Scirpophaga incertulas
বালাই
ধানগাছের দৈহিক বৃদ্ধিকালে গাছের গোড়ায় অথবা কাণ্ডের মাঝামাঝি খাওয়ার কারনে ক্ষত তৈরি হলে কুশিতে মরাডিগের লক্ষণ ও প্রজননকালে (ফুল ধারণ পর্যায়ে ) আক্রমণ হলে সাদামাথা (সাদা অপূর্ণ শীষ) উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। ডিম ফুটে বের হওয়া কীড়া পাতার কাণ্ড-সংলগ্ন টিস্যু খাওয়ার পরে কাণ্ডের ভেতরে ঢুকে ভেতরের কোষকলা খাওয়া আরম্ভ করে। আক্রান্ত কাণ্ড এবং কুশিতে ক্ষুদ্র ছিদ্র, উচ্ছিষ্ট খাদ্য এবং পরিত্যক্ত বিষ্ঠার উপস্থিতি লক্ষণীয় l কীড়া এক মধ্যপর্ব থেকে পরবর্তী মধ্যপর্বে যেতে পারে। প্রায়শই কীড়ার খাওয়াজনিত উপসর্গ দৃশ্যমান হয়না, কারণ ধান গাছ অতিরিক্ত কুশি উৎপাদনের মাধ্যমে এ উপসর্গজনিত ক্ষতি পূরণ করে দেয়। কিন্তু এর ফলে গাছের শক্তি ক্ষয় হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।
চারা রোপণের পূর্বে পাতার অগ্রভাগ ছাঁটাই করে ডিমের গাদা বীজতলা থেকে মূলমাঠ পর্যন্ত ছড়ানোর সম্ভাবনা কমানো যায়। সেচের জলের স্তর বাড়িয়ে দিলে উদ্ভিদের নিচের অংশে জমাকৃত ডিমের গাদা নিমজ্জিত হয় এবং মাজরা পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক শিকারী পতঙ্গ ও প্রাণী ও পরজীবীর সংখ্যা অসংখ্য এবং এর মধ্যে পিঁপড়ে, বীটল, ঘাসফড়িং, মাছি, বোলতা, নেমাটোড, মাকড়, কেন্নো, পাখি, গঙ্গাফড়িং, মাকড়সা উল্লেখযোগ্য। রোপণের পরিকল্পনা নেওয়ার ১৫ দিনের দিন থেকে পাঁচ থেকে ছয়টি ট্রাইকোগ্র্যামা জাপোনিকাম অবমুক্ত করে (১০০,০০০/হেক্টর) ডিমের পরজীবায়ন করতে পারেন। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংগঠিত পণ্য প্রয়োগ করতে পারেন যা লার্ভার উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে (কাণ্ডে প্রবেশ করার আগে)। নিমের নির্যাস, ব্যাসিলাস থুরিঞ্জিয়েনসিসও এই একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্বদাই একটি সমন্বিত পদ্ধতির সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বিবেচনা করা প্রযোজন এবং একইসঙ্গে যদি সম্ভব হয় জৈবিক দমন শ্রেয়। বীজ বপনের ৩০ দিন পর্যন্ত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য চারাগাছের মূল ১২ থেকে ১৪ ঘন্টার জন্য 0.0২ শতাংশ ক্লোরপাইরিফস (chlorpyriphos)-এ ভিজিয়ে রাখুন। গুরুতর আক্রমণের ক্ষেত্রে (২৫-৩০টি পুরুষ মথ/ফাঁদ/সপ্তাহ) ফিপ্রোনিল,ক্লোরপাইরিফস বা ক্লোরান্ট্র্যানিলিপ্রোল সংগঠিত কীটনাশক হয় দানা হিসাবে প্রয়োগ করুন বা স্প্রে করুন
স্কিরপোফ্যাগা ইন্সারটুলাস নামের হলুদ মাজরা পোকার কীড়া দ্বারা গভীরজল সহিষ্ণু ধানে ক্ষতি হয়। এটি সাধারণত পাওয়া যায় একটানা বন্যা হয় এমন জলজ পরিবেশে বা পরিত্যক্ত ধানের নাড়ার ভিতর। দ্বিতীয় ধাপের কীড়াগুলো পাতার মোড়ানো অংশে নিজেদের আবদ্ধ করে নলাকার চোঙ তৈরি করে এবং মূল পাতা থেকে নিজেদের আলাদা করে চোঙসহ জলের পৃষ্ঠে পড়ে। তারপর শাখার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করে এবং কাণ্ডে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে যায়। অতিরিক্ত মাত্রার নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ পোকার প্রজনন বৃদ্ধির অনুকূল। নামলা রোপিত জমিতে আগাম রোপিত জমির তুলনায় হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি হয়। তুলনা করলে দেখা যায় আগাম রোপিত জমির ধানে ২০% ক্ষতি হতে পারে এবং নামলা রোপিত জমিতে ৮০% ক্ষতি হতে পারে।