Epilachna vigintioctopunctata
বালাই
পূর্ণাঙ্গ কীট ও কীড়াপোকা ( লার্ভা) পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি করে। পাতার শিরার মধ্যবর্তী স্থানের সবুজ কোষকলা কীট খেয়ে নেওয়ায় যে ক্ষতি হয় সেটা প্রাথমিক লক্ষণ। পরবর্তীতে, পাতার শিরোকঙ্কাল বেরিয়ে এমন একটি গঠন সৃষ্টি হয় যে অবস্থায় পাতার শুধুমাত্র কঠিন অংশটুকু (প্রধান শিরা ও পত্রবৃন্ত) অবশিষ্ট থাকে। সেইসঙ্গে ফলের পৃষ্ঠতলে অগভীর গর্তের সৃষ্টিও হতে পারে। চারাগাছ নষ্ট হয়ে যায় ও আরও একটু পরিণত বয়সী গাছে বৃদ্ধি থমকে যায়। কীটের আক্রমনের ফলে অজস্র পত্রমোচন হয় এবং ফলের উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং সেজন্য এ কীটকে বেগুনের সবথেকে মারাত্মক ক্ষতিসাধক কীটের অন্যতম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ কীটকে দমন করতে পেডিওবিয়াস (Pediobius) বর্গের-র পরজীবি বোলতা ব্যবহার করা যেতে পারে। বোলতাগুলো উপকারী লেডিবার্ড পতঙ্গকেও আক্রমণ করে, তাই এ প্রক্রিয়া শুরু করার আগে ভালোভাবে দেখে নিয়ে কীটকে চিহ্নিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুও পাতা খেকো গুবরে পোকার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ব্যাসিলাস থুরিনজিয়ে্ন্সিস ব্যাকটেরিয়া বা অ্যাসপারজিল্লাস spp. সংগঠিত জৈব-কীটনাশক পত্রপল্লবে স্প্রে করা যেতে পারে। রিসিনাস কম্যুনিস (Ricinus communis) ( ক্যাস্টর অয়েল-castor oil), ক্যালোট্রপিস প্রোসেরা (Calotropis procera) ও ডাটুরা ইনোক্সিয়া (Datura innoxia)-র পাতার নির্যাস ফুলের উপর স্প্রে করা যেতে পারে। রোগের প্রথমাবস্থায় ছাই ব্যবহার করলেও তা কার্যকরীভাবে আক্রমন কমিয়ে দিতে পারে।
সর্বদা প্রথমেই সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনা করুন। যদি কীটনাশক প্রয়োজন হয়, তবে ডাইমেথোয়েট (dimethoate), ফেনভেলারেট (fenvelarate), কুইনালফস (quinalphos), ক্লোরোপাইরিফস (chloropyriphos), ম্যালাথিয়ন (malathion), ফেনিট্রোথিয়ন (fenitrothion) সংগঠিত কীটনাশক পত্রপল্লবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পূর্ণাঙ্গ কীট ডিম্বাকার, নিষ্প্রভ কমলা রঙের এবং শরীরে ২৮টি কালো দাগ ও দেহের পিছনের দিকে ছোট নরম রোম দেখা যায়। স্ত্রী গুবরে পোকা সাধারণতঃ পাতার নিচের দিকে ছোট ছোট গুচ্ছাকারে খাড়া ডিম্বাকার, হলুদ রঙের ডিম (০.৪ থেকে ১ মিলিমিটার) পাড়ে। প্রায় চারদিন পরে ডিম ফুটে বিবর্ণ হলুদাভ-সাদা কীড়াপোকার (লার্ভার) জন্ম হয় যার পিঠের দিকে লম্বা, অগ্রভাগ কালো এমন খণ্ডাংশে বিভক্ত মেরুদণ্ড থাকে। প্রায় ১৮ দিনের মধ্যে তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে কীড়াপোকা (লার্ভা) ৬ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যায়। এবার এ কীড়াপোকা (লার্ভা) পাতার নীচের দিকে পৌঁছায় এবং নিজের চারিদিকে গুটি তৈরী করে। আরও ৪ দিন পরে, পূর্ণাঙ্গ গুবরে পোকা গুটি থেকে বের হয়ে আসে। প্রজনন সময়কালে (মার্চ থেকে অক্টোবর), ঠাণ্ডা আবহাওয়া এদের জীবনচক্র ও জন্মহারের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়। গুবরে পোকা মাটিতে ও স্তুপীকৃত হয়ে থাকা শুষ্ক পাতার মধ্যেই গোটা শীতকাল কাটিয়ে দেয়।