কলা

কলার শিকড়ের মাজরা পোকা

Cosmopolites sordidus

বালাই

5 mins to read

সংক্ষেপে

  • এ পোকা জঞ্জালের নিচে বা মাটিতে গাদা করে ডিম পাড়ে।
  • ডিম ফুটে কীড়াপোকা বের হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে এবং এ কীড়াপোকা মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কেটে গাছ বা গুল্ম জাতীয় গাছের শিকড়ে পৌঁছে খায়।
  • গাছের বৃদ্ধি থমকে যায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়াতে ভূপাতিত হতে পারে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

সংক্রমিত কলা গাছে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে হালকা সবুজ, শুকিয়ে যাওয়া ও শিথিল পত্রপল্লব দেখা যেতে পারে। পুরাতন পাতার খোলসে বা কাণ্ডের গোড়ার দিকে প্রথমে খাবার গর্ত বা ফ্রাস দেখা যেতে পারে। মাঝে মাঝে পুরো দৈর্ঘ্য জুড়ে শূককীট কাণ্ড ও মূলে সুড়ঙ্গ তৈরী করে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোষকলা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে পচে যাওয়ায় বিবর্ণ কালো দেখায়। সুযোগসন্ধানী জীবাণু দ্বারা খাবার ও আবাসজনিত কারণে জল ও পুষ্টি পরিবহণের মারাত্মক ক্ষতি হয় পাতা শুকিয়ে যায় এবং অপরিণত অবস্থায় মারা যায়। চারাগাছ বাড়তে পারে না এবং পুরাতন গাছের বৃদ্ধি থমকে যায়। আবহাওয়া বিরূপ হলে তীব্র অবস্থায় সংক্রমিত গাছ ভূপাতিত হয়। মোচার আকার এবং পরিমাণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

Recommendations

জৈব নিয়ন্ত্রণ

অতীতে, এ বালাই দমনে অসংখ্য শিকারী পোকা সফলভাবে ব্যবহৃত হত। অন্যান্যদের মধ্যে ছিল পিঁপড়া ও বিটলের কিছু প্রজাতি। এসব শিকারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল ছিল প্ল্যাসিয়াস জাভানাস ও ড্যাকটাইলোস্টারনাস হাইড্রোফিলোডাস বিটল। রোপনের পূর্বে গরম জলে সাকারের (চারা) শোধনও (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩ ঘন্টার জন্য বা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ মিনিটের জন্য) কার্যকর। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সাকার নতুন বাগানে রোপন করা উচিত। রোপনের সময় সাকার নিম বীজের (আজাডিরাকটা ইন্ডিকা) ২০ শতাংশ দ্রবণে শোধন করলে এ রোগ থেকে চারা রক্ষা পায়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গাছের গোড়ায় কীটনাশক ছিটানোর মাধ্যমে মূল ছিদ্রকারী পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জৈব ফসফেট গ্রুপের (ক্লোরোপাইরিফস, ম্যালাথিয়ন) কীটনাশক সহজলভ্য কিন্তু খুবই ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারকারী ও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত।

এটা কি কারণে হয়েছে

কসমোপোলাইট সরডিডাস পোকা ও এর শূককীট দ্বারা ফসলের এ ধরণের ক্ষতি হয়। পূর্ণাঙ্গ পোকা উজ্জ্বল বর্ম বিশিষ্ট ঘন বাদামী থেকে ধূসর কালো রঙের হয়। সাধারণত এদের গাছের গোড়ায়, ফসলের অবশিষ্টাংশে বা পাতার খোলসে পাওয়া যায়। এরা নিশাচর এবং কয়েক মাস না খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে। স্ত্রী পোকা মাটিতে থাকা ফসলের অবশিষ্টাংশের বা পাতার খোলসের লুকানো গর্তে সাদা, ডিম্বাকার ডিম পাড়ে। ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে ডিম গঠিত হয় না। ডিম ফোটার পর, ছোট শূককীট শিকড় বা কাণ্ডের কোষকলায় সুড়ঙ্গ তৈরি করে, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং কখনও কখনও ভূপাতিত হয়। মূল ছিদ্রকারী পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত সুযোগসন্ধানী জীবাণু দ্বারা গাছকে সংক্রমিত করতে ব্যবহৃত হয়। সংক্রমিত চারার মাধ্যমে এক বাগান থেকে অন্য বাগানে এ বালাইয়ের বিস্তার ঘটে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • কলার চারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহণ করবেন না।
  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে প্রাপ্ত চারা রোপন করুন।
  • সহজলভ্য হলে প্রতিরোধী জাতের চাষ করুন।
  • পিঁপড়া ও বিটলের মত উপকারী শিকারী পোকার সংখ্যা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করুন।
  • স্ত্রী পোকাকে আকৃষ্ট করতে কিছু কাণ্ড বা শিকড় কেটে দুভাগ করে সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখুন (যে ডিম পাড়া হয় সেগুলো মারা যেতে পারে)।
  • আক্রমণ মারাত্মক হলে গাছের সকল অবশিষ্টাংশ, আবর্জনা ও উইভিল ডিম পাড়তে বা বংশবিস্তার ঘটাতে পারে এমন অন্যান্য সামগ্রী খুঁড়ে বের করে জমি থেকে দূর করুন।
  • পুনরায় রোপনের পূর্বে কমপক্ষে দুই বছর ভর্তুকি ফসল চাষের মাধ্যমে জমি পতিত ফেলে রাখুন।
  • এ বালাই দ্বারা সংক্রমিত জমিতে শস্য চক্র মেনে চলার পরামর্শ রয়েছে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন