কলা

কলার মোকো রোগ

Ralstonia solanacearum

ব্যাকটেরিয়া

সংক্ষেপে

  • সংক্রমিত গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে মারা যায়।
  • যখন তাদের কেটে উন্মুক্ত করা হয় তখন পরিবহন কলায় স্পষ্ট, হালকা হলুদ থেকে বাদামী বিবর্ণতা দেখা যায়।
  • পচে শুকিয়ে যাবার কারণে সংক্রমিত ফল বিকৃত ও কুঞ্চিত হয়ে যায়।
  • ফল কাটলে ব্যাকটেরিয়া জনিত এক প্রকার ক্ষরিত তরল (ওজ) দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

সংক্রমিত গাছের কচি পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে মারা যায়। বোঁটা শক্তি হারিয়ে ফেলে ফলে সবুজ পাতা ঝুলে পড়ে এবং গাছের সতেজতা হ্রাস পায়। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে, পুরাতন পাতাও সংক্রমিত হয়ে পড়ে। যখন তাদের কেটে উন্মুক্ত করা হয় তখন পরিবহন কলায় স্পষ্ট, হালকা হলুদ থেকে বাদামী বিবর্ণতা দেখা যায়। পচে শুকিয়ে যাবার কারণে সংক্রমিত ফল বিকৃত ও কুঞ্চিত হয়ে যায়, ফলের শাঁসে গাঢ় বাদামী রঙের বিবর্ণতা দেখা যায়। ফল কাটলে ব্যাকটেরিয়া জনিত এক প্রকার ক্ষরিত তরল (ওজ) দেখা যায়। গাছের পরিবহন কলায় ব্যাকটেরিয়া বিকশিত হয় এবং গাছের উপরের অংশে জল ও পুষ্টির প্রবাহকে বাধাদান করে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

গাছের চারদিকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রোগের বিকাশ আটকানো যেতে পারে। রোপনের পূর্বে জমি ১ শতাংশ বোর্দো মিক্সচার, ০.৪ শতাংশ কপার অক্সিক্লোরাইড বা স্ট্রেপটোমাইসিন কিংবা স্ট্রেপটোসাইক্লিন (প্রতি ১০ লিটারে ৫ গ্রাম) এর মত এন্টিবায়োটিক দ্বারা শোধন করা যেতে পারে। রোপনের পূর্বে ৩০ মিনিট ধরে ০.৪ শতাংশ কপার অক্সিক্লোরাইড (প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম) দিয়ে চারা শোধন করা যেতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মোকো রোগের সরাসরি রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

এটা কি কারণে হয়েছে

রালস্টোনিয়া সোলান্যাসিরাম ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলার মোকো রোগ হয়। এটি গাছের সংক্রমিত কোষকলায় বা অন্যান্য আবাস গাছে সারা বছর ধরে অথবা মাটিতে ১৮ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং মাটির অধিক আর্দ্রতা সাধারণত এ রোগের বিস্তারের জন্য অনুকূল। গাছ থেকে গাছে বা এক বাগান থেকে আরেক বাগানে বহুভাবে জীবাণুর বিস্তার ঘটতে পারে। কলাগাছের সকল অঙ্গ (মূল থেকে ফলের খোসা পর্যন্ত) সংক্রমণের সম্ভাবনাময় উৎস। এ কারণে, গাছ ছেঁটে রাখা বা কোন প্রকার আঘাত পরিহার করতে হবে। সংক্রমিত মাটি যখন গাড়ির টায়ার, সরঞ্জামাদি, জুতা বা প্রাণীর মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, সেগুলো সংক্রমণের আরেকটি উৎস হিসেবে কাজ করে। ফুল থেকে খাবার আহরণ করে যেসব পোকা বা পাখি (মৌমাছি, বোলতা ও ফলের মাছি) এবং অন্যান্য বিকল্প আবাসও এ রোগের বিস্তার ঘটায়। জলসেচ বা গড়ানো জলের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে নীরোগ চারা ব্যবহার করুন।
  • রোগের লক্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নিয়মিত জমি নিরীক্ষা করুন।
  • জমি থেকে ফসলের অবশিষ্টাংশ দূর করুন এবং সেগুলো পুড়িয়ে ফেলুন।
  • নালা পদ্ধতিতে সেচ পরিহার করুন এবং সম্ভব হলে জীবাণুমুক্ত জল ব্যবহার করুন।
  • ভবিষ্যতে রোগের বিস্তার এড়াতে কর্তন সরঞ্জামাদি, জুতা এবং গাড়ির চাকার টায়ার জীবাণুমুক্ত রাখুন।
  • গাছের গোড়ায় শতকরা ১০ ভাগ সতেজ গোবর স্লারি ব্যবহার করুন।
  • জমি থেকে আগাছা এবং হেলিকুনিয়ার প্রজাতি অপসারণ করুন।
  • জমি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করুন।
  • কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য জমি পতিত ফেলে রাখুন।
  • ১২ মাসের জন্য শস্যচক্র নিশ্চিত করুন।
  • রোগের বিস্তার রোধে ফরাসি গাঁদা ফুল মালচ হিসেবে ব্যবহার করুন।
  • জমিতে কাজ করার সময় গাছের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে যত্নবান হোন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন