Eupoecilia ambiguella
বালাই
সদ্যোজাত কীড়া (লার্ভা) ফুলের কুঁড়িতে ছিদ্র করে অভ্যন্তরভাগ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করায় যে ক্ষতির সৃষ্টি হয় তার দরুন ফল বাজারজাতকরণের অযোগ্য হয়ে পড়ে। খাদ্য খাওয়ার প্রথম পর্যায়ে, কয়েকটি কুঁড়ি একসঙ্গে সিল্কের সুতো দিয়ে সংযুক্ত থাকে যা সাধারণতঃ মাকড়সার জালের মতো ঘন বুনোটযুক্ত আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এবং কীড়া (লার্ভা) এখানেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। শুঁয়োপোকা আর একটু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আরো সমস্যার সৃষ্টি করে কারণ এদের আশ্রয়স্থলকে ঘিরে যে আঙ্গুর ফল গাছ থেকে ঝুলে থাকে এরা এই ফল খেয়েই জীবনধারণ করে এবং প্রচুর পরিমানে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। একটা কীড়া (লার্ভা) প্রায় ১২টি পর্যন্ত ফল খাওয়ায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সৃষ্টি তো হয়ই, সেইসঙ্গে উদ্ভিদের যে অংশ থেকে খাদ্য সংগৃহীত হয় সেখানে বট্রিটিস সিনেরিয়া (Botrytis cinerea) নামক ছত্রাক যদি অতিরিক্ত হিসাবে সংক্রমণ সৃষ্টি করে তাহলে দুইয়ের মিলনে আরো জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফলের সংস্পর্শে যে সুস্থ ফলগুলি থাকে কালক্রমে তা বাদামী বর্ণের ও ছত্রাক সংক্রামিত হয়ে পড়ে। ইউরোপ ও এশিয়ার মদ্য প্রস্তুতকারক অনেক অঞ্চলে এই মথকে অন্যতম ক্ষতিকারক পতঙ্গ হিসাবে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
ট্রাইকোগ্রামা ক্যাকোসিয়া (Trichogramma Cacoecia) ও টি. এভানিসেন্স (T. evanescens) নামক পরজীবি বোলতা এই পতঙ্গের ডিমের উপরে ডিম পাড়ে এবং এর ফলে আঙ্গুরবাগিচায় আঙ্গুর বাড মথের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। বহু উদ্দেশ্যসাধক কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারে যাতে এই পতঙ্গের স্বাভাবিক শত্রুর বংশবৃদ্ধির হার না কমে যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। ইউপোসিলিয়া অ্যাম্বিগুয়েল্লার বিরুদ্ধে কার্যকরী হয় এমন জৈব কীটনাশকের মধ্যে স্পিনোস্যাড ও সাধারণ পাইরেথ্রিন সমৃদ্ধ দ্রব্য উল্লেখযোগ্য। কতবার স্প্রে প্রয়োগ করতে হবে তা সংক্রামিত ফলের পরিমানের উপর নির্ভর করে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ইউপোসিলিয়া অ্যাম্বিগুয়েল্লা-র বিরুদ্ধে সিন্থেটিক পাইরেথ্রিন ও কার্বাইল সমৃদ্ধ কীটনাশক কার্যকরী হয়। যেখানে এই পতঙ্গের উৎপাত স্থায়ী সেখানে গাছ ফুল ফোটার পরেই কীটনাশকের প্রয়োগ প্রয়োজন হতে পারে এবং গ্রীষ্মের শেষভাগে তা প্রয়োগের মাধ্যমে এই পতঙ্গের দ্বিতীয় প্রজন্মকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কতবার স্প্রে প্রয়োগ করতে হবে তা সংক্রামিত ফলের পরিমানের উপর নির্ভর করে নির্ণয় করা হয়। শুঁয়োপোকার উদ্ভব তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপরে চূড়ান্তভাবে নির্ভরশীল।
আঙ্গুর বাড মথ ইউপোসিলিয়া অ্যাম্বিগুয়েল্লার শুঁয়োপোকার ভক্ষণজনিত কার্যকলাপ এবং বট্রিটিস সিনেরিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর সমাবেশকে প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। পূর্ণাঙ্গ মথের হলুদ-বাদামী রঙের সামনের পাখায় সুস্পষ্ট কালচে বাদামী রঙের পটি দেখা যায় এবং পিছনের পাখা ধূসর বর্ণের ও ঝালর বসানো হয়। স্ত্রী পতঙ্গ বসন্তের শেষভাগে ফুলের কুঁড়ি বা পত্রমঞ্জরীর উপরে বা মধ্য গ্রীষ্মে আঙ্গুর ফলের উপরে একটি ডিম (প্রতি স্ত্রী পতঙ্গ পিছু ১০০টি করে ডিম) পাড়ে। ৮ থেকে ১২ দিন পরে কীড়া (লার্ভা) ডিম ফুটে বের হয়ে আসে। এদের বর্ণ হয় বাদামী-হলুদ এবং দৈর্ঘ্যে ১২ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সারা দেহে বিক্ষিপ্তভাবে রোম থাকে। গাছের বাকলের ফাটলের মধ্যে অথবা অন্য সুবিধাজনক স্থানে থেকে পিউপা গোটা শীতকালটাই কাটিয়ে দেয়। এই মথের জীবনচক্র তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপরে দারুনভাবে নির্ভর করে। সাধারণতঃ এদের ঠান্ডা ও আর্দ্র অঞ্চলে দেখা যায় এবং প্রতি বছরে মাত্র দু’বার এরা ডিম পাড়ে। এদের বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭০% বা তার বেশী এবং ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। আপেক্ষিকভাবে কম আর্দ্রতা ও তাপমাত্রায় ডিম ফুটে কীড়া (লার্ভা) বের হতে পারে না।