Aleyrodidae
বালাই
খোলা মাঠ ও গ্রীনহাউসে জন্মানো বিভিন্ন জাতের ফসলে সাদা মাছির আক্রমণ খুব সাধারন ঘটনা। কীড়া ও বয়স্ক পোকা গাছের রস শোষণ করে এবং পাতা, কাণ্ড ও ফলের উপরে এক ধরণের মিষ্টি রস নিঃসরণ করে। আক্রান্ত কোষকলার উপরে হলুদাভ দাগ ও স্যুটি মোল্ড জন্মাতে দেখা যায়। মারাত্মক সংক্রমণের কারণে দাগগুলো একত্রিত হয়ে শিরা ব্যতীত পুরো পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। পরবর্তীতে পাতা বিকৃত হয়ে কুঁচকে যায় অথবা কাপ আকৃতি ধারণ করে। কিছু রূপালী সাদা মাছি ভাইরাসও ছড়িয়ে থাকে, যেমন-টমেটোর হলুদ পাতা কার্ল ভাইরাস বা কাসাভা বাদামী দাগ ভাইরাস।
নির্দিষ্ট প্রজাতির সাদামাছি ও ফসলের উপর জৈবিক দমন ব্যবস্থা নির্ভর করে। কার্যকরী নিয়ন্ত্রণের জন্য সুগার-আপেলের তেল, পাইরেথ্রিনস, কীটনাশক সাবান, নিম বীজের নির্যাস (NSKE ৫%), নিম তেল (৫ মিলি/প্রতি লিটার জল) ইত্যাদি প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করুন। পোকার আক্রমণ দমনে জীবাণু ছত্রাক যেমন বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা, ইসারিয়া ফুমোসরোসিয়া, ভার্টিসিল্লিয়াম লেকানি ও পেসিলোমাইসেস ফিউমোসোরোসিয়াস ব্যবহার করা হয়।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রূপালীসাদা মাছি প্রায় সব কীটনাশকের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত প্রতিরোধী হতে পারে, সুতরাং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহারে ভাল সুফল পাওয়া যায়। যদি বিকল্প কোন ব্যবস্থা না পাওয়া যায়, তাহলে বাইফেনথ্রিন, বুপ্রোফেজিন, ফেনোক্সিকার্ব, ডেল্টামেথ্রিন, আজাডিরাক্টিন, ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন, সাইপারমেথ্রিন, পাইরিথ্রয়েডস ও পাইমেট্রোজিন বা স্পিরোমেসিফেন সংঘটিত কীটনাশক ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়। সচেতন থাকুন যে কার্যকরী দমন ব্যবস্থা প্রায় ক্ষেত্রেই মাছির সংখ্যা এমন হারে কমিয়ে দেয় যে তা আর ক্ষতিকারক হয় না।
রূপালীসাদা মাছি আকারে প্রায় ০.৮ মি.মি. হয়ে থাকে। মাছির শরীর এবং ডানা সাদা অথবা হলুদাভ পাউডারী মোমে আবৃত থাকে। এদের বেশিরভাগ সময় পাতার নিচে দেখা যায়, এবং গুরুতর আক্রান্ত গাছ নাড়ালে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা পূর্ণবয়স্ক মাছি দল বেঁধে বের হয়ে আসে। এরা উষ্ণ, শুষ্ক আবহাওয়ায় সংখ্যায় বেড়ে ওঠে। পাতার নিচে স্ত্রী মাছি ডিম পাড়ে। স্বল্পবয়সী পোকা হলুদ থেকে সাদা বর্ণের, চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতি ও ফ্যাকাশে সবুজ হয়। বয়স্ক পোকা আবাসী গাছ থেকে খাদ্য না খেয়ে কয়েকদিনের বেশী বেঁচে থাকতে পারে না। এর ফলে আগাছা-নিয়ন্ত্রণ করাটা রূপালীসাদা মাছির বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের একটি প্রধান উপায় বলে বিবেচিত হয়।