লেবু জাতীয় ফসল

লেবু ফসলের লাল মাকড়

Panonychus citri

মাকড়

সংক্ষেপে

  • পাতায় ছোট ছোট ধূসর বা রূপালী দাগ দেখা যায়।
  • আক্রান্ত কোষকলা দেখতে রূপালী বা তামাটে বর্ণের দেখায়।
  • তীব্র সংক্রমণে অপরিণত অবস্থায় পাতা ঝরে যায়, ডগা শীর্ষ থেকে ক্রমশ মারা যায় এবং গাছের সতেজতা হ্রাস পায়।
  • পরিমিত ও সুষ্ঠু জলসেচ এ বালাইয়ের প্রকোপ ও ক্ষতি হ্রাস করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

লেবু জাতীয় ফসল

উপসর্গ

এ ক্ষতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গাছের প্রান্তে কচি পাতায় ছোট ছোট ধূসর বা রূপালী দাগ দেখা যায় যাকে স্টিপলিং বলে। মাঝে মাঝে ফল এবং ডগাও আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ তীব্র হলে, ছোট ছোট দাগ একত্র হয়ে বড় দাগ গঠন করে যে কারণে পাতা বা সবুজ ফল দেখতে রূপালী বা তামাটে দেখায়। পাতার কোষকলায় ক্ষতির কারণে সালোকসংশ্লেষের স্থানের হ্রাস ঘটে এবং আক্রান্ত কোষকলা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অপরিণত পাতা ঝরে যায়, ডগা শীর্ষ থেকে ক্রমশ মারা যায় এবং গাছের সতেজতা হ্রাস পায়। এটি সাধারণত প্রতিকূল পরিবেশ যেমন- শুষ্ক, অত্যধিক বায়ুপ্রবাহযুক্ত আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। অপরদিকে, পরিমিত ও সুষ্ঠ জলসেচ এ বালাইয়ের প্রকোপ ও ক্ষতি হ্রাস করে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

প্যানোনিকাস সাইট্রি-র প্রচুর সংখ্যক শিকারী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে যা এর বিস্তার দমনে প্রায়ই যথেষ্ট। সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও লেবু ফসলের লাল মাকড় কার্যকরভাবে দমনে বিভিন্ন দেশে কতিপয় ফাইটোসিড মাকড় (উদাহরণস্বরূপ- ইউসিয়াস স্টিপুলেটাস) ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্টেথোরাস গণের কিছু লেডিবার্ডের প্রজাতি লাল মাকড়কে আগ্রাসীভাবে খেয়ে থাকে। ছত্রাক এবং বিশেষত ভাইরাস জমিতে প্যানোনিকাস সাইট্রি-র সংখ্যা দমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি কখনও কখনও তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বিস্তৃত পরিসরের বালাইনাশক এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট বালাইনাশক ব্যবহারের প্রতি কঠোর নির্দেশনা আছে। উদাহরণস্বরূপ- কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত পাইরিথ্রয়েড এ মাকড়ের বিস্তারকে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন ধরণের মাকড়নাশকের ব্যবহার প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিতে বাধা দেয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

লেবু ফসলের লাল মাকড় প্যানোনিকাস সাইট্রি-র পূর্ণাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ (নিমফ) উভয় পোকার খাবার গ্রহণজনিত কারণে এসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এদের বৈশিষ্ট্য হল, গোলাকৃতি ইঁটের মত লাল শরীর এবং পিঠে মুক্তার মত দাগ থেকে শক্ত সাদা লোম উদগত হয়। এরা লেবু ফসলকে আক্রমণ করে এবং মাঝে মাঝে পেঁপে, কাসাভা বা আঙুরের মতো ফসলকেও আক্রমণ করে থাকে। পাতার উভয় পার্শ্বেই এদের পাওয়া গেলেও এরা মূলতঃ উপরের পৃষ্ঠে খেয়ে থাকে। রেশমী সুতা প্রস্তুতির কল্যাণে বাতাসের মাধ্যমে এক গাছ থেকে সহজেই অপর গাছে পরিবাহিত হতে পারে। বিস্তারের অন্য একটি উপায় হল পোকা ও পাখি। সংক্রমিত যন্ত্রপাতি এবং অপরিচ্ছন্ন মাঠ ব্যবস্থাপনা এক জমি থেকে অপর জমিতে বালাইয়ের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। গাছের জন্য পর্যাপ্ত জলসেচ সম্বলিত একটি সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা এ বালাইয়ের প্রকোপ এবং ক্ষতি পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্রাস করে থাকে। বিপরীতক্রমে, কম বা বেশি আর্দ্রতা, অধিক বাতাস, খরা বা দুর্বল মূল ব্যবস্থা এ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। লেবু ফসলের লাল মাকড়ের জন্য সর্বাপেক্ষা কাম্য পরিবেশ হল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৫০-৭০ শতাংশ আর্দ্রতা।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • মাকড়সার সংখ্যা নিরূপণে বিবর্ধক কাঁচের সাহায্যে বাগান নিয়মিত নিরীক্ষা করুন।
  • উপকারী পোকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার পরিহার করুন।
  • খরার চাপ পরিহার করতে গাছে ঠিকমত জলসেচ দিন।
  • মাটিতে ঘাস বা আগাছার সাথে ডালপালার না লেগে থাকা নিশ্চিত করুন।
  • আবর্জনা এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ অপসারিত করুন যাতে বাগান পরিষ্কার থাকে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন