অন্যান্য

শশার পাতায় কোণাকার দাগ রোগ

Pseudomonas syringae

ব্যাকটেরিয়া

সংক্ষেপে

  • পাতায় ছোট বৃত্তাকার দাগ দেখা যায়, যা পরবর্তীতে বড়, অনিয়মিত কোণাকার থেকে অনিয়মিত, জল- সিক্ত দাগে পরিণত হয়।
  • আক্রান্ত অংশ ধূসর হয়ে ঝরে পড়ে এবং পাতায় অনিয়মিত ছিদ্র দেখা যায়।
  • ফলের উপর বৃত্তাকার ক্ষত দেখা যায় এবং পরে তা সাদা হয়ে ফেটে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

5 বিবিধ ফসল
করলা
শসা
তরমুজ
কুমড়া
আরো বেশি

অন্যান্য

উপসর্গ

প্রথমে পাতায় ছোট, বৃত্তাকার দাগ দেখা যায়। এই দাগ পরবর্তীতে বড়, অনিয়মিত কোণাকার থেকে অনিয়মিত জল-সিক্ত দাগে পরিণত হয়। আর্দ্র পরিবেশে পাতার আক্রান্ত অংশের নিচ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ব্যাকটেরিয়াজাত পিচ্ছিল কর্মমাক্ত তরল ক্ষরিত হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় এ গুটি আর্দ্রতা হারিয়ে সাদা আস্তরণে পরিণত হয়। পরে আক্রান্ত অংশের কোষ কলা মরে যায়, কুঁচকে গিয়ে ধূসর রঙ ধারন করে, অবশেষে পাতার সুস্থ অংশ থেকে আলাদা হয়ে ঝরে পড়ে। এ ক্ষতস্থানের কিনারা হলদে হয়। পাতায় বড় বড় অনিয়মিত ছিদ্রের কারণে এবড়ো থেবড়ো দেখায়। কিছু প্রতিরোধী জাতের ক্ষেত্রে ক্ষত ছোট হয় এবং হলদে কিনারা দেখা যায় না। আক্রান্ত ফলের উপরে ছোট ছোট বৃত্তাকার দাগ দেখা যায়। যখন আক্রান্ত কোষ কলা মরে যায় তখন ফল সাদা হয়ে ফেটে যায় এবং সুযোগ সন্ধানী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে সমগ্র ফল পচে যায়। কম বয়সী ফলে আক্রমণের কারণে তা ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

আক্রান্ত বীজ রসুনের দ্রবণ বা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উষ্ণ জলে ৩০ মিনিটের জন্য শোধন করে নিতে হবে। গ্রীন হাউসে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাহায্যে রাতের আর্দ্রতা ৮০-৯০ শতাংশ করে নিয়ে এ রোগ দমন করা যায়।পেন্টাফেইজ নামক জৈব নিয়ন্ত্রণ পণ্য ব্যবহার করেও এ রোগ ভালোভাবে দমন করা যায়।তামার জৈব ছত্রাকনাশক এ রোগের ছড়িয়ে পড়াকে ধীর গতির করে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। কপার হাইড্রোঅক্সাইড সংঘটিত উপাদানের বালাইনাশক ব্যবহার করুন। পাতা ভেজা অবস্থায় থাকলে ও তাপমাত্রা যদি ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় তাহলে ভালো ফলাফল দেখায়। গরমের দিনে শুকনো পাতায় বালাইনাশকের ব্যবহারের ফলে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ রোগ দমনে প্রতি সপ্তাহে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

সিউডোমোনাস সিরিনজি নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী, যা সব ধরনের কুমড়া জাতীয় ফলে আক্রমণ করে। এরা আক্রান্ত ফলের বীজ বা মাটিতে দুই বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। উচ্চ আর্দ্রতায় স্বল্প পরিমাণ পরিষ্কার সাদা জীবাণুর সংক্রমণে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এর জীবাণু জমিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা শ্রমিকদের হাত, পোকা, বৃষ্টির জল বা বাতাসের সাহায্যে এক চারা থেকে অন্য চারায় স্থানান্তরিত হয়। পাতার ছিদ্রের সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া গাছের ভিতরে প্রবেশ করে। যখন ফল আক্রান্ত হয় তখন ব্যাকটেরিয়া মাংসল অংশে প্রবেশ করে বীজের ক্ষতি করে। আশ্চর্যজনক হলো তামাকের নেক্রোসিস ভাইরাস দ্বারা পাতা আক্রান্ত হলে এ পাতায় দাগ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা দেখায়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • জীবাণু-মুক্ত প্রত্যয়িত বীজ/চারা ব্যবহার করুন।
  • যদি পাওয়া যায় তবে রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত চাষ করুন।ঝর্নার ন্যায় জলসেচের পরিবর্তে সারি করে জলসেচ দিন এবং অতিরিক্ত জলসেচ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • ভালো জল নিষ্কাশন সম্ভব এমন জমি নির্বাচন করুন।
  • বীজ বা ফল উভয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে এমন জমি নির্বাচন করুন যেখানে গত ২ বছরে কুমড়া জাতীয় ফসল চাষ করা হয়নি।
  • আক্রান্ত এলাকায় কমপক্ষে তিন বছর কুমড়া জাতীয় ফসল উৎপাদন থেকে বিরত থাকুন।
  • আক্রান্ত ফসল সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন।
  • রোগ সনাক্ত করতে নিয়মিত জমি তদারকি করুন।
  • জমিতে কাজ শেষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন