Icerya purchasi
বালাই
প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আঁশ পোকা দলবদ্ধভাবে উদ্ভিদের রস চুষে খায় এবং প্রচুর পরিমাণ মধুরস উৎপাদন করে। পোকাগুলো আক্ষরিকভাবেই আক্রান্ত উদ্ভিদের কাণ্ড, পাতা, পুষ্পমঞ্জরী এবং শাখা প্রশাখা আবৃত করে ফেলে। উদ্ভিদের রস ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাওয়ার কারণে পাতা নেতিয়ে যায় এবং শাখা বের হওয়ার পরপরই শুকিয়ে যায়। পোকার খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণ মধুরস নিঃসরণ করে যা পাতা আবৃত করে ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে কালো বর্ণের স্যুটি মোল্ড ছত্রাক জন্ম নেয়। আক্রমণ তীব্র হলে পাতা ঝরে যায় এবং শাখা প্রশাখা শুকিয়ে মারা যায়। সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হয় বলে উদ্ভিদের জীবনীশক্তি হ্রাস পায় এবং ফলের গুণাগুণ ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।
এ পোকার উল্লেখযোগ্য শত্রু পোকা হলো লেডিবার্ড বিটল এবং লেসউইং বাগ। তবে নির্দিষ্ট শিকারী পোকা হলো ভেডালিয়া বিটল পোকা রোডোলিয়া কার্ডিনালিস। এ পোকার অল্পবয়স্ক কীড়া আঁশ পোকার ডিম খেয়ে থাকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক ভেডালিয়া আঁশ পোকাকে ভক্ষণ করে। পরজীবী মাছি ক্রেপটোশেটাম আইসারিয়া এ পোকার ওপর অত্যন্ত কার্যকরভাবে পরজীবীতা সৃষ্টি করতে পারে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। আঁশ পোকা ও ক্রলার পোকার দেহ পুরু মোম দিয়ে আবৃত থাকায় রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তেমন কার্যকর নয়। অ্যাসিটামিপ্রিড, ম্যালাথিয়ন এবং কার্বারিল সমৃদ্ধ কীটনাশক যথাযথ সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। ডিম পাড়ার পরপরই পেট্রোলিয়াম তেল স্প্রে করলে পোকা অপসারিত হয় এবং উদ্ভিদের কোষকলা ভক্ষণ থেকে বিরত থাকে।
আইসারিয়া পারকেছি প্রজাতির কটনি কুশন আঁশ পোকা কর্তৃক উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুর রস শোষণ করে খাওয়ার ফলে লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিছু ভূ-তাত্বিক এলাকায় অন্যান্য প্রজাতিও দেখা যায় যেমন প্লানোকক্কাস সাইট্রি। পোকাটি দৈর্ঘ্যে ১০-১৫ মি.মি. এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ২ মাসের মধ্যে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে। স্ত্রী পোকা ১০০০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলো পোকার পিঠে তুলোর মত থলের ভেতর আবৃত থাকে এবং স্ত্রী পোকা সাধারণতঃ পাতায় ডিম পাড়ে। সদ্যোজাত পোকা প্রথমে শিরা বরাবর পাতা এবং কচি শাখার রস চুষে খায়। পোকার বয়স বাড়তে থাকলে এদের কাণ্ডে, শাখায় এবং কোন কোন সময়ে ফলেও দেখা যায়। এরা ভেজা ও ঠাণ্ডা পরিবেশে এবং ঘন গাছগাছালি পছন্দ করে। পোকাগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকলে এদের দেহ পুরু, তুলোর মত প্রলেপ দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। যেসব পিঁপড়া মধুরস খায় সেগুলো প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক আঁশ পোকার প্রতি আকৃষ্ট হয় বলে প্রাকৃতিক শত্রু পোকার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। এ পোকার উল্লেখযোগ্য বিকল্প আবাস হলো মোরা, একাসিয়া এবং রোসমেরিনাস উদ্ভিদ, তবে এরা বিভিন্ন ফলজ উদ্ভিদ এবং বন্য গাছপালা এমনকি শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদকেও আক্রান্ত করতে পারে।