Anthonomus grandis
বালাই
বীজকোষের মধ্যে থাকা কীট ফুলের অংশ বা ফলের অংশবিশেষ খেয়ে বেঁচে থাকে এবং মাঝে মাঝে পত্রবৃন্ত পর্যন্ত খেয়ে থাকে এবং বৃদ্ধি ব্যহত করে। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়কে চেনা যায় ফুলের কুঁড়ির ধারে ছোট্ট ছিদ্র বা ডিম্বানুর ধারে ক্ষুদ্র আঁচিলের মতো স্ফীতির মাধ্যমে। ফুলের কুঁড়িতে ক্ষতিসাধনের ফলে ফুল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং এর ফলাফল হিসাবে ফুল নষ্ট হয়ে যায় বা অকালে ঝরে পড়ে বা ক্ষুদ্র বীজকোষের (এর মধ্যেই লার্ভা থাকে) জন্ম দেয়। বৃহৎ, ছিদ্রযুক্ত বীজকোষ সাধারণতঃ গাছেই থেকে যায় এবং প্রস্ফুটিত হয় না। এর বিপরীতক্রমে, এই বীজকোষ সুবিধাভোগী জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে যা এই বীজকোষকে পচনশীল করে তোলে। উদ্ভিজ্জ বৃদ্ধির সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক কীট পত্রবৃন্ত খেয়ে জীবনধারণ করে এবং এর ফলে পাতা তাজাভাব হারিয়ে ফেলে ও শুষ্ক হয়ে যায় এবং অবশিষ্টাংশ গাছের ডালেই আটকে থাকে। এই বৈশিষ্ট্য সাধারণভাবে "black flags" নামে পরিচিত।
পরজীবি পতঙ্গ যেমন ক্যাটোলাক্কুস গ্র্যান্ডিস (Catolaccus grandis)-কে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া দেওয়া যেতে পারে বা কীটের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। উপরন্তু, বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা, ব্যাকটেরিয়াম ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (bacterium Bacillus thuringiensis ) ছত্রাক বা চিলো ইরিডেসেন্ট ভাইরাসের [Chilo iridescent virus (CIV)] উপর ভিত্তি করে তৈরী জৈব-কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। কৃত্রিম পাইরিথ্রয়েড (pyrethroid ) কীটনাশক এবং ডেলটামেথ্রিন (deltamethrin ) ও ফিপ্রোনিল (fipronil )-এর মতো দ্রব্য ব্যবহার করে বীজকোষের কীটকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে কীটকে নিয়ন্ত্রণ ও এর উপরে নজরদারি করা যায় (কীটনাশক বা বায়ো-এজেন্টের সঙ্গে যুক্ত করে)।
বোল উইভিল (boll weevil) এনথোনোমাস গ্র্যান্ডিস নামক প্রাপ্তবয়স্ক কীট ও শুককীট উভয়ের দ্বারাই ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পোকার প্রায় ৬ মিলিমিটার লম্বা সরু শুঁড় থাকে এবং কালো, বাদামী-লালচে থেকে বাদামী বা প্রায় কালো এই ধরনের বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। এরা গোটা শীতকালটা ভালোভাবে জল নিকাশী ব্যবস্থা সম্পন্ন জায়গায় বা তুলাক্ষেতের কাছেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় কাটিয়ে দেয়। দেহের এই স্থগিত বৃদ্ধির সময়কালের পরে, এরা বেড়ে উঠতে থাকে এবং বসন্তের প্রথমকাল থেকে শুরু করে গ্রীষ্মের মধ্যভাগ পর্যন্ত তুলাক্ষেতে খুবই সক্রিয় থাকে, বিশেষ করে বসন্তের শেষভাগে যখন বীজকোষগুলি বেড়ে উঠতে থাকে তখন এদের সক্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। বেড়ে ওঠা বীজকোষগুলির উপরে স্ত্রী গুবরে পোকা ডিম পাড়ে, সাধারণভাবে একটা করে। মাখনের মতো সাদা, পা-বিহীন, C-আকৃতির লার্ভাগুলি এই বীজকোষের থেকেই প্রায় ১০ দিন ধরে খাদ্য খেয়ে চলে এবং পরে সেখানেই পিউপা অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। গ্রীষ্মকালে এদের জীবনচক্র ডিম থেকে শুরু হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক ভোমরা পোকায় পরিণত হতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে। এই বোল উইভিল (boll weevil) নামক ভোমরা পোকা বছর পিছু ৮ থেকে ১০টি প্রজন্মের সাক্ষী থাকতে পারে।