আখ

আপেলের উলি জাবপোকা

Eriosoma lanigerum

বালাই

সংক্ষেপে

  • পাতা ও মঞ্জরী নেতিয়ে ও হলুদ হয়ে যায়।
  • গাছের বাকল, মঞ্জরী ও শিকড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয় ও স্ফীত হয়।
  • যেখানে খাদ্য গ্রহণ করে সেখানে একটি সাদা গুলার মতো নরম আচ্ছাদন দেখা যায়।
  • সুযোগসন্ধানী ছত্রাকের সহজ আক্রমণের শিকার হয়।
  • গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

3 বিবিধ ফসল
আপেল
নাশপাতি
আখ

আখ

উপসর্গ

সাদা আঁশযুক্ত পোকা গাছের মুকুল, পাতা, শাখা, এমনকি মূল খেতে পারে। জাব পোকা খাওয়ার পর পাতা হলুদ ও বিকৃত হয়, বৃদ্ধি হয় না এবং শাখা মরে যায়। যে পাতায় খাদ্য গ্রহণ করে সেখানে একটি সাদা তুলার মতো নরম আচ্ছাদন এবং মধুচন্দ্রিভ থাকে। ছাল এবং কাণ্ডে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে স্ফীত হয়। ভূগর্ভস্থ জাব পোকা শিকড়ে আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে বড় হয়ে যায় এবং বড় নট তৈরি করে। পুষ্টি ও জল পরিবহন কমে যাওয়ার কারণে গাছ হলুদ দেখায়। জাব পোকার খাওয়ার ফলে বছর বছর এ গল আকারে বৃদ্ধি পায়। পোকার আক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থানে মধুচন্দ্রিভ জমা হয় যা সুযোগসন্ধানী ছত্রাকের আক্রমণকে আকৃষ্ট করে এবং আক্রান্ত স্থানে স্যুটি মোল্ড দেখা যায়। আক্রান্ত কম বয়সী গাছ মাটি থেকে সহজে উঠে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

স্প্রে উপাদানের জাব পোকা থেকে নিঃসৃত উলি আবরণ ভেদ করার সক্ষমতা থাকতে হবে । উলি স্পটের উপর পাতলা অ্যালকোহল মিশ্রণ বা সাবানের কীটনাশক ছিটিয়ে দিয়ে এদের বিরক্ত করতে হবে। প্রাকৃতিক তেল বা নিমের নির্যাস ( ২-৩ মিলি/ লিটার জল) স্প্রে করতে পারেন। প্রথম স্প্রের ৭ দিন পর আবার ভালোভাবে ছিটিয়ে দেওয়া দরকার। প্যারাসাইট বা শিকারী পোকা যেমন লেস উইং , লেডিবাগ (এক্সোকোমোমাস কোয়াড্রিপোস্টিওলাটাস ), হভারফ্লাইজ কীড়া এবং পরজীবি বোলতা (এফিলিনাস মলি) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কৃত্রিমভাবে শিকারী পোকা এয়ারউইগ-কে লালনপালন করা যায় যেমন ফরফিকুলা অওরিকুলারিয়া।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সনাক্তকরণের পর বা প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করা যেতে পারে। পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নিয়ে জাব পোকাকে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত রাখা যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে এরা উপকারী পোকার জন্যও ক্ষতিকর। ডেল্টামিথ্রিন, ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন, অ্যাসিটামিপ্রিড সংঘটিত রিঅ্যাক্টিভ স্প্রে ব্যবহার করা যায়। কারবামেইটস এবং পাইরিথ্রয়েডস পরিহার করুন কারণ এরা প্যারাসাইট ও শিকারী পোকা মেরে ফেলে এবং জাব পোকার আক্রমণকে ত্বরান্বিত করে। গাছে ফুল থাকলে কখনোই কীটনাশক স্প্রে করবেন না কারণ এরা পরাগায়ণে সহযোগী পোকার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ ।

এটা কি কারণে হয়েছে

ইরিওসোমা লেইনিজেরাম- এর খাদ্য গ্রহণের কার্যক্রম দেখে এ রোগের লক্ষণ বোঝা যায়। এ পোকা অন্যান্য এফিডের ন্যায় পাতার রস না খেয়ে কাষ্ঠল কাণ্ডের রস চুষে খায়। এ পোকা তার পুরু, সাদা তুলার ন্যায় মোমের আচ্ছাদন দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । পূর্বের আক্রান্ত স্থান অথবা আবাসী গাছের ফাটা অংশে এরা শীতাবস্থায় থাকতে পারে। বসন্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে, জাব পোকা আবার সক্রিয় হয়ে সাকার , ছোট ছোট অঙ্কুর এবং শাখাগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্বল স্থানের সন্ধান করে। এরা ব্যাপকভাবে খায় এবং বাকলের নিচের রস চোষে এবং সাদা তুলার মতন আঁইশ নিঃসৃত করে যা পর্যায়ক্রমে কলোনিকে/বাসাকে আবৃত করে ফেলে। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুরা প্রবেশ করে। গ্রীষ্মে পূর্ণবয়স্ক পোকার পাখা বের হয় এবং এরা নতুন আবাসের খোঁজে বের হয়। বাগানের আশেপাশে এলম গাছ থাকলে আপেল গাছে এফিডের মাইগ্রেশন বেড়ে যায় ।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • সংক্রমণ হালকা হলে পোকা তদারকি করা যায় এবং ব্রাশ দিয়ে ঘষে দমন করা যায়।
  • পরিমিত সার ব্যবহার করে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করুন।
  • কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ কীটনাশক উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস করে।
  • বসন্তকালীন ছাঁটাই একটু দেরিতে করুন যাতে পোকার বাসা ধ্বংস করা যায়।
  • আক্রান্ত তরুণ কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা সরিয়ে ফেলুন।
  • জাব পোকার জন্য অনুকূল অবস্থা কমাতে বৃক্ষের নীচে শোষক পোকা দমন করুন।
  • জাব পোকার বাসা প্রতিরোধে ছাঁটাই করার স্থানে বানিজ্যিক রঙ দিয়ে রঞ্জিত করুন।
  • আপেলের বাগানের কাছে এলম গাছ লাগাবেন না।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন