অন্যান্য

কালো আঁশ পোকা

Saissetia oleae

বালাই

সংক্ষেপে

  • কীট নিঃসৃত মধুর নির্যাস পিঁপড়ে ও স্যুটি মোল্ড ছত্রাককে আকৃষ্ট করে।
  • বিকৃত হয়ে যাওয়া পাতা অকালে ঝরে পড়ে।
  • গাছের বৃদ্ধি থমকে যায়।
  • পাতা ও কাণ্ডের নিচে আঁশ পোকাদের থোকা বেঁধে থাকতে দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

6 বিবিধ ফসল
খুবানি
লেবু জাতীয় ফসল
কফি
জলপাই
আরো বেশি

অন্যান্য

উপসর্গ

অসংখ্য কালো আঁশ পোকা পাতা এবং কাণ্ড থেকে খায় এবং প্রচুর পরিমানে গাছের দেহরস শোষণ করে গাছকে দুর্বল করে দেয় এবং গাছের বৃদ্ধি এর ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যখন খায়, এরা প্রচুর পরিমাণে এক ধরণের চটচটে মধু নিঃসৃত করে যা ফোঁটা আকারে কাছাকাছি থাকা পাতা ও ফলের উপরে ঝরে পড়ে কালো রঙের ঘন আস্তরণ সৃষ্টি করে। এই মধু পিঁপড়েকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং দ্রুত স্যুটি মোল্ড ছত্রাকের কলোনী তৈরি করতে পারে যা শর্করা জাতীয় উপাদানের উপরে বেড়ে ওঠে। এই কারণের ফলে সালোকসংশ্লেষের হার কমে যায়। ভীষনভাবে আক্রান্ত পাতা অকালে গাছ থেকে ঝরে পড়তে পারে। বয়স্ক পোকা দৃষ্টি-আকর্ষণকারী গাঢ় ধূসর বা বাদামী থেকে কালো রঙের হয় এবং পাতা ও কাণ্ডের নিচে থোকা বেঁধে থাকে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

কিছু পরজীবি বোলতা, যেমন স্কুটেল্লিস্টা ক্যারিউলিয়া, ডাইভারসিনারভাস এলিগ্যান্স এবং মেটাফাইকাস হেলভোলাস এবং সেই সঙ্গে গুবরে পোকা (চিলোসোরাস বাইপুস্তুল্যাটাস) সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা আঁশ পোকার জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। এই পোকার স্বাভাবিক শত্রুর বাসস্থান রক্ষা করতে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করুন। কালো আঁশ পোকার বিরুদ্ধে ক্যানোলা তেল বা ছত্রাক থেকে প্রস্তুত জৈব কীটনাশকও ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। উভয় প্রান্তে আঠা আছে এমন ফাঁদ ব্যবহার করুন এবং বুকে হেঁটে চলে এমন কীট অবস্থান করছে কিনা তা গাছের উপরের দিকের পত্রপল্লব ছেঁটে দিয়ে চিহ্নিত করুন। যদি আক্রমণের পরিমান বেশী হয়, সংকীর্ণ- পরিসরযুক্ত খনিজ সাদা তেল স্প্রে করুন বা পতঙ্গের বৃদ্ধি রোধকারী পাইরিপ্রক্সিফেন ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্লোরোপাইরিফস ও কার্বাইলযুক্ত স্প্রে-ও ব্যবহার করা যেতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

স্ত্রী আঁশ পোকা ৫ মিমি. পর্যন্ত ব্যাসযুক্ত হতে পারে এবং এদের গায়ের রঙ হয় গাঢ় বাদামী বা কালো এবং পিঠের উপরে সুস্পষ্ট H-আকারের শির থাকে। এরা শরৎ ঋতুর শেষভাগে সরু সরু ডালপালা ও শাখাপ্রশাখার দিকে সরে যায় এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে। তরুণ বয়সী আঁশ পোকা হলুদ থেকে কমলা রঙের হয় এবং এদের গাছের পাতা ও ডালপালার উপরে দেখা যায়। এরা হেঁটে হেঁটেই চারিদিকে ছড়িয়ে যায় বা মাঝেমাঝে বাতাসে ভর করেও দূরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতার উপরের পৃষ্ঠের শিরা বরাবর বা কচি মুকুলের উপরে অবস্থান করে। এরা গাছের ঘন এবং ছাঁটাই করা হয়নি এমন অংশে অবস্থান করে এবং তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তর দিক বরাবর। এর বিপ্রতীপে, খোলামেলা, গাছের মধ্যে দিয়ে বায়ু চলাচল করে এমন গাছ আঁশ পোকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমনটা দেখা যাওয়া বিরল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পোকার বছরে একটি অথবা দুটি প্রজন্মের দেখা মেলে, এবং জলসেচ করা হয় এমন বাগানে দুটি প্রজন্মের দেখা মেলে। বিকল্প আবাসের মধ্যে লেবু, পেস্তা, ন্যাশপাতি, আঁটিযুক্ত ফল এবং ডালিম প্রধান।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রতিদিন অলিভ গাছকে নিরীক্ষা করে কালো আঁশ পোকার আক্রমণের কোন লক্ষণ দেখা যায় কিনা তা দেখুন।
  • গাছের উপরের পত্রপল্লব ছেঁটে দিলে গাছের ডালপাতার মধ্যে বায়ু চলাচলের উন্নতিসাধন হয় এবং কালো আঁশ পোকার জীবনচক্রকে বাধা দেয়।
  • হালকা ধরনের আক্রমণের ক্ষেত্রে, হাতে করে গাছের দেহাংশ সরিয়ে নিয়ে পোকাকে পিষে মেরে ফেলুন।
  • আক্রান্ত উদ্ভিদের দেহাংশ অপসারিত করে পুড়িয়ে ফেলুন বা বাগান থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে মাটির গভীরে পুঁতে দিন।
  • অতিরিক্ত সারের ব্যবহার পরিহার করুন কারণ তা এই পোকার স্বাভাবিক শত্রুর জনসংখ্যাকে মেরে ফেলে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে।
  • গাছের দেহকাণ্ডকে ঘিরে আঠালো কোন উপাদান জড়িয়ে দিলে তা পিঁপড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
  • গাছগুলির পরস্পরের মধ্যে সেতু রচনা করে যাতে চলাফেরা না করা যায় তার জন্যে পর্যাপ্তভাবে ডালপালা ছাঁটাই করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন