অন্যান্য

ব্যাকটেরিয়াজনিত ফলের ব্লচ রোগ

Acidovorax citrulli

ব্যাকটেরিয়া

সংক্ষেপে

  • বীজপত্রের নিচের দিকে জলবৎ ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।
  • পাতার শিরা বরাবর গাঢ় বা লালচে বাদামী লম্বাটে ক্ষত দেখা যায়।
  • ফলে জলপাই রঙের অনিয়মিত ক্ষত দেখা যায়, যা একত্রিত হয়ে গাঢ় সবুজ রঙের থেঁতলে যাওয়া মত ক্ষত সৃষ্টি করে।
  • কোষকলা থেকে অ্যাম্বার রঙের এক প্রকার তরলের ক্ষরণ ঘটে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

5 বিবিধ ফসল
করলা
শসা
তরমুজ
কুমড়া
আরো বেশি

অন্যান্য

উপসর্গ

রোপনের পাঁচ থেকে আটদিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজপত্রের নিচের দিকে জলবৎ ছোপ ছোপ দাগ এবং একারণে মাঝে মাঝে গোড়া পচে যাওয়া রোগ হয়। বয়স্ক গাছে পাতার শিরা বরাবর গাঢ় বা লালচে বাদামী আঙুলের মত লম্বাটে ক্ষত দেখা যায়। পরিণত হবার আগে আগে ফলে আদর্শ লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয় এবং গায়ে প্রাথমিকভাবে জলপাই রঙের, অনিয়মিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত দেখা যায়। এ ক্ষতগুলো একইসাথে দ্রুত বাড়ে, একসময় মিলে গিয়ে বড় আকারের গাঢ় সবুজ থেঁতলে যাওয়ার মত দেখায়। রোগের বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্ষত অঞ্চলে ফাটল দেখা দেয় এবং কোষকলা থেকে অ্যাম্বার রঙের একপ্রকার তরল নিঃসৃত হয়। সুযোগসন্ধানী জীবাণু নষ্ট কোষে আবাস সৃষ্টি করে, এতে ফল পচে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

উষ্ণ ও শুষ্ক বাতাস দ্বারা শোধন করে জীবাণু দূর করার মাধ্যমে বীজ পরিষ্কারে কিছু সফলতা পাওয়া যায়। ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩৫ দিন ধরে শোধন জীবাণু দূরীকরণে কার্যকর ফলাফল দেয়। রোগের বিস্তার হ্রাসে এবং সংক্রমণ থেকে ফলকে রক্ষা করতে কপার (তামা) ভিত্তিক ব্যাকটেরিয়ানাশকের জৈবিক ফরমুলেশন সহজলভ্য রয়েছে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যদি মাঠে রোগ শনাক্ত হয় তবে কিউপ্রিক হাইড্রোক্সাইড, কপার হাইড্রোক্সো সালফেট বা কপার অক্সিক্লোরাইডের মত কপার (তামা) ভিত্তিক ব্যাকটেরিয়ানাশকের প্রয়োগ রোগের বিস্তার হ্রাস করে এবং ফলকে সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। ফুল ধারণের পূর্ব থেকে ব্যাকটেরিয়ানাশক প্রয়োগ করতে হবে এবং ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

এসিডোভোরাক্স সাইট্রুলি ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয়। এ জীবাণু সংক্রমিত ফলের বীজ, মাটিতে থাকা ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং কুমড়া পরিবারের আগাছা বা সহযোগী গাছের মত বিকল্প আবাসে বেঁচে থাকে। সকল কুমড়া ফসল এ রোগের প্রতি কম বেশি সংবেদনশীল কিন্তু লক্ষণের তীব্রতায় পার্থক্য দেখা যায়। সংক্রমিত বীজের মাধ্যমে এ রোগের মুখ্য সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। জলের ঝাপটা (বৃষ্টি বা উপরি সেচ), শ্রমিকের হাত ও কাপড় চোপড় এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির মাধ্যমে গাছ থেকে গাছে গৌণ সংক্রমণ ঘটে। উচ্চ তাপমাত্রা (৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) এবং অধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা (৭০ শতাংশের বেশি) সংক্রমণ ও রোগের বিস্তারের অনুকুল। ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে ফল সংক্রমিত হতে পারে এবং ফুল ধারণের ২-৩ সপ্তাহ পর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু ফল পরিপক্ব হবার সাথে সাথে এর গায়ে মোমের মত একটি আবরণ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী সংক্রমণকে প্রতিহত করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • আপনার দেশের সঙ্গনিরোধ আইন সম্পর্কে সচেতন হোন।
  • শুধুমাত্র প্রত্যয়িত উৎস থেকে বীজ ব্যবহার করুন।
  • পুরো উৎপাদন চক্র জুড়ে উন্নত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন।
  • রোগের লক্ষণ প্রকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নিয়মিত ফসল নিরীক্ষা করুন এবং সংক্রমিত গাছ সত্ত্বর ধ্বংস করুন।
  • কুমড়া পরিবারের আগাছা এবং বিকল্প আবাস দূর করুন।
  • ফসল আহরণ শেষে গভীর চাষ দিয়ে গাছের অবশিষ্টাংশ মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন।
  • ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধে তিনবছর মেয়াদী শস্যচক্রের পরিকল্পনা করুন।
  • সংক্রমিত জমিতে ব্যবহৃত কোন যন্ত্রপাতি পরবর্তীতে ব্যবহারের আগে ভালভাবে পরিষ্কার করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন