অন্যান্য

দানাশস্যের বিটল পোকা

Oulema melanopus

বালাই

সংক্ষেপে

  • পোকায় খাওয়া পাতার উপরের পৃষ্ঠে সরু, লম্বা, সাদা দাগ পড়ে।
  • দূর থেকে আক্রান্ত জমি দেখতে শুষ্ক এবং জীর্ণ মনে হলেও, এ পোকা কর্তৃক সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গুরুতর নয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

4 বিবিধ ফসল

অন্যান্য

উপসর্গ

যদিও এ বিটল পোকা যব, বার্লি এবং রাই প্রভৃতি দানাশস্যের প্রতি একটা অনুরক্তি আছে তবুও এর সবচেয়ে উত্তম আবাস হলো গম। এ পোকার অনেকগুলো বিকল্প আবাসও রয়েছে যেমন ভুট্টা, জোয়ার এবং ঘাস। পোকার কীড়া পাতার উপরের পৃষ্ঠ খেয়ে ফেলে এবং পুরো জীবনচক্র ধরেই শস্যের ক্ষতি করে। পোকাগুলো বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে পাতা খেয়ে পাতার নিচের ত্বক পর্যন্ত পাতার কোষকলা অপসারণ করে। ফলে পাতায় সরু, লম্বা এবং সাদা বর্ণের দাগ তৈরি হয়। আক্রমণ তীব্র হলে দাগের সংখ্যা বেশি হয়। যা'হোক, প্রাপ্তবয়স্ক বিটল পাতা খেতে খেতে অন্য জমিতে চলে যায়, এ কারণে একটি মাত্র জমিতে পোকার আক্রমণ বিরল। দূর থেকে আক্রান্ত জমি শুষ্ক এবং জীর্ণ মনে হলেও, পুরো জমির ৪০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিছু কিছু শস্য জন্মানো এলাকায় এ পোকাটি একটি উল্লেখযোগ্য ও বহুবর্ষজীবী পোকা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

স্টেইনারনেমা (Steinernema) কৃমির কিছু প্রজাতি মাটিতে শীতনিদ্রাকালীন প্রাপ্তবয়স্ক পোকাকে আক্রমণ করতে পারে। ফলে পোকাগুলো বসন্তকালে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। যদিও এদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাপমাত্রা ভেদে ভিন্নতর হয়। কিছু লেডি বার্ড বিটল পোকাও এ পোকার ডিম এবং কীড়া শিকার করে। হায়ালোমায়াডেস ট্র্যায়াঙ্গুলার (Hyalomyodes triangulifer) প্রজাতির ট্যাকিনিড মাছি বয়স্ক পোকার ওপর পরজীবিতা সৃষ্টি করতে পারে এবং বাণিজ্যিকভাবে এ পোকা দমনে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে এ পোকার কীড়ার ওপর ডায়াপারসিস কার্নিফার (Diaparsis carnifer), ল্যামোফ্যাগাস কারটিস (Lemophagus curtis), টেট্রাসটিকাস জুলিস (Tetrastichus julis) প্রভৃতি পরজীবি বোলতা পরজীবিতা করতে পারে। পরিশেষে অ্যানাফিস ফ্ল্যাভিপেস (Anaphes flavipes) নামক পরজীবি পোকা, এ পোকার ডিমের ওপর পরজীবিতা সৃষ্টি করে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গামা-সাইহেলোথ্রিন (Gamma-cyhalothrin) সমৃদ্ধ কীটনাশক প্রয়োগ করলে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায় কারণ এটি পোকার ডিম এবং কীড়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। যখন স্ত্রী পোকা গুলো ডিম পাড়তে শুরু করে কিংবা ৫০ শতাংশ ডিম ফুটে কীড়া বের হয়, তখনই স্প্রে করা উচিৎ। যথেচ্ছ কীটনাশক প্রয়োগ করলে পোকার সংখ্যা বেড়ে যায় কারণ এতে প্রাকৃতিক শত্রু মারা যায়। ইউলেমা মেলানোপাস (O. melanopus) এর বিরুদ্ধে অন্যান্য কীটনাশক যেমন অর্গানোফসফেট (ম্যালাথায়ন) এবং পাইরেথ্রয়েড (pyrethroids ) প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

ইউলেমা মেলানোপাস (Oulema melanopus) পোকার কীড়ার আক্রমণেই প্রধানতঃ ক্ষতি হয় । প্রাপ্তবয়স্ক পোকাগুলো ৫ মি.মি. লম্বা, ঘন নীল রং দিয়ে আবৃত পাখা এবং লাল রঙের মাথা ও পা বিশিষ্ট। এরা জমির বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সংরক্ষিত জায়গা যেমন জমির আলের গাছ, শস্যের খড়কুটো এবং গাছের বাকলের ফাঁকফোকড়ে শীতনিদ্রা কাটায়। যখন বসন্তকালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে তখন এরা বের হয়। বসন্তকালের শুষ্ক তাপমাত্রা এ পোকার জীবনচক্র সম্পন্ন করতে সহায়ক কিন্তু ঠাণ্ডায় তা বাধাগ্রস্ত হয়। মিলনের পরপরই স্ত্রী পোকাগুলো পাতার নিচের পৃষ্ঠে প্রধান শিরা বরাবর উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের, সিলিণ্ডার আকৃতির ডিম পাড়তে শুরু করে। এ ধারা ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। ডিম পাড়ার ৭-১৫ দিনের মধ্যে কীড়া বের হয়ে পাতার উপরের পৃষ্ঠ খেতে থাকে এবং তখনই সবচেয়ে ক্ষতি হয়। কীড়াগুলো সাদা অথবা হলুদ রঙের, পিঠ কুঁজবিশিষ্ট এবং কালো মাথা ও ৬ পা বিশিষ্ট। ২-৩ সপ্তাহ পাতা খাওয়ার ফলে কীড়াগুলো পরিপক্ব হয়ে যায় এবং পিউপেশন ঘটায়। পিউপেশনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক বিটল বের হয় এবং পুনরায় জীবনচক্র চলতে থাকে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রতিরোধী সহনশীল জাতের চাষ করুন।
  • জাতীয় পর্যায়ে কিংবা স্থানীয় পর্যায়ে প্রচলিত কোয়ার‍্যান্টাইন বিধিনিয়ম মেনে চলুন।
  • বসন্তের প্রথম দিকে যখন তাপমাত্রা বাড়তে থাকে তখন নিয়মিত জমি পরিদর্শন করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন