Agrobacterium
ব্যাকটেরিয়া
আঙ্গুরলতার দেহকান্ডের নীচের দিকে ফোলা অংশের সৃষ্টি এই রোগের বিশেষ লক্ষণ। এছাড়াও আঙ্গুরলতার দেহকান্ডের নীচের দিকে ও উপরের দিকে (ক্রাউন-সেইকারণে এই রোগের এই রকম নাম), এই ফোলা অংশ কলম বা মূলের চারিদিক ঘিরে বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রাথমিকভাবে, গ্রীষ্মের প্রথমভাগে যখন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার থেকে বেশী থাকে তখন ছোট, বাইরের দিকে বৃদ্ধিযুক্ত জামুড়ার আবির্ভাব হয়। এই জামুড়া দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় এবং নরম, স্পঞ্জের মতো ও বেশী বা কম গোলকাকৃতি ফোলা অংশের আবির্ভাব হয় যা বৃহদাকৃতি আয়তনযুক্ত হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই ফোলা অংশ শুষ্ক ও ব্যাধিযুক্ত গাঢ় কালচে বর্ণে রূপান্তরিত হয়। একবার যেই ফোলা অংশের বৃদ্ধি হতে শুরু করে, তা আঙ্গুরলতা বা রোগাক্রান্ত গাছের শাখাকে বেষ্টন করে ফেলে এবং জল ও পুষ্টির সংবহনে বাধা দেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং আঙ্গুরচারা বা উদ্ভিদ মারাও যেতে পারে।
অ্যাগ্রোব্যাকটেরিয়াম রেডিওব্যাকটর K-84 প্রজাতির উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বেশ কিছু সংখ্যক ফসলের ক্ষেত্রে ক্রাউন গলকে কার্যকরী উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই প্রক্রিয়া আঙ্গুর ফলের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় না। বিকল্প প্রক্রিয়া হিসাবে A. Vitis নামক ব্যাকটেরিয়ামের F2/5 প্রজাতিকে ব্যবহার করে দারুন উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এখনো এর ব্যবহার শুরু হয়নি।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সাম্প্রতিককালে ক্রাউন গলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ব্যাকটেরিয়ানাশক, জীবাণু-প্রতিরোধক) কার্যকরী হচ্ছে না, কারণ এই প্রতিরোধ শুধুমাত্র লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হচ্ছে কিন্তু ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণকে দূরীভূত করা হচ্ছে না। রোগের নিয়ন্ত্রণের জন্য আঙ্গুরলতায় এবং ফসল চাষের স্থানে আঘাত যাতে না লাগে সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
অন্যান্য পীচ্ জাতীয় গাছের মধ্যে আঙ্গুরলতা ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু গাছ ক্রাউন গল রোগের শিকার হতে পারে। এই রোগ সৃষ্টি হয় অ্যাগ্রোব্যাকটেরিয়াম ভিটিস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে যা বেশ কয়েক বছর দিব্যি মাটিতে পড়ে থাকা মৃত গাছের ভগ্নাবশেষের মধ্যে বা মাটির তলায় বেঁচে থাকতে পারে। এগুলি তখন ব্যাধির উৎস হিসাবে কাজ করে যা নতুন কাঠে আক্রমণ করে। যেকোন ক্ষতস্থান জীবাণুর সম্ভাব্য প্রবেশপথ ও বায়বীয় ফোলা অংশের উৎস হয়ে উঠতে পারে। এই ক্ষত আবার বিরূপ আবহাওয়ার (হিমাঙ্ক, শিলাবৃষ্টি), মূলের যান্ত্রিক ঘর্ষণ বা জমিতে কাজ করার সময়ে (ডালপাতা ছেঁটে দেওয়া, কলম তৈরী করা, শোষক কীটকে সরিয়ে দেওয়া) সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া গাছের কাণ্ডে ও কলার মধ্যে কোন লক্ষণ সৃষ্টি করা ছাড়াই বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে। এইভাবে, আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ উদ্ভিদের অংশবিশেষ পরিবহণের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে রোগের বিস্তার হতে পারে। রোগের সবথেকে খারাপ দিকটি এড়িয়ে চলতে হলে চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চল নির্বাচন করাটা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসাবে, জলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কে নেমে যাওয়ার ফলে গাছের গায়ে শীতকালে আঘাতের সৃষ্টি হওয়াটা যে অঞ্চলে সাধারণ ব্যাপার, সেখানে ক্রাউন গল সৃষ্টি হওয়ার হার সবথেকে বেশী।