Xanthomonas campestris pv. campestris
ব্যাকটেরিয়া
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রীষ্মের শেষদিকে বাঁধাকপির পাতায় এ রোগ দেখা যায়। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো বাঁধাকপির পাতার কিনারায় হলুদ রঙের, শঙ্কু আকৃতির দাগ সৃষ্টি, যা ক্রমশ পাতার ভিতরের দিকে এবং কাণ্ডের নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফিউসারিয়াম ঘটিত কালো পচা রোগের সাথে এ রোগের লক্ষণজনিত পার্থক্য হলো ফিউসারিয়ামের ক্ষেত্রে কালো দাগ মাটি বরাবর থেকে শুরু করে কাণ্ডের উপরের দিকে ওঠে। যা'হোক রোগ বাড়তে থাকলে হলুদ রঙের দাগগুলো বড় হয়, এবং কোষকলা মরে বাদামী রং ধারণ করে। রোগের সর্বশেষ পর্যায়ে পাতার শিরা কালো বর্ণ ধারণ করে, যার কারণে রোগের নাম কালো পচা হয়েছে। একসময় সম্পূর্ণ পাতা মরে যায়। রোগের জীবাণু কাণ্ডে প্রবেশ করতে পারে এবং পরিবহন কলা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-পৃষ্ঠের নিকটবর্তী কাণ্ড কাটলে গোলাকার কালো দাগ দেখা যায়।
রোপণের পূর্বে বীজ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম জলে ৩০ মিনিট ধরে শোধন করুন। যদিও এটি শতভাগ রোগ দমন করতে পারে না তথাপি রোগের তীব্রতা কমায়। কিন্তু এর একটি সীমাবদ্ধতা হলো এ ব্যবস্থা নিলে বীজে অঙ্কুরোদগমের হার কমে যেতে পারে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। জমিতে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য গরম জলে বীজ শোধন করুন। রোগের বিস্তার হ্রাসের জন্য পাতায় ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর কপার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন। কিন্তু এ ব্যবস্থা নিলে বাঁধাকপির বাইরের দিকের পাতায় কালো দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
মৃত্তিকাবাহিত ব্যাকটেরিয়া জ্যানথোমোনাস ক্যামপেসট্রিস দ্বারা এ রোগ সংঘটিত হয়। এ জীবাণুটি শস্যের খড়কুটোয় অথবা বীজে ২ বছর অবধি বেঁচে থাকে এবং ব্রাসিকা গোত্রের আগাছায় দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে। বাঁধাকপি গোত্রের অনেকগুলো শস্যকে এ ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে যেমন ব্রোকলি, ফুলকপি, শালগম, মূলা, খোলরবি ইত্যাদি। সুস্থ উদ্ভিদে জলের ছিটার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় এবং বিভিন্ন পথে, ক্ষতের মাধ্যমে উদ্ভিদের কোষকলায় প্রবেশ করে। একটি উদ্ভিদ আক্রান্ত হলে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অন্যান্য উদ্ভিদগুলো আক্রান্ত হয়। যদি বীজ কিংবা মাটিতে জীবাণু থাকে তাহলে বীজতলাতেই রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হবে। অধিক আর্দ্রতা এবং ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রোগের প্রাদু্র্ভাবে সহায়তা করে। অধিক ঘনত্বে চারা লাগালে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার সহজতর হয়। এ ধরনের অবস্থায় ৭৫-৯০ শতাংশ পর্যন্ত ফলন হ্রাস হতে পারে।