Agromyzidae
বালাই
কীড়াপোকা খাওয়ার ফলে পাতার কিনারার উভয় পাশেই অনিয়মিত বা সর্পিল হালকা ধূসর বর্ণের রেখা দেখা যায়। এ সুড়ঙ্গগুলো পত্রশিরা দ্বারা ঘেরা থাকে এবং সুড়ঙ্গের মধ্যে কালো রঙের বিষ্ঠার সামান্য নমুনা দেখেই এ মাছির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। সমস্ত পাতা বহু সুড়ঙ্গের মাধ্যমে ছেয়ে যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হলে অকালে পত্রমোচন হতে পারে। পত্রমোচন হলে ফলের আকার ছোট হয়, ফলন কম হয় এবং সূর্যের তাপে নষ্ট হয়। টুটা অ্যাবসোলিটা (টমেটোর সুড়ঙ্গকারী পোকা)-র সঙ্গে যাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় সেজন্যে জেনে রাখা প্রয়োজন যে টুটা অ্যাবসোলিটার মাছির দ্বারা সৃষ্ট সুড়ঙ্গ চওড়া এবং সাদা বা স্বচ্ছ হয়।
পোকাকে সরাসরি দমন করতে আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব সকালে বা সন্ধ্যার শেষভাগে নিম তেল থেকে প্রস্তুত পণ্য (অ্যাজাডির্যাক্টিন) পাতার উপরে কীড়াপোকার উপরে স্প্রে করুন। উদাহরণ হিসাবে, নিম তেল ( ১৫০০০ পিপিএম) @ ৫এম এল/লি স্প্রে করুন। বেশীরভাগ পাতাতেই স্প্রে হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। নিম পাতার মধ্যে সামান্য প্রবেশ করে এবং সুড়ঙ্গের মধ্যে কিছু কীড়াপোকার কাছে পৌঁছায়। এন্টোমোফ্যাগাস নিমাটোড, স্টেইনারনেমা কারপোক্যাপসি পাতার উপরে প্রয়োগ করলে তা সুড়ঙ্গকারী পোকার বংশবৃদ্ধি কমাতে পারে। এ পোকার অন্যান্য জৈব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পরজীবায়ন (উদা. চরিসোনোটোমাইয়া পাঙ্কটিভেন্ট্রিস্যাণ্ড এবং গ্যানাস্পাইডাম হান্তেরি) ও নিমাটোডস (উদা. স্টেইনারনেমা কার্পোক্যাপসি) উল্লেখযোগ্য।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। অর্গানোফসফেট, কার্বোমেটস ও পাইরিথ্রয়েডস জাতীয় বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত কীটনাশক পূর্ণাঙ্গ মাছিকে ডিম পাড়তে বাধা দেয়, কিন্তু এরা কীড়াপোকাকে মেরে ফেলতে পারে না। উপরন্তু, এ ধরনের কীটনাশক এ মাছির প্রাকৃতিক শত্রুদের সংখ্যাও কমিয়ে দেয় এবং মাছির মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, এর ফলে কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে এ মাছির সংখ্যা বেড়ে যায়। অ্যাবামেকটিন, ক্লোরানট্র্যানিলিপ্রোল, অ্যাসিটামিপ্রিড, স্পাইনেটোরাম বা স্পিনোস্যাড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে এ মাছির মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা না বাড়তে পারে।
সুড়ঙ্গ সৃষ্টিকারী মাছি পৃথিবীব্যাপী মাছির কয়েক হাজার প্রজাতির মধ্যে অ্যাগ্রোমাইজিডা বর্গের অন্তর্গত। বসন্তকালে, এরা পাতার কলাতে ছিদ্র করে সাধারণত কিনারা বরাবর ডিম পাড়ে। কীড়াপোকা পাতার উপর ও নিচের পৃষ্ঠ থেকে খেতে থাকে। এরা আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গপথ কেটে এগোয় এবং খাওয়ার পর পিছনে নমুনা হিসাবে কালো রঙের বিষ্ঠার চিহ্ন রেখে যায়। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পৌঁছালে, কীড়াপোকা পাতার নিচের দিকে ছিদ্র করে মাটিতে পড়ে যায় এবং মাটিতেই পিউপায় রূপান্তরিত হয়। আবাসী উদ্ভিদের নিকট গাছের অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকলে সেটা পিউপা অবস্থায় পৌঁছানোর একটি বিকল্প স্থান হিসাবে পরিগণিত হয়। সুড়ঙ্গ সৃষ্টিকারী মাছি পোকা হলুদ রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়।