Odoiporus longicollis
বালাই
সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হল পাতার খোলসের গোড়া বা চারা গাছের কাণ্ডে ছোট ছোট গর্ত ও জেলির মত আঠালো বর্জ্য দেখা যায়। গর্তের চারদিকে শুককীটের বাদামী ফ্রাস (ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে উদ্ভিদের কাষ্ঠল অংশ গুঁড়ো, দানাদার হয়ে যাওয়া) দেখা যায়। শুককীট কাণ্ড বরাবর ছিদ্র করে ফলে জল ও পুষ্টি পরিবহণের মারাত্মক ক্ষতি হয় ও পরিবহণ হ্রাস পায়। পাতাগুলো হলুদ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। সংক্রমণ মারাত্মক হলে কাণ্ডের দূর্বল হয়ে যাবার কারণে ঝড় কিংবা প্রচুর বাতাস বইলে গাছ ভেঙে যায় এবং ভূপাতিত হয়। ক্ষতস্থানে সুযোগসন্ধানী জীবাণু বিরাজমান থাকার কারণে কোষকলা দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যায় এবং বাজে গন্ধ ছড়ায়। সংক্রমিত গাছে সারাবছর ধরে উইভিলের জীবনের সকল ধাপ উপস্থিত থাকে। মোচা বা কলা ঠিকভাবে গঠিত হয় না।
পূর্বে, স্টিনারনেমা কারপোক্যাপসি প্রজাতির কৃমি (নেমাটোড) বা আর্থ্রোপোডার কিছু প্রজাতি উইভিলের বিরুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আরেকটি পদ্ধতি হল, জীবাণু দিয়ে বিটলকে সংক্রমিত করা। উদাহরণস্বরূপ, মেটাঢ়িজিয়াম এনিসোপ্লি নামক ছত্রাক দ্বারা সংক্রমণ ঘটানো।
সম্ভবমতো, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। শুককীট মেরে ফেলতে জৈব ফসফরাস সমৃদ্ধ বস্তু কাণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো যেতে পারে। ফসল আহরণের পরে, সংক্রমিত কাণ্ড দূর করুন এবং সেখানে অবশিষ্ট ডিম পাড়া উইভিল মেরে ফেলতে কীটনাশক (২ গ্রাম/লিটার হারে) দিয়ে শোধন করুন।
পূর্ণাঙ্গ উইভিল কালো রঙের ও প্রায় ৩০ মিমি লম্বা হয়, মাথা চোখা এবং উজ্জ্বল বর্ম থাকে। তারা মূলত নিশাচর কিন্তু শীতল মাস বা মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাদের দিনের বেলায়ও দেখা যায়। কলা গাছ নিঃসৃত উদ্বায়ী পদার্থের প্রতি তারা আকৃষ্ট থাকে। স্ত্রী পোকা পাতার খোলসে ফালি কেটে তার ভেতরে সাদাটে ঘিয়ে রঙের উপবৃত্তাকার ক্ষুদ্র ডিম পাড়ে। ৫-৮ দিন পর, মাংসল, পা বিহীন ও হলুদাভ সাদাটে শুককীট বের হয় এবং পাতার খোলসের কচি কোষকলা খেতে শুরু করে। তারা বিস্তীর্ণ সুড়ঙ্গ তৈরী করে যা ৮ থেকে ১০ সেমি লম্বা হয় এবং কাণ্ডের অভ্যন্তরে, শিকড় বা মোচার ডাঁটা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পূর্ণাঙ্গ পোকা খুব ভাল উড়তে পারে এবং এক গাছ থেকে খুব সহজেই আরেক গাছে চলে যেতে পারে, এভাবেই এ বালাইয়ের বিস্তার ঘটে।