অন্যান্য

আমের ব্যাকটেরিয়াজনিত দাগ রোগ

Xanthomonas citri pv. mangiferaeindicae

ব্যাকটেরিয়া

সংক্ষেপে

  • পাতার উপরে অনিয়মিতভাবে কালো, জল-সিক্ত দাগ দেখা যায়।
  • পরে, পাতার উপরে দাগগুলি শুকিয়ে যায় এবং হালকা বাদামী বা ছাই-ধূসর বর্ণযুক্ত হয়।
  • অকাল পত্রমোচন ঘটে।
  • ফলের উপরে কালো ক্ষুদ্র দাগযুক্ত গর্ত দেখা যায় যা থেকে গাছের আঠা চুঁইয়ে বেরোতে থাকে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

অন্যান্য

উপসর্গ

আমের ব্যাকটেরিয়াজনিত কালো দাগ রোগের প্রধান উপসর্গ পাতা ও ফলের উপরেই লক্ষ্য করা যায় কিন্তু চরমাবস্থায় ডালপালা ও শাখাপ্রশাখার উপরেও উপসর্গ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক অবস্থায়, পাতার উপরে কালো ও জল-সিক্ত ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই দাগগুলি পাণ্ডুর বর্ণযুক্ত সীমারেখা ও পত্রশিরা দিয়ে আবদ্ধ থাকে। রোগ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, দাগগুলি শুষ্ক হয়ে যায় এবং পত্রমোচন হতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায়, জল-সিক্ত, হালকা ধরনের দাগ আক্রান্ত ফলের উপরে দেখা যায়। পরে, এই দাগগুলি থেকে গাঢ় বর্ণের তারাকৃতি জমাট বাঁধা পদার্থ সৃষ্টি হয় যা থেকে সংক্রামিত আঠা চুঁইয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং সুযোগসন্ধানী জীবাণুকে আকর্ষিত করে। সংক্রমণের প্রথমাবস্থায় ফলের গুণমান হ্রাস পায় এবং সংক্রমণের তীব্র অবস্থায় ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে যেতে পারে। গাছের শাখাপ্রশাখা ও কাণ্ডের গায়ে সৃষ্ট ক্ষত কালো হয় ও চিড় ধরতে পারে, যার ফলে গাছের স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

কপার অক্সিক্লোরাইড সমৃদ্ধ দ্রব্য দিয়ে নিয়মিত স্প্রে করে যে এই রোগকে প্রতিহত ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করা যায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আক্রান্ত গাছে জৈব উপাদান যেমন অ্যাসিনেটোব্যাকটর বাউমান্নি প্রয়োগ করলে তা কার্যকরীভাবে জ্যান্থোমোনাস সাইট্রির জন্মহার কমিয়ে দিতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। আমের ব্যাকটেরিয়াজনিত দাগ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে থিয়োফ্যানেট-মিথাইল বা বেঞ্জিমিডাজোল সমৃদ্ধ স্প্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

জ্যান্থোমোনাস সাইট্রি ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন এই দাগ রোগ সৃষ্টি করে। জীবন্ত কোষের মধ্যে এই জীবাণু প্রায় ৮ মাস পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষত এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ছিদ্রমুখের মাধ্যমে গাছের দেহে প্রবেশ করে আক্রমণ করে। জীবাণু এক গাছ থেকে অন্য গাছে বা এক চাষের জমি থেকে অন্য চাষের জমিতে জোরালো বাতাস তাড়িত বৃষ্টির জল অথবা গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার সময়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আবার অন্যদিকে, সংক্রামিত উদ্ভিদ দেহাংশ বা ফলকে স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ বিস্তার লাভ করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত দাগ রোগের সংক্রমণের জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলো আদর্শ। উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা সংক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে। বাগানের চারিদিক ঘিরে গাছের সারি বা ঘন পত্রসন্নিবিষ্ট গাছের প্রজাতি রোগের ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে সাহায্য করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ তরতাজা চারাগাছ ও কলম চারা ব্যবহার করুন।
  • চাষের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও উপকরণ জীবাণুমুক্ত করুন।
  • সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধী জাতের চারা রোপণ করুন।
  • দুটি গাছের মধ্যে যাতে বায়ু চলাচল ভালো হয় সেদিকে নজর দিন।
  • নিয়মিতভাবে রোগাক্রান্ত ডালপালা, শাখা-প্রশাখা ও ফল অপসারিত করুন।
  • চাষের মাঠে কাজ করার সময়ে যাতে গাছের গায়ে কোন আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাতের হাত থেকে গাছগুলিকে রক্ষা করার জন্য চারাগাছগুলিকে ঘিরে অন্য গাছের সারি লাগান।
  • রোগাক্রান্ত ফল ও উদ্ভিদের অংশ নষ্ট করে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন