ধান

পামরী পোকা

Dicladispa armigera

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতার উপরিভাগের মূল অক্ষ বরাবর সাদা, সমান্তরাল রেখা বা দাগ লক্ষ্য করা যায়।
  • অনিয়মিত সাদা দাগের আবির্ভাব ঘটে।
  • পাতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • গাঢ় নীল বা কালচে রঙের, কিছুটা বর্গাকৃতি গড়নের কাঁটাযুক্ত বিটল পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

ধান

উপসর্গ

প্রাপ্তবয়স্ক বিটল বাহ্যিকভাবে পাতার উপরের পৃষ্ঠের বহিঃত্বক খেয়ে থাকে, যার ফলে পাতার প্রধান অক্ষ বরাবর সাদা, সমান্তরাল রেখা বিশিষ্ট দাগ তৈরি হয়। এমনকি গুরুতর ভাবে আক্রমণের ক্ষেত্রে, শিরার ক্ষতি সাধিত হতে পারে, যার ফলে বড় ও সাদা ছোপ ছোপ অংশ দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পোকাকে সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত পাতার উপরের দিকে দেখা যায়। কীড়াপোকা পাতার দুই বহিঃত্বকের মধ্যবর্তী সবুজ কোষকলা খেয়ে থাকে , যার ফলে শিরার মধ্যবর্তী স্থানে সুড়ঙ্গ তৈরি হয় এবং সাদা মরা দাগের সৃষ্টি হয়। আলোর বিপরীত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পাতা দেখলে বা সুড়ঙ্গ বরাবর আঙ্গুল ঘষলে দাগ সনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং ধানের ক্ষেত সাদাটে ভাব ধারন করে। দূর থেকে দেখলে, গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত আগুনে পোড়া বলে মনে হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এ পোকার জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এখনও গবেষণাধীন। তবে বাংলাদেশ ও ভারতে এ কীড়ার পরজীবি পোকা (Eulophus femoralis) প্রচলিত রয়েছে এবং এরা এ অঞ্চলে পামরীর সমস্যা হ্রাস করতে পারে। দেশীয় প্রাকৃতিক শত্রু পোকার সংরক্ষণ এ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু ক্ষুদ্র বোলতা আছে যারা ডিম এবং লার্ভা ধরে খায় এবং রেডুভিড বাগ নামে পরিচিত কীট প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রমণ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের উপর আক্রমণকারী তিনটি ছত্রাক রয়েছে যারা এ পোকার গায়ে রোগ সৃষ্টি করে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভাব্যক্ষেত্রে সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গুরুতর ক্ষতির ক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত সক্রিয় উপাদানের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থগুলি পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে: কারবোফুরান, ক্লোরপাইরিফস, ম্যালাথিয়ন, সাইপারমেথ্রিন, এবং ফেনথোয়েট ।

এটা কি কারণে হয়েছে

পামরী পোকার (Dicladispa armigera) পূর্ণবয়স্ক এবং শুককীট উভয়ই ফসলের ক্ষতি করে। প্রাপ্তবয়স্ক পোকা শুধুমাত্র পাতার নিচের বহিঃত্বক বাকি রেখে পাতার উপরের পৃষ্ঠ চেঁছে খায়। সাধারণত কচি পাতার উপরের দিকে ক্ষুদ্র খাঁজের ভিতরে ডিম পাড়ে। এ গ্রাব জাতীয় কীড়াগুলো সাদাটে হলুদ এবং চ্যাপটা হয়। এ পোকা পাতার অক্ষ বরাবর সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাতার ভিতরের কোষকলা খায় এবং পরবর্তীতে পাতার অভ্যন্তরে পুত্তলি পর্যায় কাটিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয় । প্রাপ্তবয়স্ক পোকা কিছুটা বর্গাকার আকারের, দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ৩-৫ মি.মি. হয়। এ পোকা গাঢ় নীল বা কালো রঙের এবং সমস্ত শরীরে কাঁটা থাকে। ঘাসজাতীয় আগাছা, অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, ভারী বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা পামরী পোকার আক্রমণের সহায়ক।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সচরাচর ধানের এ পোকার কার্যকর কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই।
  • পাতার উচ্চ ঘনত্বের সাথে সংকীর্ণ আন্তঃচারা দূরত্ব বজায় রাখুন যা বেশী সংখ্যক পোকার উপদ্রব সহ্য করতে পারে।
  • অতিমাত্রার আক্রমণ এড়ানোর জন্য আগাম ফসল চাষ করুন।
  • ডিম পাড়া প্রতিরোধ করার জন্য চারার ডগা ছাঁটাই করুন।
  • জাল দিয়ে টেনে প্রাপ্তবয়স্ক পোকা সংগ্রহ করুন, বিশেষত সকালে যখন এরা কম নড়াচড়া করে।
  • ফসল বিহীন মরশুমে ধানের আবাদি জমি থেকে সব ধরনের আগাছা নির্মূল করুন।
  • আক্রান্ত পাতা এবং অন্যান্য অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলুন, কিংবা গভীর কাদায় পুঁতে ফেলুন।
  • উপদ্রুত এলাকায় অত্যধিক নাইট্রোজেন সারের প্রয়োগ এড়িয়ে চলুন।
  • কীটপতঙ্গের জীবনচক্র ভাঙ্গার জন্য ফসলচক্র প্রয়োগ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন