আঙুর

আঙ্গুরের পাতামোড়ানো পোকা

Sparganothis pilleriana

বালাই

সংক্ষেপে

  • ফুলের কুঁড়ি ফাঁপা হয়ে যায়।
  • পাতা, মঞ্জরী ও ফুল কীটের ভক্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • পাতা বা ফল সিল্কের সুতো দিয়ে তৈরী জাল দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে আটকানো থাকে।
  • পূর্ণাঙ্গ মথের খড় রঙের হলুদ অগ্রবর্তী ডানা আছে যাতে ৩টি লালচে বাদামী আড়াআড়ি রেখা দেখা যায় এবং সমভাবে বিস্তৃত ধূসর বর্ণের পিছনের পাখনা দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

আঙুর

উপসর্গ

Sparganothis pilleriana-র শুঁয়োপোকা বংশবিস্তারকালে ফুলের কুঁড়িকে প্রথমে ভেদ করে এবং পরে ফাঁপা করে দেয়। কুঁড়ি যখন স্ফুটনোন্মুখ হয় তখন এই শুঁয়োপোকা পাতায়, মঞ্জরী ও ফুলে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। কিছু পাতা সিল্কের সুতো দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে জালবদ্ধ অবস্থায় থাকে, এই সমস্ত কাঠামোকে আশ্রয়স্থান হিসাবে ব্যবহার করে কীড়া (লার্ভা) বের হয়ে আসে এবং অন্য পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। চরম উপদ্রবের সময়, পত্রফলকের তলদেশ অনেকটা রূপালী দেখতে লাগে এবং ফুলের পাঁপড়ি লালচে আভাযুক্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত মঞ্জরীর আগা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারা যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছায়, এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে পত্রমোচন দেখা যায়। শাখাও এই পতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা পায়না, যার ফলে এক বিশাল সংখ্যক ফল সিল্কের সুতো দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে জাল দিয়ে যুক্ত থাকে। যদি শুঁয়োপোকার কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, উদাহরণ হিসাবে পাতা দিয়ে তৈরী বাসা খুলে যাওয়া, এরা না থেমে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং মাটিতে এদের দেহনিঃসৃত সুতো দিয়ে নিজের চারিদিকে গুটি তৈরী করে এর মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখবে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

Sparganothis pilleriana- স্বাভাবিক শত্রুর মধ্যে পরজীবি বোলতা ও মাছি, লেডিবাগ ও কিছু পাখির দীর্ঘ তালিকার কথা উল্লেখ করা যায়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার করে এই সমস্ত উপকারী প্রজাতির জীবনচক্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। স্পিনোস্যাড সমৃদ্ধ জৈব মিশ্রণও ব্যবহার করা যায়। বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা ( Beuveria bassiana) নামক ছত্রাকের দ্রবণও কীড়া (লার্ভা)-র উপর প্রয়োগ করলে তা কার্যকরী হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বদা জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করুন। ক্লোরোফিরিফস (clorpirifos), এমামেকটিন (emamectin), ইন্ডোক্সাকার্ব (indoxacarb ) বা মেটোক্সিফেনোসিড (metoxifenocid ) সমৃদ্ধ কীটনাশক সময়মতো স্প্রে করলে এই পতঙ্গের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এটা কি কারণে হয়েছে

Sparganothis pilleriana নামক মথের শুঁয়োপোকা এই রোগের লক্ষণের জন্য দায়ী। পূর্ণাঙ্গ মথের বিচালির মতো হলুদ রঙের সামনের দিকের পাখা আছে যাতে তিনটি লালচে বাদামী আড়াআড়ি রেখা থাকে এবং সমভাবে বিস্তৃত ধূসর ও সুন্দর ঝালর বিশিষ্ট পিছনের দিকের পাখা আছে। বছরে একটাই প্রজন্মের উৎপত্তি হয় ও আঙ্গুরবাগিচার অন্যান্য মথের সঙ্গে তুলনা করলে এরা কম তাপমাত্রাযুক্ত আবহাওয়া পছন্দ করে। স্ত্রী পতঙ্গ আঙ্গুর গাছের পাতার উপর তলে গোধূলিবেলায় একটাই ডিম পাড়ে। শুঁয়োপোকার রঙ ধূসর বর্ণের, সবুজাভ অথবা লালচে হয় এবং প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এবং গোটা দেহ রোঁয়ায় ভর্তি থাকে। আঙ্গুরগাছের বল্কলের নীচে, সাহায্যকারী দন্ড বা এই শুঁয়োপোকার অন্যান্য আশ্রয়দাতার উপর এরা সিল্কের সুতার সাহায্যে গুটি তৈরী করে গোটা শীতকালটাই কাটিয়ে দেয়। মধ্য বসন্তে জন্মের সময় থেকে, শুঁয়োপোকা ৪০ থেকে ৫৫ দিন ধরে খেয়ে চলে এবং সিল্কের সুতোর সাহায্যে পরস্পরের সঙ্গে আটকানো পাতার উপরে পুত্তলি অবস্থা শুরু না করা পর্যন্ত এই খাওয়া চলতে থাকে। ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে মধ্য গ্রীষ্মে মথ ডিম পাড়ে। Sparganothis pilleriana ১০০টিরও বেশী পরাশ্রয়ী অন্যান্য ফলের গাছে যেমন কালোজাম, কাঠবাদাম, আঁটিযুক্ত ফলের প্রজাতি, নাসপাতি আকারের হলুদ ফল ও কালো বা লাল রঙের একধরনের ফলের গাছকে আক্রমণের শিকার করতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • বসন্তের প্রথম থেকেই আঙ্গুরবাগিচায় Sparganothis pilleriana-র লক্ষণ দেখা যায় কিনা তার তদারকি করুন।
  • চাষের জমিতে প্রথাগত যে কাজগুলি করতে হবে তা হলো যে কাণ্ড ও শাখার ছাল শুকিয়ে গিয়েছে তা পরিষ্কার করে ফেলা, উদ্ভিদের জন্য অবলম্বনের ব্যবহার, আঙ্গুরবাগিচার চারিদিক ঘিরে যদি বনাঞ্চল থাকে তবে তা পরিষ্কার করা ও বনজঙ্গল কাটা, আগাছা নিয়ন্ত্রন, স্বাভাবিক শিকারী পতঙ্গের জন্য মধু তৈরী করে এমন উদ্ভিদের বীজ বপন করা।
  • ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করেও এই পতঙ্গের সংখ্যা গণনা এবং এদের যৌন আচরণকে ব্যাহত করা যায়।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন