আলু

আলুর বিটল পোকা

Leptinotarsa decemlineata

বালাই

সংক্ষেপে

  • এ পোকার লার্ভার দেহ কালো দাগযুক্ত কমলা বা লাল হয় এবং যখন পূর্ণ আকার ধারণ করে তখন ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়।
  • লার্ভা ও পূর্ণ বয়সী পোকা পাতার কিনারার অংশ বা গোটা পাতা খায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


আলু

উপসর্গ

আলুর কলোরাডো বিটল প্রাপ্তবয়স্ক এবং কীড়া অবস্থায় পাতার কিনারার অংশ খেয়ে বেঁচে থাকে, ফলে কাণ্ড থেকে পাতা ঝরে পড়ে। অনেক সময় কালো রঙের বিষ্ঠাও দেখা যায়। পোকাগুলো অনেক সময় সংক্রমিত আলুও খেয়ে ফেলতে পারে। পূর্ণবয়স্ক কীট ডিম্বাকৃতির এবং দেখতে হলুদাভ-কমলা রঙের। এদের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো পিঠের সাদা-বাদামী পাখার উপরে দশটা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। মাথায় কালো ত্রিভুজাকৃতির একটা দাগ এবং বক্ষে অনিয়ত গাঢ় বর্ণের চিহ্ন দেখা যায়। অন্যদিকে, কীড়াপোকাগুলো লালচে ত্বকযুক্ত অনেকটা গুবরে পোকার মতই হয় এবং এদের পার্শ্বে দুই সারি কালো দাগ দেখা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি কীটনাশক স্পিনোস্যাড (Spinosad) প্রয়োগ করুন। ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (Bacillus thuringiensis) ব্যাকটেরিয়াও কিছু কিছু কীড়াপোকার লার্ভা দশায় কার্যকরী হয়। আলুর কলোরাডো গুবরে পোকা দমনে দুর্গন্ধযুক্ত পোকা পেরিলাস বায়োকুল্যাটাস (Perillus bioculatus) এবং প্রিসটিয়োনকাস ইউনিফর্মিস (Pristionchus uniformis) কৃমি ব্যবহার করা যায়। পরজীবি বোলতা এডোভুম পাটলেরি (Edovum puttleri) ও পরজীবি মাছি মাইয়োফ্যারাস ডরিফ্যোরাও (Myiopharus doryphorae) কলোরাডো গুবরে পোকা দমনে সাহায্য করে। এগুলোর পরিবর্তে আরো কয়েকটা জৈব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সম্ভব।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। আলুর গুবরে পোকার বিরুদ্ধে সাধারনত কীটনাশক ব্যবহার করা হয় কিন্তু এর ফলে জীবনচক্রের সাথে সাথে পোকার মধ্যে দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে উঠতে পারে। পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ইমিডাক্লোপরিড (Imidacloprid) এবং নিওনিকোটিনয়েডস (neonicotinoids) ব্যবহার করা হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

পূর্ণাঙ্গ কীটগুলো মাটির গভীরে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতে শীত মরশুম অতিবাহিত করে। তারা পিউপা থেকে বসন্তকালে নির্গত হয় এবং কচি উদ্ভিদগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে। স্ত্রী পোকাগুলো পাতার উল্টো পিঠে গুচ্ছাকারে ২০ থেকে ৬০ টা কমলা রঙের ডিম্বাকৃতির ডিম দেয়। পরিস্ফুটনের সময় কীড়াগুলো নিয়মিতভাবে উদ্ভিদের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। বৃদ্ধির শেষে তারা পাতা থেকে মাটিতে পড়ে যায় এবং গর্ত করে সেখানে আশ্রয় নেয়, যেখানে তারা একটা গোলাকার পিণ্ড তৈরি করে থাকে এবং পরবর্তীতে হলুদ পিউপা-তে পরিণত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ সবল জাত পাওয়া গেলে সেগুলো ব্যবহার করুন।
  • কীড়াপোকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যে আগেভাগে চাষ করুন।
  • গুবরে পোকার উপস্থিতি বোঝার জন্য এবং বেশী পরিমানে পোকা ধরার জন্য হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করুন।
  • ৪৫% ঢালু গর্তে প্লাস্টিক/জৈব মালচ্‌ ব্যবহার করুন।
  • ভালোভাবে দেখাশুনে পোকাগুলোকে হাত দিয়ে অথবা ঝাঁকুনি দিয়ে উদ্ভিদ থেকে সরিয়ে দিন।
  • আলুর সাথে অন্য এমন কোনো ফসলের চাষ করুন যাতে পোকা সংক্রমণ করতে পারেনা ফলে আলুতেও আর সংক্রমণ হয় না।
  • উপকারী পতঙ্গ যেমন লেডিবাগ, লেসউইং এবং স্পিনড সোলজার এর বংশবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করুন।
  • জমিতে পর্যায়ক্রমে পরাশ্রয় দান করেনা এরকম উদ্ভিদ চাষ করুন।
  • ফসল তোলার পর লাঙলের সাহায্যে চাষ করে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশগুলো জমি থেকে অপসারিত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন