Ostrinia nubilalis
বালাই
শুককীট গাছের মাটির উপরের সকল অংশের ক্ষতি সাধন করে। তারা প্রথমে পাতার গোড়া বা মধ্যশিরার ভেতরে খেয়ে থাকে এবং পরে নালী তৈরি করে গাছের গোড়ার কাণ্ড, সিল্ক ও কব (মোচা)-এর ক্ষতি সাধন করে। এরা জল ও পুষ্টি উপাদান বহনকারী আভ্যন্তরীণ কোষকলার ক্ষতি সাধন করে যার ফলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পাতার সংখ্যা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। গোড়ায় নালী তৈরী করার ফলে গাছের ধারণ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় যা ভূপাতিত হওয়ার জন্য অনুকূল। মোচায় ভেজা ফ্রাস (ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে উদ্ভিদের কাষ্ঠল অংশ গুঁড়ো, দানাদার হয়ে যাওয়া) ভর্তি গোল গর্ত থাকে, শস্য দানা নষ্ট হয়ে যায় এবং সেগুলো ঝরে যেতে পারে। এই ছিদ্রগুলো সুযোগসন্ধানী ছত্রাকের আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ক্রমাগত সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সেসব কোষকলা পচে যায়। পরবর্তীতে ছত্রাকের প্রস্তুতকৃত বিষাক্ত রাসায়নিক, ফলনের গুণগত মান খারাপ করে ফেলে।
শিকারী পোকা, পরবাসী পোকা ও জৈব কীটনাশকের সাহায্যে ভুট্টার ছিদ্রকারী পোকার সংখ্যা দমন করা সম্ভব। স্থানীয় শিকারী পোকার মধ্যে রয়েছে ইনসিডিউয়াস ফুলের গান্ধী পোকা (ওরিয়াসইনসিডিউয়াস), সবুজ লেসউইং এবং কতিপয় লেডিবার্ড। পাখির সাহায্যে শীত অতিবাহিতকারী শুককীটদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দমন করা সম্ভব। পরবাসী পোকার মধ্যে রয়েছে ট্যাকিনিড মাছি লাইডেলাথম্পসনি এবং এরিবোরাসটেরেব্রান্স, সিম্পেসিসভিরিডুলা ও ম্যাক্রোসেন্ট্রিসগ্র্যান্ডি প্রজাতির বোলতা। স্পাইনোস্যাড বা ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস সংঘটিত জৈব কীটনাশকও কার্যকরী।
ভুট্টার ছিদ্রকারী পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বহুসংখ্যক কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। সেসব সময়মত প্রয়োগ করতে হয়। গ্র্যানুলার ফরমুলেশনের কীটনাশক অধিক উপযোগী। পাতার গোড়ায় ও বর্ধনশীল মোচায় সাইফ্লুথ্রিন, এসফেনিয়ালারেট সমৃদ্ধ রাসায়নিক ছিটানো যেতে পারে। এ উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত পাইরিথ্রয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে।
শুককীট মাটিতে থাকা ফসলের অবশিষ্টাংশে শীত অতিবাহিত করে এবং বসন্তে বের হয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ পোকা নিশাচর হয়। পুরুষ মথ বাদামী রঙের হয়, শরীর চিকন এবং পাখা বিবর্ণ থেকে বাদামী রঙের হয় যাতে হলুদ রঙের চিরুনীর মত ছোপ থাকে। স্ত্রী মথ পুরুষ মথের চেয়ে আরও চিকন হয়, হলুদাভ বাদামী রঙের পাখা জুড়ে ঘন রঙের অনেকগুলো আঁকাবাঁকা ডোরা দাগ থাকে। সাধারণত যখন বাতাসের প্রবাহ থাকে না এবং উষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজ করে তখন তারা পাতার নিচের পাশে গুচ্ছাকারে সাদা রঙের ডিম পাড়ে। শুককীটের শরীর মসৃণ, লোমহীন, ঘন দাগযুক্ত ও ঘোলাটে সাদা থেকে বিবর্ণ গোলাপী রঙের হয়। তাদের মাথা ঘন বাদামী থেকে কাল রঙের হয়ে থাকে। তারা সারিবদ্ধ আগাছা এবং সয়াবিন, মরিচ ও টমেটোর মত বিকল্প আবাস খেয়ে থাকে। নিম্ন আর্দ্রতা, রাতের বেলায় নিম্ন তাপমাত্রা এবং অতি বৃষ্টি ছিদ্রকারী পোকার ডিম পাড়া ও বেঁচে থাকার জন্য হুমকি স্বরূপ।