম্বি, সাদাটে ও স্বচ্ছ দাগের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো পাতার আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মুড়ে যায়। চাকতির মতো আকৃতির একটি করে ডিম কিংবা বিষ্ঠা জাতীয় পদার্থ দিয়েও এদের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ডিম পরজীবী ট্রাইকোগ্রামা চিলোনিস ( ১০০,০০০ পোকা /হেক্টর ) পাঁচ থেকে ছয়বার অবমুক্ত করলে খুব সাশ্রয়ী ও কার্যকরী হয়। সেইসাথে প্রাকৃতিক শত্রু যেমন মাকড়শা, পরজীবী বোলতা, শিকারি বিটল, ব্যাঙ, এবং ড্রাগন মাছি অথবা পোকাবিনাশী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ভাল কাজ করে। এলোমেলোভাবে নিমের পাতা জমিতে ছড়িয়ে দিলে প্রাপ্তবয়স্ক পোকা ডিম পাড়া থেকে বিরত থাকে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভাব্যক্ষেত্রে, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যদি ধানের ডিগ পর্যায়ে ( >৫০%) বেশি পাতা আক্রান্ত হয় তাহলে ফ্লুবেনডায়ামাইট ০.১মিলি বা ক্লোরান্ট্রানিলিপ্রোল ০.৩মিলি/লি স্প্রে করুন। ক্লোরপাইরিফস, ক্লোরান্ট্রানিলিপ্রোল , ইন্ডক্সাকার্ব, অ্যাজাডির‍্যাক্টিন, গামা বা ল্যামডা- সাইহ্যালোথ্রিন অতি আক্রমণে ব্যবহার করলে ভাল উপকারী। আলফা-সাইপারমেথ্রিন, অ্যাবামেকটিন ২% কীড়াপোকাকে মারতে সহায়ক। কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে যাতে পোকার উত্থান বেড়ে না যায়।

বিকল্প পদ্ধতিঃ এক লিটার জলে মনোক্রোটোফস (Monocrotophos) ১.৬ মিলিলিটার বা ক্লোরপাইরিফস (chlorpyriphos) ২.৫ মিলিলিটার বা অ্যাসিফেট (acephate) ১.৫ গ্রাম বা ক্লোরান্ট্রোনিলপ্রল (chlorantronilprol) ০.৩ মিলিলিটার বা ফ্লুবেনডায়ামাইড (flubendiamide) ০.২ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করুন। কুইনলফস (quinolphos) ও ফোরেট (phorate) ও কার্বোফুরন (carbofuron) স্প্রে করা থেকে বিরত থাকুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

ধানের পাতা মোড়ানো পোকা ধানের সকল প্রকার পরিবেশে পাওয়া যায়, তবে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় বর্ষা মরশুমে। অধিক আর্দ্রতা, জমির ছায়াযুক্ত স্থান, জমি ও চারপাশের আলের ঘাস জাতীয় গাছ এ পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। সেচ সুবিধা যুক্ত বিস্তৃত ধানের জমি, একই জমিতে একটানা ধান চাষ এবং যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহার পোকার পুনরুত্থানে বা বৃদ্ধিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। অত্যধিক পরিমাণ সারের ব্যবহার পোকার দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে এ পোকা সারা বছরই সক্রিয় থাকে, অন্যদিকে শীতপ্রধান দেশে মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এরা সক্রিয় থাকে। পোকার বৃদ্ধির জন্য ২৫-২৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ৮০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা অতি উপযুক্ত। অপেক্ষাকৃত কচি ও সবুজ ধানগাছ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • এ পোকার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিরোধী ধানের জাত ব্যবহার করুন।
  • পোকার উপস্থিতি জানার জন্য মাঠে তদারকি করুন।
  • চারা রোপণের সময় বেশি ঘন করে লাগানো যাবে না।
  • মরশুম জুড়ে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখুন।
  • সামঞ্জস্যপূর্ণ ধাপে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করুন।
  • পোকার মথ ধরার জন্য আলোর ফাঁদ ও আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করুন।
  • পোকা তাড়ানোর জন্য কাঁটাওয়ালা কাঠ ব্যবহার করুন।
  • জমি এবং জমির আল বরাবর ঘাস জাতীয় আগাছা দমন করতে হবে।
  • ধানের মুড়িচাষ পরিহার করুন অর্থাৎ কর্তনকৃত কুশি থেকে পরের মরশুমে আবার ধান করার জন্য রেখে দেওয়া।
  • কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত রাখুন যেন পরজীবী পোকা পাতা মোড়ানো পোকার সংখ্যা কমাতে পারে ( মাকড়শা, পরজীবী বোলতা , শিকারি বিটল , ব্যাঙ, এবং ড্রাগন মাছি)।
  • ধানের সাথে ফসলচক্র মেনে অন্য শস্য চাষ করতে হবে।
  • ফসল কাটার পর কর্ষণ করে ফসলের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করুন।
  • জমি কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে অনাবাদী ফেলে রাখতে হবে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন