Elasmopalpus lignosellus
বালাই
ইলাসমোপালপাস লিগনোস্যালাস (Elasmopalpus lignosellus) পোকার কীড়া ভুট্টার পাতাও খেতে পারে কিন্তু উল্লেখযোগ্য ক্ষতি তখনই হয় যখন কীড়া চারা অবস্থার শেষের দিকে কাণ্ড এবং ডালপালার ভিতরে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এরা কাণ্ডের ভিতরের কোষ খায় এবং প্রচুর পরিমাণ কীড়ার বিষ্ঠা দিয়ে সেই শূন্য জায়গা ভর্তি করে যেটি সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখে লক্ষণীয় হয়। এ উপসর্গসমূহ “মৃত হৃদয়” লক্ষণ নামেও পরিচিত। সাধারণত ভুট্টা গাছগুলো বিকৃতাকার ধারণ করে ও স্বল্প সংখ্যক মোচাবিশিষ্ট খর্বকায় হয়। ভুট্টা গাছে জল এবং পুষ্টি পরিবহন বাধা পাওয়ায় গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে যায় এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে গাছ হেলে পড়ে এবং মারা যায়। ভুট্টার মাজরা পোকাগুলো উষ্ণ, শুষ্ক আবহাওয়ায় খাপ খাওয়ানোর উপযোগী, তবে অস্বাভাবিক উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
এ পোকার অনেক প্রাকৃতিক শত্রু থাকা সত্বেও যেহেতু কীড়া ভুট্টার কাণ্ড এবং ডালপালার ভিতরে বাসা বাঁধে সেহেতু এ কীড়াগুলো খুব সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কিছু ক্ষেত্রে পরজীবী ব্রাকোনিড বোলতা ওরগিলাস ইলাসমোপালপি (Orgilus elasmopalpi) এবং চিলোনাস ইলাসমোপালপি (Chelonus elasmopalpi) কীড়ার সংখ্যাবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। জৈব কীটনাশক যেমন নিউক্লিয়ার পলিহেড্রোসিস ভাইরাস(NPV) , এসপারজিলাস ফ্ল্যাভাস ছত্রাক এবং বিউভারিয়া ব্যাসিনিয়া (Beauveria bassiana) ছত্রাক অথবা ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (Bacillus thuringiensis) ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ কীটনাশক প্রয়োগ করলেও এ পোকার নিয়ন্ত্রণ সহজতর হয়।
জমির পরিখায় দানাদার কিংবা তরল কীটনাশক প্রয়োগ করলে কীড়া মারা যায়। তবে ভুট্টার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো কার্বোসালফান (carbosulfan), কার্বোফুরান (carbofuran), টায়োডিকার (tiodicar), ফুরাটিয়োকার্ব (furatiocarb) সহযোগে কীটনাশক প্রয়োগ করা। পাতায় ক্লোরোপাইরিফস (chlorpyriphos), কার্বোফুরান (carbofuran) কিংবা টায়োডিকার্ব (tiodicarb) প্রয়োগ করলেও এ পোকার প্রকোপ কমে।
অঞ্চল এবং পরিবেশ ভেদে প্রাপ্তবয়স্ক মথের দেহের রঙে ভিন্নতা থাকে। পুরুষ মথের সামনের পাখাজোড়া বাদামী-হলুদ বর্ণের এবং পাখায় ঘন কালো দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে দাগগুলো পাখার প্রান্তের দিকে ঘনভাবে সংযুক্ত থাকে এবং সেখানে প্রশস্ত কালো রঙের ব্যান্ড দেখতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে স্ত্রী মথগুলোর সামনের জোড়া পাখা লালচে অথবা বেগুনি আঁশযুক্ত কয়লার মত কালো বর্ণের হয়। তবে উভয়ের পিছনের জোড়ার পাখাই ঈষৎ রূপালি এবং স্বচ্ছ। স্ত্রী পোকাগুলো কাণ্ডের গোড়ায় কিংবা শুকনো ভূ-পৃষ্ঠে সবুজাভ বর্ণের ডিম পাড়ে। পোকার কীড়া সরু এবং লোমযুক্ত এবং দেহ বেগুনি এবং সাদা রঙের ব্যান্ড দিয়ে আবৃত। এরা বিরক্ত হলে কিংবা বাধাপ্রাপ্ত হলে হিংস্রভাবে দ্রুততার সাথে নাচতে থাকে। এরা মাটির পৃষ্ঠের ঠিক নিচেই রেশমি নালা কিংবা সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাস করে এবং সেখান থেকে বের হয়ে মূল এবং গাছের কোষ কলা খায়। শুষ্ক মৌসুম অথবা সু-নিষ্কাশিত বেলে মাটি এ পোকার জন্য উপকারী। জমির ধারণ ক্ষমতার ৮০ শতাংশ ফসলে জলসেচ দিলে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।